Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বিপর্যয় ঠেকাতে ট্রেনের নতুন সময়সূচি

২০১৮ এর চেয়ে ২০১৯ এ সিডিউলে অবনতি

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০১ এএম

বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনের সময়সূচিতে পরিবর্তন এনেছে। তারই অংশ হিসেবে এখন থেকে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করবে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের ৬৭টি ট্রেন। গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন চলাচল করছে। এদিকে, ট্রেনের সিডিউল রক্ষায় গত কয়েক বছরে ভালোই উন্নতি করেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০১৩-১৪ সালেও ট্রেনের গড় সময়ানুবর্তিতার হার ছিল ৬৪ শতাংশের বেশি। সেখান থেকে প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে ২০১৮ সালে সময়ানুবর্তিতার হার দাঁড়ায় প্রায় ৮৪ শতাংশে। কিন্তু গেল বছর রেলওয়ের সময়সূচিতে দেখা দিয়েছিল উল্টোরথে চলার লক্ষণ। সময়ানুবর্তিতার দিক থেকে ২০১৮ সালের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছিল রেলওয়ে। ২০১৯ সালে ট্রেনের সময়সূচি মেনে চলার হার নেমে এসেছিল প্রায় ৮২ শতাংশে। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করে বলেছেন, নতুন সময়সূচীতে ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখা সম্ভব হবে। যদিও নতুন সময়সূচীতে বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি ট্রেনের রানিং টাইম। এতে করে কমে যাবে ট্রেনের গতিবেগ। ভুক্তভোগিরা ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের জন্য বরাবরই রেলের অব্যবস্থাপনাই দায়ী করেছেন।

কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার আমিনুল হক জানান, ঢাকা থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচল করা প্রায় সব আন্তঃনগর, মেইল ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করা হয়েছে। তিনি বলেন, নতুন সময়সূচি অনুযায়ী ট্রেন চালানোর সব নির্দেশনা আগেই আমাদের কাছে এসেছে। নির্দেশনা অনুযায়ী শুক্রবার সকাল থেকে নতুন সময়সূচি অনুযায়ী কমলাপুর স্টেশন থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ট্রেন ছেড়ে গেছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়া জাহান জানান, ট্রেনের সময়সূচি পরিবর্তন করা একটি নিয়মিত কাজ। প্রতিদিনের সব ট্রেন সকাল থেকে রাত ১২টার মধ্যেই যেন ট্রেন কমলাপুর স্টেশন থেকে ছেড়ে যেতে পারে সেজন্য নতুন সময়সূচি করা হয়েছে। তাছাড়া ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখতে এবং ট্রেনের সেবার মান বাড়াতে নতুন এই সময়সূচি করা হয়েছে। এখন থেকে পশ্চিমাঞ্চলের নয়টি আন্তঃনগর ট্রেন নতুন করে ১৫টি স্টেশনে যাত্রাবিরতি করবে।

রেলওয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় সব আন্তনগর, মেইল ও কমিউটার ট্রেনের সময়সূচিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ডজনখানেক ট্রেনের সময় ৩০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা পর্যন্ত পরিবর্তন করা হয়েছে।

পশ্চিম রেলের ২৮টি আন্তঃনগর ট্রেনের সময়সূচি ও ১৬টি ট্রেনের বন্ধের দিনও পরিবর্তন করা হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের ডেপুটি চিফ সুপারিনটেন্ডেন্ট ফুয়াদ হোসেন আনন্দ জানান, নতুন সময়সূচি অনুযায়ী ১০ জানুয়ারি থেকে ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে চলাচলকারী একতা এক্সপ্রেস ও দ্রæতযান এক্সপ্রেস বন্ধের দিন প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখন থেকে সপ্তাহের প্রতিদিনই এ দুটি ট্রেন ঢাকা-পঞ্চগড় যাতায়াত করবে।

চিলাহাটি থেকে খুলনা রুটে চলাচলরত সীমান্ত এক্সপ্রেস ও সান্তাহার থেকে দিনাজপুর রুটে চলাচলরত দোলনচাঁপা এক্সপ্রেসের নতুন বন্ধের দিন ঠিক করা হয়েছে। সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি সোমবার ও দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস রোববার বন্ধ থাকবে। রাজশাহী-খুলনা রুটের কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস শনিবারের পরিবর্তে মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে। রাজশাহী থেকে ঢাকা রুটে চলাচলরত ধূমকেতু এক্সপ্রেস শুক্রবারের পরিবর্তে বুধবার এবং ঢাকা থেকে রাজশাহী রুটে শনিবারের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার বন্ধ থাকবে।

জানা গেছে, নতুন সূচি অনুযায়ী পাবনা এক্সপ্রেস (রাজশাহী-পাবনা) সোমবার, বনলতা এক্সপ্রেস (রাজশাহী-ঢাকা) শুক্রবার, বেনাপোল এক্সপ্রেস (ঢাকা-বেনাপোল) বুধবার, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস (ঢাকা-কুড়িগ্রাম) বুধবার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শাটল ট্রেন (রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ) বুধবার, ঢালারচল শাটল ট্রেন (ঈশ্বরদী-ঢালারচর) সোমবার এবং টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেন (ঢাকা-টাঙ্গাইল) শুক্রবার বন্ধ থাকবে। এছাড়া রাজশাহী থেকে গোবরা রুটে চলাচলরত টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস সোমবার বন্ধ থাকবে। অন্যদিকে গোবরা থেকে রাজশাহী রুটের ট্রেন মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে।

