পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
কারও মতে তিনি দুর্নীতির ‘স্মার্ট বয়’ কারও চোখে তিনি ‘দুর্নীতির সুপারম্যান’। যে উপাধিই দেয়া হোক না কেন-বাংলাদেশ বেতারের উপ-পরিচালক (প্রশাসন ও অর্থ) মোহাম্মদ হামিদুর রহমান বাংলাদেশে একজনই। বহু ‘অসম্ভব’কে ‘সম্ভব’ করতে পারেন তিনি। বিভ্রান্ত করতে পারেন যেকোনো তদন্ত কর্মকর্তাকে। ইমপ্রেস করতে পারেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকেও। হামিদুর রহমানের দুর্নীতির অনুসন্ধান-তদন্তে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো যেন অপারগ ! এ কারণে ওয়ান-ইলেভেন কিংবা চলমান ‘শুদ্ধি অভিযান’ও থামাতে পারেনি হামিদুর রহমানকে। এ প্রতিবেদকের কাছে তার বক্তব্য খোলামেলা : ‘দুদক আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি প্রমাণ করুক। চাকরি চলে যাক ! আমি তখন জেল খাটবো....!’ দুদকে তার বিষয়ে চলমান অনুসন্ধান সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলেও হামিদুর রহমান বলেন, ‘ওটাতো শেষ হয়ে গেছে। পুরনো বিষয়। তথ্যগতভাবে আপনি ( এ প্রতিবেদক) অনেক পিছিয়ে আছেন !’
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, মোহাম্মদ হামিদুর রহমান ( রেজি: নং-২৫১৪৪) ২৫তম বিসিএস (তথ্য) পরীক্ষায় ‘উত্তীর্ণ’ হয়ে ২০০৬ সালের ২১ আগস্ট বাংলাদেশ বেতারে সহকারি বেতার প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন শেষে এখন তিনি প্রশাসন ও অর্থ শাখায় উপ-পরিচালক হিসেবে কর্মরত। পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) শর্ত অনুযায়ী কোনো পরীক্ষায়ই তৃতীয় বিভাগ কিংবা তৃতীয় শ্রেণী গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু হামিদুর রহমান প্রথম শ্রেণীর ভুয়া ও জাল সার্টিফিকেট, মার্কশিট তৈরি করে পিএসসিতে জমা দেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বিসিএস (তথ্য) একটি প্রফেশনাল ও টেকনিক্যাল ক্যাডার। টেকনিক্যাল ক্যাডারের প্রার্থিতা মূল্যায়ন ও সুপারিশের জন্য সে সময় ৩০০ নম্বরের পয়েন্ট প্রার্থীর অনার্স ও মাস্টার্স এ প্রাপ্ত নম্বর থেকে নেয়া হয়। তার জালিয়াতি এবং দুর্নীতির বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরে গতবছর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি লেখেন বাংলাদেশ বেতারের প্রধান প্রকৌশলী আহম্মদ কামরুজ্জামান। তাতে বলা হয়, ‘মোহাম্মদ হামিদুর রহমান রাষ্ট্র, সরকার ও জাতির সাথে অন্যায়, প্রতারণা, জুলুম ও দুর্নীতি করে যোগ্য প্রার্থীকে ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করে নিজে চাকরি পেয়েছেন। এক কথায় যা চরম দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল’। ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এ চিঠি লেখেন। ওই চিঠির বিষয়বস্তু উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে পাঠিয়ে দেয় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। দুদকের বিশেষ অনুসন্ধান-তদন্ত শাখা-২ এর উপ-পরিচালক হেলাল শরীফ বিষয়টির অনুসন্ধান করেন। অনুসন্ধান পর্যাযে তিনি বাংলাদেশ বেতারের প্রধান কার্যালয় থেকে হামিদুর রহমানের রেকর্ডপত্র চেয়ে চিঠি দেন। এরপর একাধিকবার শুধু অনুসন্ধান কর্মকর্তা পরিবর্তন হয়। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের পৃথক একটি অভিযোগও ২০১৭ সারে নথিভুক্ত করে দুদক। এটির অনুসন্ধান করেন উপ-পরিচালক মলয় কুমার সাহা। এটির অনুসন্ধান পর্যায়ে হামিদকে তিনি কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি। জানতে চাইলে মলয় কুমার সাহা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করার মতো উপকরণ পাওয়া যায়নি।’
