দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : ইসলাম শান্তির ধর্ম। এবং মুসলমানগণ শান্তিকামী। ইসলাম সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাসী নয়; বরং শান্তিকামীতায় বিশ্বাসী। ইসলাম ও মুসলমানরা সর্বদা শান্তি চায়। তাছাড়া কারো অকল্যাণ কামনা ও অহিত চিন্তা ইসলাম কখনো অনুমোদন করে না; বরং ইসলামের নির্দেশ হলো- তুমি নিজের জন্য যা পছন্দ কর তা তোমার অপর ভাইয়ের ক্ষেত্রেও পছন্দ কর। এ প্রসঙ্গে হাদিসে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তোমাদের কোন ভাই যাতে করে অন্য মুসলিম ভাইকে ছোট না করে অর্থাৎ তার মান ও সম্মান ক্ষুণ না করে। কেননা প্রত্যেক মুসলিম এর প্রতি অন্য ভাই এর রক্ত, মাল ও সম্মানকে ক্ষুণ করা হারাম করা হয়েছে। (এখানে রক্ত দ্বারা উদ্দেশ্য হত্যা করা।” (সহিহ মুসলিম) অন্য এক হাদিসে হযরত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “কবিরা গোনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গোনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া এবং মিথ্যা কথা বলা।” (বুখারি ও মুসলিম)
কিন্তু সন্ত্রাসীরা সেটা চায় না। বরং তারা সর্বদা মানুষের অকল্যাণে নিহিত। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ফলে সমাজ জীবনের শান্তিশৃঙ্খলা, নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিনিষ্ট হয়ে যায়। যার প্রভাব ব্যক্তি জীবন থেকে নিয়ে রাষ্ট্রীয় জীবনেও এসে পড়ে। আর যারা এমন কর্মকান্ডের সাথে জড়িত। তাদেরকে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে আল্লাহ তা›য়ালা বলেন, “যারা পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায় তাদের জন্য রয়েছে লা›নত এবং মন্দ আবাস।গ্ধ (সূরা রা’দ : ২৫) অন্য আয়াতে আল্লাহ তা›য়ালা আরো বলেন, “দুনিয়ায় শান্তি স্থাপনের পর তাতে বিপর্যয় সৃষ্টি করো না।” (সূরা আরাফ : ৫৬)
তাই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। আর তা হতে হবে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে। যদি এমনটা করা যায় তাহলে সন্ত্রাস নির্মূল হবে। সন্ত্রাস প্রতিরোধে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গিতে আলোকপাত করা হলো- (১) নৈতিক শিক্ষা প্রদানঃ সন্ত্রাসের মূল কারণ হলো নৈতিক শিক্ষা না থাকা। আর নৈতিক শিক্ষা না থাকার ফলে সমাজ এখন সন্ত্রাসবাদে পরিণত হয়েছে। যদি জাগতিক শিক্ষার সাথে যদি ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হত তাহলে সন্ত্রাসের জন্ম হত না। কারণ শিক্ষার সাথে যখন ধর্মীয় অনুভ‚তি যুক্ত হবে তখন সে শিক্ষায় শিক্ষিত কোনো লোক বা জনগোষ্ঠী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জড়িত হবে না। (২) দু›টি ভয় অন্তরে জাগ্রত করাঃ প্রতিটি মানুষের অন্তরে যদি আল্লাহর ভয় আর আখেরাতের ভয় জাগ্রত করা যায় তাহলে কোনো লোক বা জনগোষ্ঠী সন্ত্রাসবাদে লিপ্ত হবে না। (৩) সর্বস্তরে ইনসাফ কায়েম বা প্রতিষ্ঠা করাঃ দলমত নির্বিশেষে প্রশাসনের সকল স্তরে এবং সমাজে ইনসাফ কায়েম করতে পারলে সন্ত্রাসবাদ অনেকটা কমে আসবে। শুধু তাই নয়, নিরপেক্ষভাবে সকল দলের সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে হবে। এভাবে ইনসাফ কায়েম করতে পারলে সন্ত্রাস চিরতরে নির্মূল হয়ে যাবে। (৪) রাষ্ট্রকে চার দফা মূলনীতি পালন করাঃ মহান আল্লাহ তা›য়ালা একজন রাষ্ট্রপ্রধানের চারটি কাজের কথা সূরায়ে হজ্জের ৪১ নং আয়াতে বলেছেন- সরকার কঠোরভাবে এ চারটি (১. নামাজ কায়েম, ২. যাকাত আদায়, ৩. সৎকাজে আদেশ, ৪. মন্দকাজে নিষেধ) দায়িত্ব পালন করলে সমাজ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল হবে। (৫) সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত শাস্তি কার্যকরণঃ ইসলামী শরিয়ত সন্ত্রাসের সমস্ত পথ বন্ধ করার পাশাপাশি সন্ত্রাসীদেরও শায়েস্তা করার বিধান নিশ্চিত করেছে। কারণ সন্ত্রাসীদের উপযুক্ত শাস্তি না দিলে সন্ত্রাসের মাত্রা দিন দিন বেড়েই চলবে। তাই স্থায়ী শাস্তি স্থাপনের জন্য ইসলাম চুরি, হত্যা, যেনা ইত্যাদি জঘন্য অপরাধের সুনির্দিষ্ট বিধান রেখেছে। যদি তা যথাযথ কার্যকর করা হয় তাহলে সমাজ থেকে সন্ত্রাসের উৎসগুলো মিটে যাবে। (৬) গণসচেতনতা তৈরিঃ সমাজ থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করতে হলে সমাজের সকল শ্রৈণির মানুষকে সচেতন হতে হবে। সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হতে হবে। কঠোরহস্তে অন্যায় কাজ প্রতিরোধ করতে পারলে সন্ত্রাস তিরোহিত হবে। কারণ সচেতন নাগরিকদের সুসংগঠিত শক্তি ও সামাজিক প্রতিরোধের সামনে সন্ত্রাসীদের পেশীশক্তির পরাজয় সুনিশ্চিত। (৭) শান্তিকামী রাষ্ট্রসমূহের ঐক্যবদ্ধ অবস্থানঃ শান্তিকামী রাষ্ট্রসমূহ শান্তি ও সমৃদ্ধির পক্ষে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে পারলে সাম্রাজ্যবাদী সন্ত্রাসীচক্র পৃথিবীর দেশে দেশে সন্ত্রাস সৃষ্টির সুযোগ পাবে না। তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল মুসলিম দেশসমূহ নিজেদের ঐক্য প্রয়াস এবং প্রতিরক্ষাব্যবস্থা জোরদার করার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসীচক্রের কবল থেকে নিরাপত্তা লাভ করতে পারবে।
সুতরাং, উপরোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি যদি আমরা মনযোগী হতে পারি এবং সেমতে সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশ পরিচালনা করতে পারি; তাহলে সমাজ, রাষ্ট্র ও দেশে কখনই সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি হবে না। তাই আমাদেরকে সচেতন হতে হবে। কেননা আপনি, আমি এবং আমরা জাগলেই---জাগবে বাংলাদেশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।