Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আবারো চিলিতে মেসিদের স্বপ্নভঙ্গ

প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : সময়ের আবর্তে সবকিছুই বদলে যায়। শুধু বদলালো না আর্জেন্টিনার ফাইনালের ভাগ্যটা। টানা তিন বছর তিনটি বৈশ্যিক ফুটবল আসরের ফাইনালে হারতে হল আর্জেন্টিনাকে। তবে ইতহাস যতটা না আর্জেন্টিনার ব্যার্থতা হিসাবে এটাকে মনে রাখবে তার চেয়ে বেশি করে মনে রাখবে লিওনেল মেসির ব্যর্থতার কারণে। ক্লাবের হয়ে ২৮টি শিরোপা জিতলেও দেশকে যে কোনো শিরোপার স্বাদ এনে দিতে পারেননি ৫ বারের বিশ্বসেরা। আর পারবেনও না হয়তো। পারবেন কীভাবেÑচিলির কাছে কোপার স্বপ্নভঙ্গের পরই যে দিয়েছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায়ের ঘোষণা। সর্বকালের অন্যতম সেরা একজন খেলোয়াড় হওয়ার পরও জাতীয় দলের এই শিরোপা শূন্যতাই হয়ে থাকবে ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম কলঙ্ক হিসেবে। যে কারণে চিলিয়ানদের আনন্দ উল্লাসকে ছাপিয়ে আর্জেন্টাইনদের বিরহের রাগ যেন স্তব্ধ করে দিয়েছিল মিটলাইফ স্টেডিয়াম।
গেল বছরের সেই সান্তিয়াগোই যেন গতকাল ফিরে এসেছিল নিউ জার্সির ইস্ট রাদারফোর্ডে। সেদিনের মতো কালও আর্জেন্টিনার ঘাতকের আসনে চিলি। সেই নির্ধারিত আর অতিরিক্ত সময় গোলশূন্য থাকার পর টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার বেদনা-কাব্য। সেবার হেরেছিল ৪-১ ব্যবথানে এবার ৪-২। পক্ষান্তরে ব্রাজিলের পর টানা দুইবার কোপা আমেরিকার শিরোপা দখলে নিলো চিলি।
দলের এই ব্যর্থতার জন্য এখন নিজেকেই দায়ী করতে হবে বার্সেলোনার তারকা ফরোয়ার্ড লিওনেল মেসিকে। টাইব্রেকারে আর্জেন্টিনার প্রথম শটেই যে গোল করতে পারেননি আর্জেন্টিনা অধিনায়ক। বল উড়িয়ে মারেন বারের উপর দিয়ে। পরে চিলি গোলরক্ষক ক্লাওদিও ব্রাভো রুখে দেন লুকাস বিগলিয়ার শটও। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত কোপা আমেরিকার এই শতবর্ষী বিশেষ টুর্নামেন্টে ফাইনালের আগে ৫ ম্যাচে আর্জেন্টিনা ও চিলি করেছিল যথাক্রমে ১৮ ও ১৬ গোল। তাদের কেউই এদিন জ্বলে উঠতে পারল না।
এরপরও গোলের একাধিক সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। বরাবরের মতো এবারের ফাইনালেও সহজ গোলের সুযোগ হেলায় নষ্ট করেন গঞ্জালো হিগুইন। ২১তম মিনিটে গারি মেদেলের ভুলে বল পেয়ে যান হিগুইন। এগিয়ে আসা গোলরক্ষক ব্রাভোর উপর দিয়ে তার চিপ বাঁ পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। ২৮তম মিনিটে মেসিকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয় মার্সেলো দিয়াসকে। এর আগের কার্ডটিও তিনি দেখেছিলে প্রতিপক্ষ অধিনায়ককেই আটকাতে গিয়ে। ব্রাজিলের রেফারির এই সিদ্ধান্তকে অবশ্য একটু বেশিই কঠোর মনে হয়েছে। বিরতির কিছুক্ষণ আগে আর্তুরো ভিদালকে ফাউলের জন্য আর্জেন্টিনা ডিফেন্ডার মার্কোস রোহোকে সরাসরিই লাল কার্ড দেখান ব্রাজিলিয়ান রেফারি। রেফারির এই সিদ্ধান্ত নিয়েও বিতর্ক হতে পারে। দ্বিতীয়ার্ধেও সুযোগ নষ্ট করেন হিগুইন। ৫৬তম মিনিটে তাকে তুলে নিয়ে সার্জিও আগুয়েরোকে নামান কোচ জেরার্ডো মার্টিনো। পুরো ম্যাচে সার্জিও রোমেরোকে প্রথম পরীক্ষা দিতে হয় ৭৯তম মিনিটে। বল নিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া এদুয়ার্দো ভারগাসের শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকান আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক। পাঁচ মিনিট পর ডি-বক্সের ভেতর থেকে লক্ষ্যভ্রষ্ট শটে সুযোগ নষ্ট করেন আগুয়েরো।
নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে ডি-বক্সে ঢুকে পড়া জ্যঁ বোশেজুর কাটব্যাক থেকে গোল করতে পারেননি টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় সানচেস। পাল্টা আক্রমণে মেসি বল নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেন। ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। এখানেও ব্যর্থ দু’দলের আক্রমনভাগ। ম্যাচ টাইব্রেকারে গড়ানোয় চিলিকে খুশিই দেখালো। তখনই ফিরে আসে চিলির সান্তিয়াগোর সেই গত আসরের স্মৃতি। সেবার মেসি প্রথম শটে গোল করলেও, ব্যর্থ হয়েছিলেন হিগুয়াইন ও এভার বানেগা।
এবার ভিদালের প্রথম শটই রোমেরো ঠেকিয়ে দেওয়ায় মনে হচ্ছিল ইতিহাস পাল্টাতে যাচ্ছে। কিন্তু মেসি দেখালেন অমার্জনীয় ব্যর্থতা। বল উড়িয়ে মারেন ক্রসবারের উপর দিয়ে! চিলির নিকোলাস কাস্তি দ্বিতীয় শটে লক্ষ্যভেদ করেন। হাভিয়ের মাসচেরানোও বাঁ পাশ গিয়ে গোল করে আর্জেন্টিনাকে সমতায় ফেরান। তৃতীয় শটে আরানগুইস রোমেরোকে নড়তে না দিয়েই বল জালে পাঠান। আগুয়েরোও নিচু শটে ডান কোণ দিয়ে ব্রাভোকে ফাঁকি দেন। চতুর্থ শটে ঠান্ড মাথায় উপরের বাঁ কোণ দিয়ে বল জালে পাঠান বোশেজু। কিন্তু বিগলিয়ার শট ডানে ঝাঁপিয়ে ঠেকিয়ে দেন ম্যাচসেরা ব্রাভো। এরপর ফ্রান্সিসকো সিলভা কোনো ভুল করেননি। বল জালে পাঠিয়ে দলকে চিলিয়ানদের উপহার দেন টানা দ্বিতীয় শিরোপা জয়ের উল্লাস।
আর্জেন্টাইন কোচ মার্টিনোও এই ফল মেনে নিতে পারছের না, ‘কী ঘটেছে তা ব্যাখ্যা করা সহজ নয়। আর্জেন্টিনার ম্যাচটি জেতা উচিৎ ছিল।’ দুই লাল কার্ডও ম্যাচে প্রভাব রেখেছে উল্লেখ করে মার্টিনো বলেন, ‘রোহো বহিষ্কার হওয়ায় বল ফিরে পেতে আমাদের কিছু সমস্যা হয়েছে, এই কারণে আমরা মাতিয়াস ক্রানেভিত্তেরকে নামিয়েছি। এরিক লামেলাকে আনা হয়েছিল প্রতিপক্ষের রক্ষণের ক্লান্তর সুযোগ নিতে। শেষ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে যেতে চেয়েছি আমরা।’
ওদিকে চিলির শিবিরে বইছে স্বপ্ন পুরণের খুশির বন্যা। দলের সেরা তারকা ও টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় এলিক্সিস সানসেজ বলেন, ‘আমার কাছে প্রকাশের কোনো ভাষা নেই। আমাদের সমর্থন করতে আসা মানুষ আর সতীর্থদের ধন্যবাদ। সব কিছুই অসাধারণ।’ সাবেক মেসি স্বতীর্থ বলেন, ‘আমি খুব আবেগী, এমনকি কী ঘটছে তা আমি পুরোপুরি অনুধাবনও করতে পারছি না, বিশ্বের সেরা দলগুলোর একটি আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি আমরা।’ আর্সেনাল তারকা বলেন, ‘আমরা এখন চিলির ফুটবল ইতিহাসের অংশ। আমার কাছে আমার জীবনের সেরা ঘটনা এটি। (টানা) দুটি ফাইনাল আপনি প্রতিদিন জিতবেন না।’
গ্রæপ পর্বে এই আর্জেন্টিনার কাছেই ২-১ গোলে হেরেছিল চিলি। ফাইনালে এসে এর নির্দয় প্রতিশোধ নিল তারা। সেই ১৯৯৩ সালে কোপা আমেরিকাতেই শেষবার বড় কোনো টুর্নামেন্টে জিতেছিল আর্জেন্টিনা। এর পর অপেক্ষা কেবল বেড়েছে আর্জেন্টিনার। প্রত্যাশার বাড়তি চাপই হয়ত এই বর্ধিষ্ণু অপেক্ষার কারণ। চিলিয়ান কোচ অ্যান্তোনিও পিজ্জিও জানালেন এমনই, ‘পরপর দুটি ফাইনালের পর তৃতীয় ফাইনালে এসে প্রত্যাশার চাপ সামলানো কঠিন। এরপরও মেসিই বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ই থাকবে।’ কে জানে ফুটবল বিধাতার একট খেলা এটি। সর্বকালের দুই সেরা পেলে ও ম্যারাডোনাও যে কখনো কোপা জিততে পারেননি!

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবারো চিলিতে মেসিদের স্বপ্নভঙ্গ
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