শত কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য : বাংলাদেশ বেতারে কয়েক দফা নিয়োগ বাণিজ্যে আব্দুল হামিদ সিন্ডিকেট হাতিয়ে নেয় অন্তত: প্রায় শত কোটি টাকা। তৃতীয় এবং চতুর্থ শ্রেণীর বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১১৪টি পদে নিয়োগ হয় কয়ে। নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ বেতার চুক্তিবদ্ধ হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম(এমআইএস) বিভাগের সঙ্গে। এর মধ্যে প্রথম দফায় ৫২টি পদের জন্য ৩৭ হাজারেরও বেশি দরখাস্ত জমা পড়ে। এতে ২০ হাজারের বেশি প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ নেন। দ্বিতীয় দফায় ৬২টি পদের জন্য ২২ হাজার ৭২৩টি আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন ১৫ হাজার প্রার্থী। চুক্তি অনুযায়ী প্রার্থী প্রতি ৩শ’ ৩০ টাকা বেতার এমআইএসকে দেবে। কিন্তু বাস্তবে এক-তৃতীয়াংশ প্রার্থীও পরীক্ষায় অবতীর্ণ হননি। অথচ আবেদনকারীর সংখ্যা হিসেবে এমআইএসকে পরীক্ষা গ্রহণের মজুরি বাবদ অগ্রিম ৮১ লাখ ৫৮হাজার ৫৯০ টাকা ‘পরিশোধ’ দেখিয়ে বেঁচে যাওয়া অর্থ পুরোটাই হাতিয়ে নেন হামিদুর রহমান সিন্ডিকেট। বেতারের শীর্ষ কর্মকর্তা, একজন পরিচালক এবং হামিদুর রহমানের সমন্বয়ে এ সিন্ডিকেট গঠিত। তথ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাও এর সঙ্গে জড়িত। এ সিন্ডিকেট সর্বশেষ ১০৮ টি জনবল নিয়োগের একটি প্রক্রিয়া শুরু করে গত অক্টোবরে। পরে হাইকোর্টের আদেশে নিয়োগটি পরে স্থগিত হয়ে যায়। নিয়োগ কমিটি থেকে হামিদুর রহমানকেও সরিয়ে দেয়া হয়। তবে এর আগেই প্রার্থী প্রতি ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকা করে অন্তত: ৫০ কোটি টাকা এই সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ের সবগুলো নিয়োগই হয়েছে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। সেখানেও হামিদুর রহমান হাতিয়ে নেন অন্তত: ৬০ কোটি টাকা। হাতিয়ে নেয়া টাকার ৮০ ভাগই তিনি সংশ্লিষ্টদের মাঝে বিলিয়ে দেন বলে কোনো পর্যায় থেকে তার দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় না। যেসব চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নেয়া হয় উত্তরপত্রে তাদের শুধু নাম-ঠিকানা লিখতে বলা হয়। পরীক্ষা নেয়া হয় এমসিকিউ পদ্ধতিতে। এমআইএস বিভাগের অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারিদের যোগসাজশে ঘুষ প্রদানকারী প্রার্থীদের বেশি নম্বর দিয়ে ‘পাস’ দেখানো হয়। চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে নেয়া অর্থ ভাগাভাগি হয় তথ্যমন্ত্রণালয়সহ সিন্ডিকেটের সহযোগি অসাধু কর্মকর্তাদের মধ্যে।
‘অনিয়মিত শিল্পী’ হিসেবে নিয়োগে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন হামিদ সিন্ডিকেট। গত ৬ মাসে নিয়োগ দেয়া হয় ৩০ জনের বেশি। বিপরীতে হাতিয়ে নেয়া হয় অন্তত: ৯০ লাখ টাকা। এছাড়া বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমেও হামিদ লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। বদলিতে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব দেখান হামিদুর রহমান। কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারি অর্থ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে কিংবা দ্বি-মত পোষণ করলে তার ওপর নেমে আসে শাস্তির খড়গ। তাকে বদলি করা হয় দূরবর্তী স্টেশনে। হয়রানি করা হয়। তার ভয়ে অধীনস্থরা তটস্থ।
