পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জনশক্তি রফতানির সর্বোচ্চ দেশ সউদী আরবে প্রবাসী কর্মীদের আকামা ফি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেকেই অবৈধ হয়ে যাচ্ছে। কোম্পানীর আকামা নবায়ন করা সম্ভব না হওয়ায় অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশটিতে বিপুল সংখ্যক অবৈধ প্রবাসী কর্মী পালিয়ে পালিয়ে কাজ করছে। অনেকেই পুলিশে ধরা পড়ে খালি হাতে দেশে ফিরছে। আকামা বিহীন অবৈধ কর্মীদের বিশেষ প্রত্যাবাসন কর্মসূচির মাধ্যমে দেশে ফিরতে রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটিতে বর্তমানে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি নারী-পুরুষ কঠোর পরিশ্রম করে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে।
নতুন বছরের চার দিনে সউদী থেকে খালি হাতে দেশে ফিরেছে ৩১৭জন প্রবাসী কর্মী। বি-বাড়িয়ার সেলিনা আক্তার ও শামিমা বেগম গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সউদী আরব গিয়ে নিয়োগকর্তা হাতে নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরেছেন। তারা প্রথমে নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেয় জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সেইফ হোমে। একইভাবে নারায়নগঞ্জের সোনিয়া আক্তার ও খাদিজা, সিরাজগঞ্জের রাশেদাসহ ১৫ জন নারী ফিরেছেন।
বিএমইটির সূত্র জানায়, ২০১৭ সনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১০ লাখ ৮ হাজার ৫২৫ জন কর্মী চাকুরি লাভ করে। এর মধ্যে শুধু সউদী আরবেই গেছে ৫ লাখ ৫১ হাজার ৩০৮ জন। ২০১৮ সনে বিভিন্ন দেশে গেছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন। এর মধ্যে শুধু সউদীতেই যায় ২ লাখ ৫৭ হাজার ৩১৭ জন। ২০১৯ সনে বিভিন্ন দেশে চাকুরি লাভ করেছে ৭ লাখ ১৫৯ জন। এর মধ্যে সউদী আরবেই গেছে ৩ লাখ ৬০ হাজার২৪ জন নারী পুরুষ কর্মী গেছে। গত ১ ও ২ জানুয়ারি বিভিন্ন দেশে ৫ হাজার ২৪৭ জন বিদেশে গেছে। এর মধ্যে শুধু সউদীতেই গেছে ৩ হাজার ৯৩৪ জন।
সউদী আরবে পুরুষ কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযানও অব্যাহত আছে। সউদী ফেরত শহিদ মিয়া (৪০) জানান, আড়াই বছর আগে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা খরচ করে টাইলস ফিটিংয়ের কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন সউদী আরবে। কর্মস্থল থেকে রুমে ফেরার সময় পথ থেকে ধরে কাজের পোষাকেই তাকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার হানিফ গিয়েছিলেন সউদী আরবে। সেখানে যাবার পর পাসপোর্টে তিন মাসের এন্ট্রি ভিসার মেয়াদ শেষ হলে মালিক আর আকামা তৈরি করেনি। কর্মস্থল থেকে রুমে ফেরার পথে পুলিশ ধরলে মালিক আর হানিফের দায়িত্ব না নিলে দেশে পাঠানো হয়েছে হানিফকে। দেশে ফেরা অনেক কর্মীদের অভিযোগ করেন আকামা তৈরীর জন্য কফিল (নিয়োগকর্তা)কে টাকা প্রদান করলেও কফিল আকামা তৈরি করে দেয়নি। পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর কফিলের সাথে যোগাযোগ করলেও গ্রেফতারকৃত কর্মীর দায় দায়িত নিচ্ছেনা বরং কফিল প্রশাসনকে বলেন ভিসা বাতিল করে দেশে পাঠিয়ে দিতে।
জানা গেছে, ২০১৯ সালে সউদী আরব থেকে ২৪ হাজার ২৮১ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর নতুন বছরের শুরুর চার দিনে ফিরলেন ৩১৭ জন। তারা সবাই ভবিষ্যত নিয়ে এখন দুশ্চিন্তায়। এইভাবে ব্যর্থ হয়ে যারা ফিরছেন তাদের পুর্নবাসনে সরকারকে কার্যকরী উদ্যোগ নেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বায়রার ইসির অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ আলী। বায়রা নেতা বলেন, সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সউদীতে প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশি নারী পুরুষ কাজ করছে। দেশটি থেকে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স দেশে আসছে। অথচ রিয়াদ ও জেদ্দায় মাত্র দু’টি লেবার উইং রয়েছে। তা’জনবলের অভাবে সউদীর লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীরা কনস্যুলেট সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দূতাবাসের চরম ব্যর্থতায় প্রবাসী কর্মীদের স্বার্থ রক্ষা হচ্ছে না। সউদীতে অবৈধ প্রবাসী কর্মীদের বৈধতা লাভের সুযোগ সৃষ্টি করতেও রাষ্ট্রদূত কোনো ভূমিকা রাখতে সক্ষম হননি। তিনি বলেন, সউদীতে পুরুষ মহিলা গৃহকর্মীর গমনের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের নতুন নতুন নিয়ম এবং বিএমইটিতে দেড় শতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির সার্ভার বøক করে রাখায় সউদীতে জনশক্তি রফতানি হ্রাস পাচ্ছে। বায়রা নেতা বলেন, ঢাকাস্থ সউদী দূতাবাস থেকেও রিক্রুটিং এজেন্সির প্রতিনিধি কার্ড ইস্যু না করায় কর্মীদের ভিসার জন্য পাসপোর্ট দূতাবাসে জমা দিতে পারছে না।
