মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
আমেরিকার ‘হিট লিস্টে’র প্রথম দিকেই ছিলো জেনারেল কাসেম সোলাইমানির নাম। তিনি ইরানের এলিট ফোর্স হিসেবে পরিচিত বিপ্লবী গার্ড করপোরেশনের (আইআরজিসি) ‘কুদস বাহিনী’র প্রধান ছিলেন। দেশটির আধ্যাত্মিক নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির পরই তিনি ছিলেন সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি। মার্কিন এয়ারস্ট্রাইকে তার মৃত্যুর পর থেকেই তোলপাড় গোটা বিশ্বের রাজনীতি থেকে অর্থনীতি। বাড়ছে তেলের দাম, পড়ছে টাকার দাম, কেউ কেউ বলছেন যুদ্ধের ইঙ্গিত। অথচ আইএস বিরোধি যুদ্ধে তাকেই মদত দিয়েছিলো যুক্তরাষ্ট্র।
জেনারেল সোলাইমানি নিজ দেশ ইরানে হাজি কাসেম নামে পরিচিত। তিনি রেভল্যুশনারি গার্ডের একজন কমান্ডার হলেও অলিখিতভাবে তার পদমর্যাদা দেশটির যেকোনো সামরিক কর্মকর্তার ওপরে ছিল। সোলাইমানি তার বাহিনীর পুরো কাজকর্মের জন্য দেশটির সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে জবাবদিহি করতেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আলী খামেনি জেনারেল সোলাইমানিকে ‘অর্ডার অব জুলফিকার’ পদক দেন। বিপ্লব-উত্তর ইরানে এই খেতাব তিনিই প্রথম পান।
কাসেম সোলাইমানি ১৯৫৭ সালে ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরমান শহরের উপকণ্ঠে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ইরানে ইসলামি বিপ্লবের বিজয়ের পর আইআরজিসি’তে যোগদান করেন। অতি সাধারণ, নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলে তিনি। পড়াশোনাও খুব বেশি নয়। ১৯৮০ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত ইরান-ইরাক যুদ্ধে জেনারেল সোলাইমানি কেরমানের ৪১ ‘সারুল্লাহ’ ডিভিশনের নেতৃত্ব দেন। ওই যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি ইরানের পূর্ব সীমান্তে মাদক চোরাচালান ও সন্ত্রাস বিরোধী অভিযানে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করে। ওই অভিযানে তিনি মাদক চোরাকারবারী ও সন্ত্রাসীদের হত্যা করার মাধ্যমে ইরানের পূর্ব সীমান্তের নিরাপত্তা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ঘটান।
১৯৯৭ সালে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি তাকে আইআরজিসি’র কুদস বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে নিয়োগ দেন। ইরান রেভোলিউশনারি গার্ডসের এই অভিজাত বাহিনীটি দেশের বাইরে কভার্ট অপারেশন চালিয়ে থাকে। সে সময় ইরানের পূর্ব সীমান্তে তালেবান যে হুমকি সৃষ্টি করেছিল তার অবসান ঘটাতে সক্ষম হন। ২০১১ সালের ২৪ জানুয়ারি কাসেম সোলাইমানি মেজর জেনারেল পদে উন্নীত হন। তাকে নিয়ে ইরানে তৈরি হয়েছে তথ্যচিত্র। এমনকি পপ গানেও জায়গা পেয়েছেন ইরানের এই ‘হিরো’।
জানা যায়, সোলাইমানি নিছক একজন সেনা অফিসার ছিলেন না। মধ্যপ্রাচ্যে ইরান কি ভূমিকা নেবে, তার মাস্টারমাইন্ড ছিলেন সোলাইমানি। বিবিসি জানাচ্ছে, দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভূমিকা তিনিই কার্যত পালন করতেন। বিশেষত যুদ্ধ কিংবা শান্তির ক্ষেত্রে তিনিই শেষ কথা। বলা হয়, সিরিয়ার যুদ্ধের কারিগরও নাকি তিনি। ইরাকে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতেন মেজর জেনারেল সোলাইমানি।
ইরান ও আমেরিকার মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘসময় ধরে শত্রুভাবাপন্ন হলেও ইরাকে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আদর্শগত দিক বিবেচনায় পরোক্ষভাবে একে অপরকে সহায়তা করেছিল তারা। জেনারেল সোলাইমানি দুই বৈরি ভাবাপন্ন দেশের মধ্যে সংযোগ স্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাও পালন করেন। তার আগে আফগানিস্তানে তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে মার্কিন সেনাদেরকে প্রত্যাক্ষভাবে সহযোগিতা করেন তিনি। কিন্তু যেদিন ইরানের পরমাণু ক্ষমতা খর্ব করার চেষ্টা করেছে আমেরিকা, সেদিন থেকে সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকতে শুরু করে।
২০১৩ সালে এক সাবেক সিআইএ অফিসার বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাধিক একক ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তি সোলাইমানি। মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাব বিস্তার করতে একের পর এক পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি। তাকে সাম্প্রতিক সময়ের বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত সমরবিদ মনে করা হচ্ছিল। তিনি মধ্যপ্রাচ্যসহ পুরো সামরিকজগতের বিশেষ নজরে ছিলেন। সিআইএ-মোশাদের হিটলিস্টে সোলাইমানি ছিলেন বলে বিভিন্ন খবরে জানা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফরেন পলেসি’ জার্নাল ২০১৯ সালে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একটি তালিকা করে। এই তালিকার সামরিকখাতে জেনারেল সোলাইমানিকে প্রথম স্থানে রাখা হয়। মার্কিন প্রশাসন এই ইরানি জেনারেলকে একজন ‘সন্ত্রাসী’ হিসেবে বিবেচনা করে আসছিল। তিনি মার্কিন সরকারের কালো তালিকায় ছিলেন। তিনি ইসরায়েল ও সউদী আরবেরও মাথাব্যথার কারণ ছিলেন।
ইরনা-পন্থী বাহিনীর হাতে তিনি গোপেন অস্ত্র তুলে দিয়েছেন বলেও জানা যায়। শিয়া মুসলিম ও কুর্দিশদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করতেন বলেও শোনা যায়। আমেরিকাতে হামলা চালাতে গোপনে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলিকে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়। মার্কিন স্বরাষ্ট্র সচিব মাইক পম্পেও এই কুদস বাহিনীকে জঙ্গিগোষ্ঠী বলে উল্লেখ করেছেন।
ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যে লেবাননের মদতপুষ্ট হিজবুল্লা জঙ্গি গোষ্ঠীর অভিযান ও ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলিকে পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন করতো ইরানের কুদস ফোর্স। এসব সংগঠনকে তারা অর্থ, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে বলে অভিযোগ আমেরিকার। সূত্র: টাইমস, ইউকে মেট্রো, আল-জাজিরা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।