Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লেবার পার্টির ৭ ছায়ামন্ত্রীর পদত্যাগ

প্রকাশের সময় : ২৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ব্রেক্সিট ভূমিকম্পের জেরে বিরোধী দলে অভ্যুত্থান :  চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন করবিন
ইনকিলাব ডেস্ক : ব্রেক্সিট যেন এক রাজনৈতিক ভূমিকম্প। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের মসনদ এরই মধ্যে তছনছ হয়ে গেছে। এখন চ্যালেঞ্জের মুখে বিরোধী নেতা জেরেমি করবিনও। রীতিমতো ক্যু হয়ে গেছে লেবার পার্টিতে। পদ ছেড়ে দেয়ার জন্য চাপ বাড়ছে তার ওপর। ইতিমধ্যে তার সাত ছায়ামন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। নাটকীয় পরিবর্তনের সূচনা হয় গত রোববার রাতে যখন করবিন তার বিরুদ্ধে ক্যু করার অভিযোগে ছায়া মন্ত্রিসভার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বেনকে বরখাস্ত করেন। এখন পর্যন্ত অনড় অবস্থানে রয়েছেন করবিন। বলেছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। তবে পরিস্থিতি যেদিকে গড়াচ্ছে তাতে অনাস্থা ভোটের মুখোমুখি হতে পারেন তিনি। স্কটল্যান্ডের পার্লামেন্ট হলিরুড যুক্তরাজ্যের ইইউ প্রস্তান আটকে দিতে পারে বলে মনে করেন স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টার্জিওন। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার দ্বিতীয় গণভোটের ধারণা নাকচ করে দেননি। ৩ মিলিয়ন ব্রিটিশ নাগরিক গণভোটের পিটিশনে স্বাক্ষর করেছেন। দ্বিতীয় গণভোটের দাবিতে বিক্ষোভ হয়েছে লন্ডন ও এডেনবরায়।
এদিকে, ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ এনেছেন জেরেমি করবিন। অভিযোগে বলা হয়েছে, জেরেমি করবিনের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছিলেন বেন। তা টের পেয়ে তাকে বরখাস্ত করেছেন করবিন। এ নিয়ে বিরোধী দল লেবার পার্টিতে চলছে ঝড়। আর তারই ধারাবাহিকতায় ছায়া মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেছেন আরো সাত সদস্য। পদত্যাগ করা সদস্যরা হলেন- হিদি আলেকজান্ডার, ইয়ান মুরে, গ্লোরিয়া ডি পিয়েরো, লিলিয়ান গ্রিনউড, লুসি পাওয়েল, কেরি ম্যাকার্থি ও সীমা মালহোত্রা। এর মধ্যে স্বাস্থ্য বিষয়ক ছায়ামন্ত্রী হিদি আলেকজান্ডার দলীয় প্রধান করবিনকে পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, আপনাকে একজন (দলীয়) আদর্শ অনুসরণকারী হিসেবে আমি শ্রদ্ধা করি। কিন্তু দেশে এখন যে চ্যালেঞ্জ তার উত্তর দেয়ার মতো সক্ষমতা আপনার আছে বলে আমি মনে করি না। আরেকজন ছায়ামন্ত্রী স্কাই নিউজকে বলেছেন, ছায়া মন্ত্রিপরিষদ, পার্লামেন্টারি লেবার পার্টি ও তৃণমূল পর্যায়ের সদস্যদের আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন। যথেষ্ট হয়েছে, আর না। ছায়া মন্ত্রিসভার এই গণপদত্যাগেও অবশ্য টলছেন না জেরেমি করবিন। তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, পদত্যাগ করছেন না। করবিন তার পক্ষে পেয়েছেন ছায়া চ্যান্সেলর জন ম্যাকডনেলকে। তিনিও জানিয়ে দিয়েছেন, করবিন কোথাও যাচ্ছেন না। ম্যাকডনেল ছাড়াও ছায়া মন্ত্রিসভার সদস্য অ্যান্ডি বার্নহ্যাম, ডায়ানে অ্যাবট ও এমিলি থর্নবেরিও নিজেদের সমর্থন জানিয়েছেন করবিনের প্রতিই। আর নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের ছায়া সেক্রেটারি ভার্নন কোকার জানিয়েছেন, তিনি এখনও কোনো পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেননি।
জেরেমি করবিনের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। বিভিন্ন মহলের অভিযোগ, গণভোটে লেবার দলের নেতৃত্বে নিষ্প্রভতা প্রদর্শন করেছেন করবিন। এমনকি ব্রিটিশ সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার পর্যন্ত এমন অভিযোগ করেছেন। ফলে জেরেমি করবিনের নেতৃত্ব বেশ বড় একটি সংকটের মধ্যে পড়েছে। তাছাড়া ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে জেরেমি করবিন ও হিলারি বেনের মধ্যে যে উত্তেজনা তা এখন চরমে পৌঁছেছে। জেরেমি করবিন অভিযোগ করেছেন, হিলারি বেন তাকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করছেন। এ ঘটনায় দ্য অবজার্ভারে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয় যে, গত সপ্তাহান্তে ছায়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেন তার লেবার দলের এমপিদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাদের তিনি জানিয়েছেন যে, জেরেমি করবিনকে সরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে যদি উল্লেখযোগ্য সমর্থন থাকে তাহলে তিনি তাকে পদত্যাগ করতে বলবেন। যদি লেবার নেতা করবিন সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন তাহলে ছায়া মন্ত্রিসভার সহকর্মীদের হিলারি বেন শিবিরে যোগ দেয়ার আহ্বান জানান। বলেন, করবিন পদত্যাগের অনুরোধ উপেক্ষা করলে তারা সবাই মিলে পদত্যাগ করবেন। দলের ভিতর এমন ঝড়তোলা খবরে মাথা ঘুরে যায় লেবার নেতা জেরেমি করবিনের।
তিনি সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে হিলারি বেনকে বরখাস্তের কথা জানিয়ে দেন। স্থানীয় সময় রোববার রাত একটার সামান্য পরে লেবার দলের এক মুখপাত্র ফোন করে এ কথা জানিয়ে দেন স্কাই নিউজকে। বলেন, হিলারি বেনের ওপর আস্থা হারিয়েছেন জেরেমি করবিন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি হিলারি বেনকে বরখাস্ত  করেছেন। জবাবে হিলারি বেন একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এখন এটা পরিষ্কার হয়েছে যে, লেবার এমপিদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একইসঙ্গে ছায়া মন্ত্রিসভায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে আমাদের দলে জেরেমি করবিনের নেতৃত্ব নিয়ে। তার নেতৃত্বে আগামী নির্বাচনে আমাদের বিজয়ী হওয়ার বিষয়ে কোনো আস্থা নেই। যদি জেরেমি নেতৃত্বে অনড় থাকেন তাহলে এমনই ঘটবে নির্বাচনে। দেশের এই সংকটময় সময়ে, ইইউ গণভোটের পরে অবশ্যই লেবার দলের নেতৃত্বকে হতে হবে শক্তিশালী ও কার্যকর, যে নেতৃত্ব জনসমর্থন আদায় করতে সামর্থ্য রাখে। যে নেতৃত্ব নিয়ে আমরা ব্রিটিশ জনগণের পাশে দাঁড়াতে পারবো। বিবিসি, স্কাই নিউজ ও রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লেবার পার্টির ৭ ছায়ামন্ত্রীর পদত্যাগ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