Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

রাজধানীতে জমজমাট সেহেরী

প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : নতুন ধারা যোগ হয়েছে রমজানের সেহেরীতে। জমে উঠছে রাতের বিশেষত পুরনো ঢাকার হোটেল-রেস্টুরেন্ট। দল বেঁধে সেহেরীতে শামিল হচ্ছেন নারীরাও। পুরনো ঢাকার রসনাব্যঞ্জক ঐতিহ্যবাহী খাবারে ঝোঁক বেশি। হোটেলের সামনে প্রাইভেট কারের ভিড়ে জ্যাম বেঁধে যায়।
বাংলাদেশে সেহেরী বাইরে খাওয়ার ও ঘুরে বেড়ানোর ধারা নতুন শুরু হলেও আশপাশের দেশগুলোর মুসলিম অধ্যুষিত শহর ও এলাকায় এই চল পুরনো। কলকাতা, দিল্লির চাঁদনি চক, লক্ষেèৗ, করাচি, লাহোর প্রভৃতি শহরে ইফতারের সময় থেকে সেহেরী পর্যন্ত উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। পরিবারের মানুষ যেমন দল বেঁধে সেহেরী খেতে হোটেলগুলোতে জমায়েত হন তেমনি হোটেল থেকে খাবার কিনে নিয়ে যাওয়ার চলও বেশ। এর সঙ্গে পাড়া-মহল্লায় আয়োজন করা হয় কাওয়ালি গানের আসর। জমজমাট হয়ে ওঠে সেসব দেশের মুসলিম বসতি এলাকাগুলো। সেই ধারাতেই এখন বাংলাদেশেও সেহেরীর সময় ধীরে ধীরে জমজমাট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। বাংলাদেশে হোটেলে সেহেরী খাওয়ার চল ছিল না বললেই চলে। গত কয়েক বছর ধরে রমজানে সেহেরীকে কেন্দ্র করে মুখরোচক খাবার বিক্রির ‘সংস্কৃতি’ সৃষ্টি হচ্ছে। সেহেরী পর্যন্ত খাবারের দোকানগুলোতে মানুষের যে ভিড় জমছে এটা বাংলাদেশের ‘সংস্কৃতি’তে নতুন মাত্রা যোগ করছে।
রাজধানীতেও ধীরে ধীরে উপমহাদেশের অন্যান্য শহরের আদলে সেহেরী রাত জমজমাট হয়ে উঠছে। দল বেঁধে সাহারী করা রমজানে রাজধানীর মানুষের জীবনে যোগ করেছে নতুন অনুষঙ্গ। আর সে কারণে রাত গভীর হলেও রাজধানীর অনেক হোটেলই থাকে সরগরম। ব্যস্ত জীবনে বাড়তি আনন্দ নিয়ে হাজির হয় সেহেরী উপলক্ষে হোটেলে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া। রাজধানীর অনেক রেস্টুরেন্টই খোলা থাকে। তবে সবার আগ্রহ থাকে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী খাবারের দিকে। পোলাও, কাচ্চি বিরিয়ানি, চিকেন বিরিয়ানি, খাসির লেগ রোস্ট এবং রেজালার গন্ধে মউ মউ করে ওঠে পুরান ঢাকার অলিগলি। এই মাঝরাতেও পুরান ঢাকার হোটেলগুলোর সামনে প্রাইভেট কারের আনাগোনায় জ্যাম বেঁধে যায়। রাত একটার পর থেকে হোটেলগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। হোটেলের ভিতরে মানুষের হাঁকডাক। ওয়েটারদের ব্যস্ত ছোটাছুটি, ঘুম ঘুম চোখে সেহেরী খাওয়া হোটেলগুলোতে ধর্মীয় পরিবেশে ভাব ফুটিয়ে তোলে।
দল বেঁধে বন্ধুরা মিলে সেহেরী করাতে কোনো বাধা নেই। বন্ধুরা মিলে সেহেরী করার সুযোগে যদি একসঙ্গে বসে আড্ডা মারার উপলক্ষ তৈরি হয় তাহলে তো সেই সুযোগটাকে কাজে লাগানোই যায়। সেই আড্ডার আকর্ষণে, আর মজার মজার খাবারের টানে সবাই এসে জড়ো হন রেস্টুরেন্টগুলোতে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সেহেরী করতে গিয়ে সেলফি পোস্ট করা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কারো ছবি দেখে অন্য বন্ধুরাও বের হচ্ছেন সাহারীতে। তুলছেন ছবি। সে ছবি ফেসবুক ওয়াল থেকে ওয়ালে ভেসে বেড়াচ্ছে।
