Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কালীগঞ্জে মাদরাসা ছাত্র হত্যাকারীর স্বজনদের হামলায় ৫ পিবিআই সদস্য আহত

১৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা, আটক ৫

কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৯ জানুয়ারি, ২০২০, ৫:০৬ পিএম

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে চাঞ্চল্যকর মাদরাসা ছাত্র আলামিন হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও আলামত উদ্ধারে গিয়ে আসামিদের স্বজনদের হামলায় আহত হয়েছে ঝিনাইদহ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এর পাঁচ কর্মকর্তা। আহতরা হলো এসআই সোহেল হোসেন, এসআই হুমায়ন, এএসআই হাফিজুর রহমান, এএসআই মোঃ জাফর ও এএসআই আব্দুল খালেক। আহতদের রাতেই কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়। বুধবার দিবাগত রাত ১০ দিকে কালীগঞ্জ পৌর শহরের আড়পাড়ায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। হামলার ঘটনায় জড়িত হত্যাকান্ডে জড়িত রিমান্ডের আসামি তারিক হাসান সাব্বিরের বাবা মুশফিকুর রহমান ডাবলু, চাচা মোস্তাক আহম্মেদ লাভলু, নাসিরুল ইসলাম ও লাল্টু সহ পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। আটককৃতরা সাবেক পৌর মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর ভাই ও শ্যালক।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকাল ৫ টায় ঝিনাইদহ পিবিআই’র ইনসপেক্টর সোহেল হোসেন বাদি হয়ে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে কালীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় পুলিশের কাজে বাধাদান ও আসামি ও মামলার ডকেট ছিনতাইয়ের অভিযোগ আনা হয়েছে।

আহত পুলিশ কর্মকর্তাদের দাবি, তাদের ব্যপক মারধর করা হয়েছে। কিন্তু আসামি পক্ষের স্বজনদের দাবি ভিন্ন। তারা বলছে, ছুরি ও আলামত উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়ে অন্য একটি ছুরি ধরিয়ে জোর করে ছবি তোলার চেষ্টা করে পুলিশ। এতে আমরা বাধা দিয়েছিলাম মাত্র।

এর আগে মাদরাসা ছাত্র আল-আমিন হত্যার সাথে জড়িত আটক তারিক হাসান সাব্বির ও ইয়াছিন আরাফাত হৃদয় নামে দু’জনকে দুই দিনের রিমান্ডে নেয় পিবিআই। তাদের স্বীকারোক্তি মোতাবেক বুধবার সকালে ওই এলাকার একটি পুকুরে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরি ও অন্য আলামত উদ্ধারে যায় পিবিআই’র একটি দল। ডুবুরিরা দিনভর চেষ্টার পর ছুরি না পেয়ে বিকালে ফায়ার সার্ভিসের সহযোগীতায় পুকুরের পানি নিষ্কাষনের কাজ শুরু করে। রাত ১০টার দিকে পুকুর থেকে হত্যাকাজে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ। আটক আসামিদের নিয়ে ছুরিসহ ছবি তোলার সময় পিবিআই সদস্যদের উপর দুই দফায় হামলা করে বেধড়ক মারপিট করে আসামি পক্ষের স্বজনরা। মারধর করার পর পিবিআই’র একজন সদস্যকে আটকে রাখে। অন্য সদস্যরা আটক আসামিদের নিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে কালীগঞ্জ পুলিশ সেখানে পৌছে আহত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এছাড়া সেখান থেকে হত্যা মামলার আসামি সাব্বিরের বাবা মুশফিকুর রহমান ডাবলু ও তার চাচা মোস্তাক আহম্মেদ লাভলু সহ পাঁচজনকে আটক করে পুলিশ।

ঝিনাইদহ পিবিআই এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম.কে.এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, আল-আমিন হত্যায় জড়িত দু’জন আটকের পর তারা চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রদান করে। তাদের দেয়া তথ্য মোতাবেক পিবিআই’র একটি দল বুধবার সকাল থেকে আসামীদের দেখিয়ে দেয়া ওই গ্রামের রবিউল ইসলাম ঠান্ডু মিয়ার পুকুরের পানির মধ্যে ছুরি উদ্ধারের কাজ শুরু করে। হত্যাকান্ডে ছয়জন অংশ নেয় বলেও পুলিশ হেফাজতে থাকা আসামিরা জানিয়েছে। এদিন রাত ১০ টার দিকে ছুরি উদ্ধার হলে সাব্বিরকে ওই ছুরি দিয়ে স্বীকারোক্তি নেওয়ার সময় আসামির স্বজনরা কয়েক দফায় পুলিশের উপর হামলা করে বেধড়ক মারপিট করে জখম করে।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাঃ মাহফুজুর রহমান মিয়া মামলা দায়ের বিষয়টি উল্লেখ করে জানান, আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবরুদ্ধ পিবিআই সদস্যদের উদ্ধার করে নিয়ে আসি। তাদের বেশ মারধর করা হয়েছে। আহতদের কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

প্রসঙ্গত, গেল বছরের ৩০ নভেম্বর রাতে বাড়ির পাশে ওয়াজ শুনতে যাওয়ার পর আল আমিন নিখোঁজ হয়। নিখোঁজের চারদিন পর ওই এলাকায় নির্মাণাধীন একটি চারতলা ভবনের পেছন থেকে তার জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আল-আমিন আড়পাড়ার আব্দুর রাজ্জাক নামে এক ব্যবসায়ীর ছেলে। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান আল-আমিন শহরের সাওতুল হেরা হাফেজিয়া মাদরাসার ছাত্র ছিল। লাশ উদ্ধারের পর হত্যাকান্ডে জড়িত সন্দেহে দুইজনকে আটক করে পুলিশ। আটক তারিক হাসান সাব্বির সাবেক মেয়র মোস্তাফিজুর রহমান বিজুর ভাই মুশফিকুর রহমান ডাবলুর ছেলে এবং ইয়াছিন আরাফাত হৃদয় একই এলাকার আব্দুস সামাদ ওরফে মিল্টনের ছেলে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মামলা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