পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্ব তাবলীগ জামাত আয়োজিত বিশ্ব ইজতেমা কাল শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। আজ বাদ আছর থেকেই সমবেত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে প্রথম পর্বের মূল আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। আগামী রোববার জোহরের নামাজের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রথম পর্বের বিশ্ব ইজতেমা। মাঝে ৪ দিন বিরতি দিয়ে দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি শুক্রবার থেকে। ১৯ জানুয়ারি রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে দ্বিতীয় পর্বের সমাপ্তির ঘটবে ২০২০ সালের বিশ্ব ইজতেমা। মুসল্লিদের চাপ কমাতে ২০১১ সাল থেকে দুই পর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।
দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ দেশ বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ তাবলীগ অনুসারী মুসল্লিরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ইজতেমার মুসল্লিদের নিরাপত্তায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। জিম্মাদারদের উদ্দেশ্যে বয়ান শুরু : টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশ্ব ইজতেমা সন্নিকটে। ঈমানি চেতনা জাগ্রত করার মানসেই দেশ ও দেশের বাইরে থেকে এ ময়দানে সমবেত হয় মুমিন মুসলমান। গতকাল বাদ ফজর শুরু হয়েছে জেলা জিম্মাদারদের উদ্দেশে বয়ান। আগামীকাল প্রথম পর্বে আলমি সাথীরা বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণ করবে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দানে বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিরা আসতে শুরু করেছে। গতকালই প্রায় সব জেলার জিম্মাদাররা টঙ্গীর ময়দানে এসে উপস্থিত হয়েছেন। গতকাল বাদ ফজর জেলার জিম্মাদারদের ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে দিক-নির্দেশনামূলক আলোচনা করা হচ্ছে।
এদিকে মুসল্লিদের অবস্থানের জন্য মাঠ প্রায় প্রস্তুত। দেশব্যাপী আলেম-ওলামাদের ব্যাপক সমাগমে এবারের ইজতেমায় অনেক মুসল্লির সমাগম হওয়ার কথা চিন্তা করে ইজতেমার ময়দানে ২৪টি খিত্তা বাড়ানো হয়েছে বলে ইনকিলাবকে জানিয়েছেন বিশ্ব ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুুসলিম। তিনি জানান, বিশ্ব ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন বেড়ি বাঁধের পশ্চিম পার্শ্বে, বাটা কোম্পানির মাঠে এবং হুন্ডা ভবনের খালি অংশও ইজতেমার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘœ ও নিরাপদ করতে তুরাগ নদীর উপরে সেনাবাহিনী ৭টি ভাসমান ব্রিজ নির্মাণ করেছে। ইজতেমা ময়দানে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৮ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
ইজতেমায় মুসল্লিরা যেভাবে খিত্তাওয়ারী অবস্থান নেবেন: ইজতেমার প্রথম পর্বে দেশের ৬৪ জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করবেন। প্রথম পর্বে মুসল্লিরা খিত্তাওয়ারীভাবে অবস্থান নেবেন- ১নং খিত্তায় গাজীপুর, ২নং খিত্তায় টঙ্গী-১, ৩নং খিত্তায় টঙ্গী-২, ৪নং খিত্তায় টঙ্গী-৩, ৫নং খিত্তায় মিরপুর-১, ৬নং খিত্তায় মিরপুর-২, ৭নং খিত্তায় সাভার-১, ৮নং খিত্তায় সাভার-২, ৯নং খিত্তায় মোহাম্মদপুর, ১০নং খিত্তায় কাকরাইল-৩, ১১নং খিত্তায় কেরানীগঞ্জ-১, ১২নং খিত্তায় কেরানীগঞ্জ-২, ১৩নং খিত্তায় কাকরাইল-১, ১৪নং খিত্তায় কাকরাইল-২, ১৫ (ক) খিত্তায় ডেমরা, ১৫ (খ) নং খিত্তা (সংরক্ষিত খিত্তা), ১৬নং খিত্তায় কাকরাইল-৪, ১৭নং খিত্তায় কাকরাইল-৫, ১৮নং খিত্তায় কাকরাইল-৬, ১৯নং খিত্তায় কাকরাইল-৭, ২০নং খিত্তায় রাজশাহী, ২১নং