তবে শুধু আনন্দ করবার জন্যই নয়, মানুষকে প্রয়োজনেও বাইরে সেহেরী করতে হয়, তাই নগর-শহর এলাকার অনেক হোটেলই খোলা থাকে রমজানের রাতে। এসব আনন্দ-উদযাপনের সময় যাতে ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য বজায় থাকে সেদিকে লক্ষ্য রেখে সেহেরী করার পরামর্শ দিয়েছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
হোটেলগুলোতে মসলাদার খাবারের প্রতি ঝোঁক বেশি। সাদা ভাতের সঙ্গে মুরগি মাসালা, ঝাল ফ্রাই, খাসির রোস্ট, বিভিন্ন ছোট-বড় মাছ থাকে। এ ছাড়া কাচ্চি, মোরগ পোলাও তো রয়েছেই। খাবারের পর থাকে মিষ্টি জাতীয় নানা খাবার। ফল, জুস, লাচ্ছি কিংবা শরবত জাতীয় পানীয়।
সেহেরীর সময় হলেই জমে ওঠে রাজধানীর হোটেল-রেস্টুরেন্ট। বনানী, গুলশান, উত্তরার অভিজাত এলাকার কিছু কিছু রেস্টুরেন্ট খোলা থাকে। তবে মানুষের প্রধান আকর্ষণ পুরনো ঢাকার ঐতিহ্যবাহী রেস্টুরেন্টগুলোর প্রতি। হোটেল আল-রাজ্জাক, ঠাটারি বাজার, ধানমন্ডির স্টার হোটেল, বঙ্গবাজারের সুপার স্টার, রাজধানী হোটেল সেহেরী ‘পার্টি’র জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এসব হোটেলেই মানুষের আনাগোনা বেশি। এ ছাড়াও নাজিমউদ্দিন রোড, নাজিরাবাজারেও রয়েছে ঐতিহ্যবাহী হোটেল। বেশকিছু কর্পোরেট হাউজ, মিডিয়া হাউজ সাহারী পার্টির আয়োজন করে সাড়া ফেলেছেন এ বছর।
বন্ধুদের সঙ্গে সাহারী করতে এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাহিদ। তিনি বললেন, এই গভীর রাতে ঢাকা শহরে আগে কখনোই বের হইনি। আমরা সেহেরী করার আগে প্রথমে পুরো ঢাকা শহর, ফ্লাইওভার ঘুরে এরপর এসেছি সেহেরী করতে। এটা আমার জন্য খুবই আনন্দের স্মৃতি হয়ে থাকবে। বনানী থেকে নওয়াবপুরের হোটেল আল-রাজ্জাকে সাহারী করতে এসেছিলেন ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল। জায়গা নেই, তাই বাইরে অপেক্ষা করছেন তারা। এই দলের একজন বললেন, হুট করেই চলে এসেছি আমরা, কোনো পূর্বপ্রস্তুতি ছিল না। ফোনে ফোনে যোগাযোগ। ভালোই লাগে এইভাবে বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দিতে আর সাহারী খেতে। শুধু বন্ধুরাই নয়, পরিবারের সদস্যদের নিয়েও চলে এসেছেন অনেকে দিনভর রোজা রাখার পর সুস্বাদু খাবারের খোঁজে। বারোটার পর থেকেই আনাগোনা বাড়তে থাকে হোটেলগুলোতে। তবে আসল চাপটা আসে রাত একটা থেকে আড়াইটার মধ্যে- বলছিলেন আল-রাজ্জাক হোটেলের ব্যবস্থাপক। তিনি বললেন, মূলত দশ রোজার পরে চাপ বাড়ে। চলে চাঁদ রাত পর্যন্ত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাজধানীতে জমজমাট সেহেরী
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