এদিকে, কয়েক বছর ধারাবাহিক উন্নতির পর গেল বছরে ট্রেনের সিডিউল (সময়ানুবর্তিতা) ভেঙ্গে পড়ার হিসেবে রেলপথের গতি সক্ষমতা কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। এ অবস্থায় রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য দুই জোনে (পূর্ব ও পশ্চিম) পৃথক দুটি প্রকল্প নিতে চাইছে রেলওয়ে। প্রকল্প দুটির জন্য পৃথক দুটি ডিপিপিও প্রস্তুত করে রেখেছে সংস্থাটি।

সময়ানুবর্তিতায় পিছিয়ে পড়ার কারণ হিসেবে রেলপথের গতি সক্ষমতা কমে যাওয়ার পাশাপাশি মাস্টারের অভাবে অনেক স্টেশন বন্ধ হয়ে পড়া ও রেল ক্রসিংয়ের পরিমাণ বৃদ্ধিকেও দায়ী করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেন চলাচলে ২০১৯ ও ২০১৮ সালের (ফেব্রæয়ারি-অক্টোবর) সময়ানুবর্তিতা সংক্রান্ত তথ্য বলছে, ২০১৮ সালের ফেব্রæয়ারিতে সময়সূচি মেনে ট্রেন চলাচলের হার ছিল ৮৬ শতাংশ। গেল বছরের ফেব্রæয়ারিতে তা নেমে আসে ৮৩ শতাংশে। এরপর এপ্রিলে গিয়ে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়। ২০১৮ সালের এপ্রিলের তুলনায় ৩ শতাংশ বেড়ে ২০১৯ সালের একই মাসে ট্রেনের সময়সূচি মেনে চলার হার দাঁড়ায় ৮৫ শতাংশে। মে থেকে ফের ছন্দপতন ঘটে সময়সূচিতে, যেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি রেলওয়ে।

২০১৮ সালের মে মাসে রেলওয়ের সময়ানুবর্তিতার হার ছিল ৮৫ শতাংশ। গেল বছরের মে মাসে তা ৮৪ শতাংশে নেমে আসে। ২০১৮ সালের জুনে ৮১ দশমিক ৫ থেকে কমে গেল বছর নেমে আসে ৮১ শতাংশে। একই বছরে ট্রেনের সময়ানুবর্তিতার হার জুলাইয়ে ৮৩ থেকে কমে ৮২ শতাংশ, আগস্টে ৭৯ দশমিক ৫ থেকে কমে ৭৮, সেপ্টেম্বরে ৮৫ থেকে কমে ৮২ ও অক্টোবরে ৮৭ থেকে কমে ৮২ শতাংশে নেমে আসে।

গেল বছরজুড়ে ট্রেনের সময়সূচিতে এ ছন্দপতনের জন্য রেলট্র্যাকের গতি কমে যাওয়াকে দায়ী করছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। এজন্য দুই জোনে পৃথকভাবে রেলপথ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পৃথক দুটি ডিপিপি প্রস্তুত করেছে রেলওয়ে।

ট্রেন চলাচলের সময়ানুবর্তিতায় ছন্দপতন প্রসঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, গেল বছর দুই ঈদে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপে ট্রেনের শিডিউলে বেশ চাপ পড়েছিল, যা সারা বছরই ট্রেনের সময়সূচি মেনে চলার ক্ষেত্রে কিছুটা বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। সা¤প্রতিক সময়ে কুয়াশা একটা বড় ফ্যাক্টর হয়ে দেখা দিয়েছে। কোনো কোনো ট্রেন ৭ ঘণ্টা পর্যন্ত দেরিতে চলেছে। রেলওয়ের ট্র্যাক অনেক পুরনো। এ কারণে বেশি গতিতে ট্রেন চালানো সম্ভব হয় না। এক্ষেত্রে সময়সূচি পরিবর্তন ভালো বিকল্প হতে পারে। গতকাল থেকে নতুন সময়সূচি কার্যকরের কথা উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা বলেন, নতুন সময়সূচিতে শিডিউল অনেকটাই ঠিক হয়ে আসবে।

সারা দেশে রেলপথ আছে ২ হাজার ৯৫৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১ হাজার ১৩৫ কিলোমিটার রেলপথ গত ১০ বছরে পুনর্বাসন বা পুনর্নির্মাণ করেছে রেলওয়ে। মিটার গেজ থেকে ডুয়াল গেজে রূপান্তর করা হয়েছে আরো ২৪৮ কিলোমিটার রেলপথ। নতুন রেললাইন নির্মিত হয়েছে ৩৩০ কিলোমিটার। অর্থাৎ নেটওয়ার্কভুক্ত অর্ধেকের বেশি রেলপথ নির্মাণ, পুনর্বাসন ও পুনর্নির্মাণের কাজ হয়েছে গত ১০ বছরে। প্রতি বছর রেলওয়ের যা ব্যয় হয়, তার ৬০ শতাংশের বেশিই চলে যায় মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে। এত ব্যয়ের পরও রেল ট্র্যাকের কারণে গতি কমে যাওয়ার বিষয়টিকে অস্বাভাবিক হিসেবে দেখছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