পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙে টঙ্গীর তুরাগ তীরে তাবলীগ জামাত আয়োজিত ৫৫তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে গতকাল উপমহাদেশের সর্ববৃহৎ জুমার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। দেশের ৬৪ জেলা থেকে প্রথম পর্বে অংশগ্রহণকারী কয়েক লাখ মুসল্লি ছাড়াও ঢাকা ও আশপাশের জেলাসমূহ থেকে অতিরিক্ত আরো কয়েক লাখ মুসল্লি গতকাল এই জুমার জামাতে শরিক হয়েছেন। এছাড়া গতকাল জুমার নামাজে কয়েকশ’ বিদেশি মুসল্লি অংশ নিয়েছেন। জুমার জামাতে ইমামতি করেন রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মোহাম্মদ জুবায়ের। মুসল্লিদের জিকির-আজকার ও আমিন আমিন ধ্বনিতে মুখরিত টঙ্গীর তুরাগ তীর। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ইজতেমামুখী মুসল্লিদের ঢল অব্যাহত রয়েছে। এ ঢল অব্যাহত থাকবে আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত।
সমবেত লাখো ধর্মপ্রাণ মানুষের সমাবেশে বৃহস্পতিবার বাদ মাগরিব পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ভারতের মাওলানা আহম্মেদ ইব্রাহীম দেওলার আম বয়ানের মধ্য দিয়ে এবারের বিশ্ব ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। গতকাল বাদ ফজর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খুরশিদ আলম। এ সময় বাংলায় বয়ান অনুবাদ করেন বাংলাদেশের মাওলানা আব্দুল মতিন। মূল বয়ান উর্দূতে হলেও তাৎক্ষণিকভাবে বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করা হয়। বাদ জুমা সউদী আরবের মাওলানা ইউনুস শেখ, বাদ আসর পাকিস্তানের মাওলানা ইহসান ও বাদ মাগরিব ভারতের মাওলানা আহম্মেদ দেওলা বয়ান করেন।
ইজতেমা আয়োজক কমিটির অন্যতম মুরুব্বি ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মেজবাহ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, চন্দ্র মাসের হিসেবে বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পরই শুক্রবার দিন শুরু হয়ে যায়। সে হিসাবে ৯ জানুয়ারি বাদ মাগরিব আম বয়ানের মাধ্যমেই ইজতেমার মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। আগামীকাল দুপুরের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের ইজতেমা শেষ হবে।
গতকাল সকাল থেকে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। ওয়াসার দুইটি পাম্প বিকল হয়ে পড়ায় এই সঙ্কট দেখা দেয় বলে জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন মোল্লা। সকাল থেকে পানি সঙ্কটে সারাদিন মুসল্লিরা অজু গোসলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন। গতকাল সন্ধ্যায় এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত বিকল হওয়া পানির পাম্পগুলো সচল করা সম্ভব হয়নি।
দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লির এই বৃহত্তম জুমার জামাতে অংশ নিতে গতকাল ভোর থেকে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার মুসল্লিদের ঢল নামে ইজতেমা অভিমুখে। বিশ্ব ইজতেমা ও জুমার নামাজে অংশ নিতে অনেক মুসল্লি টঙ্গী ও আশপাশের এলাকার মসজিদ ও আত্মীয় স্বজনের বাসায় আগে থেকেই অবস্থান নেন। বেলা ১২টার আগেই ইজতেমা ময়দান কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের সড়ক ও খালি জায়গায় বিছানা পেতে মুসল্লিরা জুমার নামাজ আদায় করেন। এ সময় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া অনেকেই বাড়ির ছাদ, নৌকা, গাড়ির ছাদে জুমার নামাজ আদায় করেছেন। সংক্ষিপ্ত বয়ান ও খুৎবা শেষে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে জুমার নামাজ শুরু হয়। গতকাল ইজতেমা ময়দানে জুমার নামাজে শরিক হন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আব্দুল্লাহ, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এসএম তরিকুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান প্রমুখ।
গাজীপুর মেট্রোপুলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন জানান, জুমার নামাজ আদায় করতে আশপাশের জেলার অনেক মুসল্লি এখানে আসেন। জুমার নামাজ উপলক্ষে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। যানজটমুক্ত যাতায়াতের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। দ্বিতীয় পর্বে আগত লাখো লাখো মুসল্লির সুবিধার জন্য সব রকম ব্যবস্থা থাকবে। রাস্তায় যে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে তাদের সহযোগিতা করবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ।
এবারের বিশ্ব ইজতেমায় এ পর্যন্ত ৪ মুুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (সিটিএসবি) মো. মাকসুদুর রহমান জানান, গতকাল সকালে নওগাঁ জেলার আত্রাই থানার পাইকার গ্রামের সোলায়মানের ছেলে শহিদুল ইসলাম (৫৫) বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান। এছাড়া সিরাজগঞ্জের কাজিপুর থানার পাটগ্রাম এলাকার আমির হোসেনের ছেলে খোকা মিয়া (৬০) বৃহস্পতিবার রাত ৯টার দিকে হৃদরোগে এবং মধ্যরাতে চট্টগ্রামের পটিয়া থানার খৈগ্রাম এলাকার শুরা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ আলী (৭০) বার্ধক্যজনিত রোগে মারা যান। গতকাল বাদ ফজর ইজতেমা ময়দানে তাদের জানাজা সম্পন্ন হয়।
রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব। এরপর চার দিন বিরতি দিয়ে ১৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ১৯ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।