বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কবলে শবে বরাত-৩
সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে : হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ
যে বা যারা সর্বশক্তিমান আল্লাহতায়ালার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে তারা বেদ্বীন ও কাফির। এ অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত হিসেবে অনন্তকাল তারা জাহান্নামে শাস্তি ভোগ করবে। কাজী আবু বকর বাকিল্লানী রহ. এ প্রসঙ্গে বলেন, কুফর হলো আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জতকে অস্বীকার করা। কখনো কখনো অস্বীকৃতি বা জহুদকে অজ্ঞতাও বলা হয়ে থাকে। সুতরাং কুফর এর অর্থ দাঁড়ায় আল্লাহপাক সম্পর্কে অজ্ঞতা, মূর্খতা এবং অজানা থাকা। (শারহুল মাকাসিদ : খ- ৩, পৃ. ৪৫৯)।
মহান আল্লাহপাক সর্ব প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি, অপূর্ণতা, দুর্বলতা ও মানবীয় বাধ্য-বাধকতা, যেমনÑ জন্মগ্রহণ করা, রোগাক্রান্ত হওয়া, সুস্থতা লাভ করা, শৈশব, যৌবন, নিদ্রা-তন্দ্রা, আটকে যাওয়া, ভুলে যাওয়া ইত্যাদি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। আল কোরআনে এ সংক্রান্ত নির্দেশাবলী সুস্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে।
যথা: (ক) ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহপাক ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সকল বস্তুর ধারক ও নিয়ন্ত্রক, তাকে তন্দ্রা বা নিদ্রা আচ্ছন্ন করতে পারে না। (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২৫৫)। (খ) ইরশাদ হয়েছে, তিনি কারও জনক বা সন্তান নন, কেউ তার সমকক্ষ নয়। (সূরা ইখলাস : আয়াত ৩-৪)। (গ) ইরশাদ হয়েছে, (তোমাদের বণ্টন অনুযায়ী) তোমরা কি নিজেদের জন্য নর, আল্লাহর জন্য নারী নির্ধারণ করেছ? এটা সর্বত্র পক্ষপাতমূলক বণ্টন। (সূরা নাজম : আয়াত ২১-২২)। (ঘ) ইরশাদ হয়েছে, তোমার মহাসম্মানীত প্রতিপালক ওই সকল বিষয় হতে পবিত্র যা তারা (কাফিরগণ) বর্ণনা করে। (সূরা সাফফাত : আয়াত ১৮০)। সুতরাং অবিশ্বাসী কাফিরদের অবিমৃষ্যকারিতার শাস্তি অবশ্যই তাদেরকে ভোগ করতে হবে। এতে কোনোই সন্দেহ নেই।
বস্তুত: আল্লাহপাকই সকল বস্তুকে অনস্তিত্ব হতে অস্তিত্ব দান করেছেন। তিনিই সকল বস্তুতে বিশেষ গুণ ও ক্রিয়া ক্ষমতা সৃষ্টি করেছেন। কোনো বস্তুই নিজস্ব গুণ বা শক্তিতে ক্রিয়াশীল, উপকারী বা অপকারী নয়। বরং প্রকৃত ক্রিয়াকারী আল্লাহপাক স্বয়ং। বস্তুর লাভ-ক্ষতি, উপকার-অপকার তারই কুদরতি হাতে নিহিত। এ প্রসঙ্গে আল কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, (ক) হে নবী, আপনি বলুন, আল্লাহই সকল বস্তুর স্রষ্টা। তিনি এক, একক, সর্বোচ্চ বিজয়ী। (সূরা রায়াদ : আয়াত ১৬)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে, আমি চতুষ্পদ প্রাণীর পেটে গোবর ও রক্তের মাঝ হতে বিশুদ্ধ দুধ সৃষ্টি করে তোমাদের পান করাই। (সূরা নাহল : আয়াত ৬৬)। (গ) ইরশাদ হয়েছে, আল্লাহ যদি তোমার অকল্যাণ সাধন করেন, তবে তিনি ব্যতীতি কেউ তা দূর করতে পারবে না। (সূরা ইউনুস : আয়াত ১০৭)।
মোট কথা, সৃষ্টিকূলের জীবন-মরণ, সুস্থতা-অসুস্থতা, মঙ্গল-অমঙ্গল সবকিছু তারই নিয়ন্ত্রণে। তিনি যতক্ষণ ইচ্ছা সৃষ্টিকে জীবিত রাখেন, যখন ইচ্ছা তাকে মৃত্যু দান করেন। অনুরূপভাবে যতদিন ইচ্ছা সৃষ্টিজগতকে ঠিক রাখবেন। যখন ইচ্ছা সবকিছু ধ্বংস করে কিয়ামত কায়েম করবেন। আল কোরআনে এ সকল বিষয়াবলীর বর্ণনা এভাবে সংস্থাপিত হয়েছে: (ক) ভালো করে জেনে রাখ, অবশ্যই তিনি সকল বস্তুর পরিবেষ্টনকারী। (সূরা ফুলসিরাত : আয়াত ৫৪)।
(খ) ইরশাদ হয়েছে, তিনিই হাসান, তিনিই কাঁদান, তিনিই মৃত্যু দান করেন, তিনিই জীবন দান করেন। (সূরা নাজম : আয়াত ৪৩-৪৪)। (গ) ইরশাদ হয়েছে, অতঃপর তিনি মৃত্যু মুখে ঠেলে দিবেন, তারপর কবর গর্তে স্থান দিবেন। অতঃপর যখন ইচ্ছা পুনরায় জীবিত করে উঠাবেন। (সূরা আবাসা : আয়াত ২১)।
আর যখন আল্লাহপাক পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন, তখন তার অবতরণ হয় আকার-আকৃতিবিহীন। কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে তিনি অবতরণ করবেন, তাও হবে রূপ-ধরণ বহির্ভূত। অর্থাৎ তার অবতরণের রূপ-ধরণ মানুষ ব্যাখ্যা করতে পারবে না। আল কোরআনে এই তথ্যটি এভাবে বিশ্লেষিত হয়েছে। (ক) ইরশাদ হয়েছে, তোমার প্রতিপালক আগমন করবেন। (সূরা ফাজর : আয়াত ২২)। (খ) ইরশাদ হয়েছে, তারা কি এ অপেক্ষায় রয়েছে যে, আল্লাহপাক তাদের নিকট আগমন করবেন? (সূরা বাকারাহ : আয়াত ২১০)।
(গ) হযরত আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন, আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা প্রতি রাত্রের শেষভাগে এক তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকতে পৃথিবীর নিকটতম আসমানে অবতরণ করেন। (সহীহ বুখারী : খ- ১, পৃ. ১৫৩)। একদা ইমাম আজম আবু হানীফা রহ. কে আল্লাহপাকের আসমানে অবতরণের বিষয়টি জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বললেন, অবশ্যই আল্লাহপাক অবতরণ করেন, কিন্তু তা ‘বেলা কাইফ’ অর্থাৎ অবতরণের অবস্থা কি এবং কেমন তা বলার উপায় নেই। (শরহে ফিরহে আকবার : পৃ. ৩৮)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।