Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাকিস্তানকে বিশাল সাফল্য এনে দিতে যে যুদ্ধবিমান

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩ জানুয়ারি, ২০২০, ৭:৪৯ পিএম

পাকিস্তান বিমান বাহিনীর আধুনিকায়নের অনেক প্রকল্পের ধারাবাহিকতার ফল হলো জেএফ-১৭। চেঙ্গদু এয়ারক্রাফট করপোরেশনের (সিএসি) জে-৭ জঙ্গিবিমান থেকে ধাপে ধাপে এই আত্মপ্রকাশ ঘটেছে।

পাকিস্তান ও চীনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তৈরি জেএফ-১৭ ‘থান্ডার’ মাল্টিরোল জঙ্গিবিমান চীনের সবচেয়ে সফল অ্যারোস্পেস রফতানি। শুরু থেকেই এটি রফতানি জঙ্গিবিমান হিসেবে তৈরীর পরিকল্পনা থাকলেও এর চলার পথ মসৃণ ছিল না। কয়েক দশকের উন্নয়ন ও এমনকি কিছু পর্যায়ে আমেরিকার সহায়তারও প্রয়োজন হয়েছে। নক্সাগত দিক থেকে এটি মিগ-২১ ও এফ-১৬ ফাইটিং ফ্যালকনের সমন্বয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। সবচেয়ে সাম্প্রতিক জেএফ-১৭-এর ব্লকগুলোতে অত্যাধুনিক সক্ষমতা সংযোজন করা হয়েছে যা সাধারণভাবে এর ২০ বছর আগের নক্সার সাথে তুলনীয়। কিন্তু জেএফ-১৭ সৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্র ঠিক কীভাবে সহায়তা করেছিল?

সোভিয়েতবিরোধী আফগান মুজাহিদদের প্রতি মার্কিন সহায়তার অন্যতম মধ্যস্ততাকারী ছিল পাকিস্তান। ফলে আরেকটি প্রতিরক্ষা খাতে পাকিস্তানকে তখন সহায়তা করতে আগ্রহী ছিল যুক্তরাষ্ট্র। সোভিয়েত ইউনিয়ন তখন পরবর্তী প্রজন্মের লাইটওয়েট ফাইটার হিসেবে মিগ-২৯ নামানোর প্রস্তুতি নিতে থাকায় পাকিস্তান একে প্রতিরোধ করার জন্য নতুন বিমান চেয়েছিল। এর ফলেই প্রজেক্ট সাবরি ২-এর আত্মপ্রকাশ ঘটে। এটি ছিল সিএসি ও গ্রুম্যানের জে-৭এসকে আধুনিকায়নের একটি প্রয়াস। সাবরি ২ আসলে ছিল জে-৭-এর কাঠামোর সম্প্রসারণ। তবে এর বহিরাবরণে পরিবর্তন আনা হয়। এয়ার ইনটেকের স্থান ও আকারেও পরিবর্তন আনা হয়। তবে সমসাময়িক আমেরিকান জঙ্গি বিমান বা মিগ-২৯-এর সম্ভাব্য দক্ষতার কাছাকাছিও ছিল না সাবরি ২-এর দক্ষতা। ফলে এটি আর তেমন অগ্রসর হতে পারেনি।

তবে তিন দেশ ১৯৮০-এর দশকের শেষ দিকে আরেকটি চেষ্টা চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে আত্মপ্রকাশ করে ‘সুপার ৭’ প্রজেক্টের। এবার পাখার দৈর্ঘ্য বাড়িয়ে এফ-১৬-এর মতো করা হয়। তবে তিয়ানম্যান স্কয়ারের কারণে গ্রুম্যান ১৯৮৯ সালে সুপার ৭ প্রকল্প থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলে প্রকল্পটি মুখ থুবড়ে পড়ে। প্রায় ১০ বছর প্রকল্পটি হিমাগারেই ছিল। তবে চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে আলোচনা অব্যাহত থাকে। ভবিষ্যতের উন্নয়ন সফল হবে কিনা তা নিয়ে একটি সমীক্ষা চালানো হয় ১৯৯২ সালে। তখন সম্ভাবনা দেখা যাওয়ার কারণেই সমঝোতা স্মারকে সই হয়।