খিত্তায় নওগাঁ, ২২নং খিত্তায় নাটোর, ২৩নং খিত্তায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ২৪নং খিত্তায় যাত্রাবাড়ী-২, ২৫নং খিত্তায় যাত্রাবাড়ী-১, ২৬নং খিত্তায় সিরাজগঞ্জ, ২৭নং খিত্তায় দোহার, ২৮নং খিত্তায় নবাবগঞ্জ, ২৯নং খিত্তায় মানিকগঞ্জ, ৩০নং খিত্তায় টাঙ্গাইল, ৩১নং খিত্তায় নড়াইল, ৩২নং খিত্তায় ধামরাই, ৩৩নং খিত্তায় রংপুর, ৩৪নং খিত্তায় নীলফামারী, ৩৫নং খিত্তায় কুড়িগ্রাম, ৩৬নং খিত্তায় লালমনিরহাট, ৩৭নং খিত্তায় গাইবান্ধা, ৩৮নং খিত্তায় মুন্সীগঞ্জ, ৩৯নং খিত্তায় মাগুরা, ৪০নং খিত্তায় ঝিনাইদহ, ৪১নং খিত্তায় বগুড়া, ৪২নং খিত্তায় নারায়ণগঞ্জ, ৪৩নং খিত্তায় ফরিদপুর, ৪৪নং খিত্তায় যশোর, ৪৫নং খিত্তায় সাতক্ষীরা, ৪৬নং খিত্তায় বাগেরহাট, ৪৭নং খিত্তায় নরসিংদী, ৪৮নং খিত্তায় ভোলা, ৪৯নং খিত্তায় জামালপুর, ৫০নং খিত্তায় ময়মনসিংহ-১, ৫১নং খিত্তায় ময়মনসিংহ-২, ৫২নং খিত্তায় মেহেরপুর, ৫৩নং খিত্তায় চুয়াডাঙ্গা, ৫৪নং খিত্তায় নেত্রকোনা, ৫৫নং খিত্তায় কিশোরগঞ্জ, ৫৬নং খিত্তায় গোপালগঞ্জ, ৫৭নং খিত্তায় বরিশাল, ৫৮নং খিত্তায় রাজবাড়ি, ৫৯নং খিত্তায় শেরপুর, ৬০নং খিত্তায় শরীয়তপুর, ৬১নং খিত্তায় মাদারীপুর, ৬২নং খিত্তায় সিলেট, ৬৩নং খিত্তায় কক্সবাজার, ৬৪নং খিত্তায় রাঙ্গামাটি, ৬৫নং খিত্তায় খাগরাছড়ি, ৬৬নং খিত্তায় বান্দরবান, ৬৭নং খিত্তায় ফেনী, ৬৮নং খিত্তায় নোয়াখালী, ৬৯নং খিত্তায় ল²ীপুর, ৭০নং খিত্তায় চাঁদপুর, ৭১নং খিত্তায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ৭২নং খিত্তায় খুলনা, ৭৩নং খিত্তায় পটুয়াখালী, ৭৪নং খিত্তায় বরগুনা, ৭৫নং খিত্তায় চট্টগ্রাম, ৭৬নং খিত্তায় কুমিল্লা, ৭৭নং খিত্তায় পিরোজপুর, ৭৮নং খিত্তায় ঝালকাঠি, ৭৯নং খিত্তায় সুনামগঞ্জ, ৮০নং খিত্তায় হবিগঞ্জ, ৮১নং খিত্তায় মৌলভীবাজার, ৮২নং খিত্তায় পাবনা, ৮৩নং খিত্তায় ঠাকুরগাঁও, ৮৪নং খিত্তায় পঞ্চগড়, ৮৫নং খিত্তায় দিনাজপুর, ৮৬নং খিত্তায় জয়পুরহাট এবং ৮৭নং খিত্তায় কুষ্টিয়া। ৮৮নং থেকে ৯২নং খিত্তা সংরক্ষিত থাকবে।
সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে, তাদের ব্যবস্থাপনায় আটটি কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া গুরুত্বপ‚র্ণ মোড়ে ১৫টি তোরণ নির্মাণ করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে ১৪টি এবং র্যাবের পক্ষ থেকে ১০টি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া মাঠে বিøচিং পাউডার ও মশক নিধনের পর্যাপ্ত ওষুধ ছিটানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। এছাড়া ৭৫০টি বৈদ্যুতিক বাতি স্থাপন ও ধুলাবালি যাতে না ওঠে সে জন্য পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ২০ লাখ মুসল্লির সমাগমকে সামনে রেখে প্রতিদিন সাড়ে তিন কোটি গ্যালন পানির ব্যবস্থা থাকছে। বাড়তি টয়লেট নির্মাণ ও পাকা টয়লেটগুলো ব্যবহার উপযোগী করা হয়েছে। প্রতি বছরের মতো এবারও পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনে মুসল্লিদের কোনো সমস্যা হবে না।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আনোয়ার হোসেন জানান, লাখ লাখ মুসল্লির নিরাপত্তায় এখানে পাঁচ স্তরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে। সিসিটিভি, আর্চওয়ে, মেটাল ডিটেক্টর থাকছে পুরো ময়দানজুড়ে। খিত্তায় খিত্তায় নিরাপত্তা চাদরে ঢেকে ফেলা হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় এবার ইজতেমায় সাড়ে আট হাজার পুলিশ সদস্য কাজ করবে।
ইজতেমা ময়দানের শীর্ষ মুরুব্বি ও শূরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মেজবাহ উদ্দিন জানান, ময়দানের প্রস্তুতি কাজ শেষ হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।