৩১ বার বিদেশ ভ্রমণ : বাংলাদেশ বেতারে সাড়ে ৪শ’ কর্মকর্তা। তাদের বেশির ভাগই চাকরি জীবনে একবারও বিদেশ যেতে পারেননি। অথচ উপ-পরিচালক (প্রশাসন) আব্দুল হামিদ বিদেশ গিয়েছেন ৩১ বার। সরকারি বিদেশ ভ্রমণ নীতিমালায় সিনিয়রিটি এবং সমতার ভিত্তিতে প্রার্থী নির্বাচনের কথা রয়েছে। সেই নীতিমালাকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে বার বার বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করছেন হামিদ একাই। ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ২৮টি ভ্রমণাদেশ রয়েছে মোহাম্মদ হামিদুর রহমানের বিরুদ্ধে। ইন্টারন্যাশনাল ব্রডকাস্ট কনফারেন্স, পড়াশুনা, উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণের ছুতোয় ২৪ বার সস্ত্রীক বিদেশ গিয়েছেন সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত খরচে। এর মধ্যে রয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র,জার্মানসহ ইউরোপের অনেক দেশ। এসব ভ্রমণাদেশের কপি এ প্রতিবেদকের হস্তগত হয়েছে। তাতে দেখা যায়, ২০১৬ সালের ১৬ জুলাই তথ্যমন্ত্রণালয়ে করা ছুটির আবেদনে তিনি সস্ত্রীক ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, ইতালি, জার্মানি, স্পেন, নেদারল্যান্ড ও তুরষ্ক সফরে যান। জানা গেছে আব্দুল হামিদ মালয়েশিয়ায় ‘সেকেন্ডহোম’ তৈরি করেছেন। চতুর হামিদুর রহমান দেশে তেমন কোনো স্থাবর সম্পত্তি করেননি। কিন্তু বার বার বিদেশ সফরের অর্থ তিনি কোথায় পান ? কিভাবেই বা তিনি বিদেশ সফরের ছুটি পাচ্ছেন ? এ প্রশ্নে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
কোচিং আড়ালে ডিলিং স্টেশন : জালিয়াতির মাধ্যমে বিসিএস’ এ অংশ গ্রহণ এবং উত্তীর্ণ হওয়া, বাংলাদেশ বেতারে পোস্টিং, বেতারের প্রশাসন এবং অর্থ বিভাগের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় পোস্টিং, কোটি কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য, পাওনাদার প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ, মাত্রারিক্ত বিদেশ সফর, অভ্যন্তরীণ অডিটে অডিট টিমকে ম্যানেজ, দুর্নীতির তদন্ত ধামাচাপা দিয়ে রাখার মতো, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ঠেকানো-সব কিছুই ‘ম্যানেজ’ করেন মোহাম্মদ হামিদুর রহমান। এ কারণে তাকে বলা হয় ‘ম্যানেজ মাস্টার’। আর এ ম্যানেজিংয়ে তিনি অর্থ ব্যয় করেন দু’হাতে। যেখানে ঠেকেন সেখানেই ছড়ান অর্থ। এ অর্থ যায় তথ্য মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন উচ্চ পদের কর্মকর্তা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তাদের পকেটে। বিনিময়ে হামিদুর রহমানের সকল জালিয়াতি, দুর্নীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য আর অস্বাভাবিক বিদেশ সফরকে বৈধতা দেন এসব পদস্থ কর্মকর্তা। হামিদুরের অবৈধ কর্মকান্ডের সহযোগী কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন, তাদের হাতে রাখা, ঘুষ প্রদান এবং চাকরি প্রার্থীদের কাছ থেকে অর্থ নেয়ার জন্য হামিদুর রহমান ব্যবহার করেন এই কোচিং সেন্টারটিকে। যা মূলত: একটি ‘ডিলিং স্টেশন’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।