১৯৯৮ সালে চীন ও পাকিস্তান সুপার ৭-এর ব্যাপক উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেয়। খরচ ৫০/৫০ ভাগাভাগি করার সমঝোতা হয়। পাকিস্তান সরকার ও সিএসি বিমানটির নাম রাখার সিদ্ধান্ত নেয় জেএফ-১৭। তবে গ্রুম্যান নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ায় বিমানটির নতুন পাওয়ারপ্লান্টের প্রয়োজন হয়। সমাধান পাওয়া যায় রুশ মিকোয়ান ডিজাইন ব্যুরোতে। তারাই ক্লিমভ আরডি-৯৩ ইঞ্জিনের প্রস্তাব করে। এই ইঞ্জিন নির্মাণ করা হয়েছিল বাতিল হওয়া মিগ-৩৩ জঙ্গিবিমানের জন্য। আরডি-৯৩ ছিল মিগ-২৯-এ ব্যবহৃত আরডি-৩৩-এর আধুনিক সংস্করণ। অবশ্য জেএফ-১৭-এ মাত্র একটি আরডি-৯৩ ব্যবহৃত হলেও মিগ-২৯-এ ব্যবহৃত হয় দুটি আরডি-৩৩।

উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভাবন ঘটে জেএফ-১৭ ডিজাইনে ডাইভার্টলেস সুপারসনিক ইনটেকস (ডিএসআই) অন্তর্ভুক্তিতে। ২০০৩ সালে প্রথম প্রোটোটাইপটি আকাশে ডানা মেলে। ২০০৬ সাল নাগাদ জেএফ-১৭ চূড়ান্ত হয় এবং উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হয়। ২০০৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে একে গ্রহণ করা হয়। প্রথম পূর্ণ পাকিস্তান-নির্মিত জেএফ-১৭ সৃষ্টি হয় ২০০৮ সালে। জেএফ-১৭-এর ডিজাইনাররা অবশ্য সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলছিলেন। পাকিস্তানের জন্য জঙ্গিবিমানের প্রাথমিক প্রয়োজন মেটানোর বিষয়টিকে অভিহিত করা হয় ব্লক ১ জেএফ-১৭এস। ব্লক ২ জেএফ-১৭এসে আরো নানা পরিবর্তন ঘটে। একপর্যায়ে চীন প্রস্তাব দিয়েছিল আরডি-৯৩এস ইঞ্জিনের বদলে তার নিজস্ব ডব্লিউএস-১৩ সংযোজন করতে। কিন্তু পাকিস্তান রুশ ইঞ্জিনের প্রতিই অটল থাকে।

ব্লক ৩-এর জন্য চীন জেএফ-১৭-এর জন্য এইএসএ রাডার সংযোজনের আশা করছে। এতে করে বিমানের উড্ডয়ন ক্ষমতা বাড়বে, অস্ত্র সক্ষমতাও বৃদ্ধি পাবে। আর স্ট্যান্ডার্ড জেএফ-১৭ পাশ্চাত্য ও প্রাচ্যের বিমানের সাথে পাল্লা দিতে সক্ষম। তবে এই বিমানের একটি সম্ভাব্য দুর্বলতা হলো এর ভেতরের কামানে। এটি এখনো ডাবল-ব্যারেলের জিএসএইচ-২৩, যা মিগ-২১ থেকে নেয়া হয়েছে। আধুনিক যুদ্ধে এ ধরনের কামান অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়ে। তবে আধুনিক জঙ্গিবিমানে কামানের ব্যবহার তেমন হয় না। ফলে এটি বড় কোনো ইস্যু নয়।

তবে জেএফ-১৭-এর সবচেয়ে বড় অগ্রগতি হলো এর ব্যয়ে। সমসাময়িক অন্য যেকোনো বিমানের চেয়ে জেএফ-১৭ অনেক সস্তা, এমনটি পুরনো বিমানের চেয়েও এর দাম কম। আবার ব্লক২ জেএফ-১৭এসের দাম প্রায় একই রয়ে গেছে। মিয়ানমার প্রতিটি মাত্র ১৬ মিলিয়ন করে কিনেছে। এটা হলো জেএফ-১৭এসের একটি রফতানি সাফল্য। একটি গরিব দেশ খুবই কম দামে তুলনামূলক আধুনিক জঙ্গিবিমান নামাতে পেরেছে। তবে যুদ্ধে এটি কতটা সাফল্য প্রদর্শন করতে পারে, সেটিই দেখার বিষয়। অবশ্য ট্রায়ালে জেএফ-১৭-এর দক্ষতায় পাকিস্তান দৃশ্যত সন্তুষ্ট। অনেক দিক থেকেই চীন আধুনিক যুগে প্রবেশ করার জন্য শেষ প্রজন্মের তথা মিগ-২১-এর বাজেট ফাইটার আধুনিকায়ন করেছে এফ-১৬ থেকে সহায়তা ও বাড়তি নক্সা কিউ নিয়েছে। সূত্র: এসএএম।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাকিস্তান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