রিয়াদস্থ জহরা এস্টাবলিষ্টমেন্ট এন্ড কনস্ট্রাকশন ইস্ট-এর জেনারেল ম্যানেজার মো. আবুল হোসাইন গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, সউদী আরবে কোম্পানীর আকামা নবায়ন করতে না পেরে অনেকেই চরম হতাশায় ভুগছেন। অবৈধ কর্মীদের কল্যাণের সউদী আরবে লেবার উইং এর জনবল বৃদ্ধি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, সউদীর আকামা ফি দ্বিগুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশি কর্মীরা ফি জমা দিতে না পেরে অবৈধ হয়ে যাচ্ছে।
রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র জানায়, সউদী আরবের রিয়াদে বসবাসরত অবৈধ বাংলাদেশিরা সরকার ঘোষিত নির্ধারিত ফি দিয়ে দেশে যেতে পারবেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের সহযোগিতায় অবৈধ কর্মীদের দেশে ফিরতে বিশেষ প্রত্যাবাসন কর্মসূচি প্রদান করবে সউদী লেবার অফিস।
৩১ ডিসেম্বর নতুন করে দূতাবাস থেকে সবশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, যাদের কোম্পানি, মুয়াসসাসা রিয়াদে অবস্থিত এবং ইকামার মেয়াদ উত্তীর্ণ, কোনো মামলা, জরিমানা, গাড়ি নেই শুধু তারাই তাদের পাসপোর্ট, ইকামা, ইকামা না থাকলে পাসপোর্টে ভিসার পাতার (হুদুদ নম্বরসহ) দুই সেট কপি নিয়ে ১ জানুয়ারি থেকে শুক্র এবং শনিবার ব্যতীত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রওদা এলাকায় অবস্থিত রিয়াদ লেবার অফিসে যোগাযোগ করে দেশে ফেরার জন্য সেবা গ্রহণ করতে পারবেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ দূতাবাস রিয়াদের প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে শুধু রিয়াদে অবস্থানকারীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে সউদী কর্তৃপক্ষের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে রিয়াদস্থ সউদী প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য বর্তমানে চলমান বিশেষ প্রত্যাবাসন কর্মসূচি সংক্রান্ত সেবা দূতাবাস রিয়াদের শ্রম কল্যাণ উইংয়ের প্রত্যক্ষ তত্ত¡বাবধানে বিনামূল্যে রিয়াদের সউদী লেবার অফিস প্রদান করবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, রিয়াদ দূতাবাসের আওতাধীন অন্যান্য শহরে এ সেবা প্রদান সংক্রান্ত তথ্যাবলী পরবর্তীকালে বিজ্ঞপ্তি আকারে দূতাবাসের ওয়েবসাইট ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে জানানো হবে।
বিশ্বের ১৬৮টি দেশে বাংলাদেশি কর্মীরা গেলেও তাদের সুরক্ষা ও অধিকার রক্ষায় ২৬টি দেশের বাংলাদেশ মিশনে শ্রম কল্যাণ উইং আছে মাত্র ২৯টি। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত, সউদী আরব এবং ইতালিতে দুটি করে শ্রম কল্যাণ উইং রয়েছে। কর্মীদের যথার্থ সেবা, সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিত করতে আরও শ্রম কল্যাণ উইং প্রয়োজন। একইসঙ্গে বিদ্যমান উইংগুলোর জনবলও বাড়ানোর প্রয়োজন বলে মনে করেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। আর এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে শ্রম কল্যাণ উইংয়ে জনবল বাড়ানোর বিষয়ে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে।
রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম সচিব মেহেদী হাসান ইনকিলাবকে বলেন, কোম্পানীর ভিসার প্রায় ছয় হাজারের অধিক অবৈধ প্রবাসী কর্মী বিশেষ প্রত্যাবাসন কর্মসূচির আওতায় দেশে ফিরতে ফরম জমা দিয়েছে। সউদীর বড় বড় শহরগুলোতেও অবৈধ কর্মীদের বিশেষ প্রত্যাবাসন কর্মসূচির অধীনে দেশে ফেরার কনস্যুলেট সেবা দেয়া হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।