Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নতুন ভোর হোক আলোয় উজ্জ্বল

মিজানুর রহমান তোতা | প্রকাশের সময় : ১ জানুয়ারি, ২০২০, ১২:০২ এএম

ইংরেজী ২০১৯ সালকে বিদায় জানিয়ে ২০২০ সালকে স্বাগত জানানোর দিন আজ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই সাড়ম্বরে ইংরেজী নববর্ষ উৎসব হয়। অফিস আদালতের কাজকর্ম, হিসাব নিকাশ, যাবতীয় কর্মকা-ের সুবিধায় বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে আমাদেরও ইংরেজী নববর্ষ হিসাবেই চলতে হয়। যদিও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি ঋতুবৈচিত্র্যের বাংলাদেশে বাঙালির নববর্ষ আসলে পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখে গ্রামে গ্রামে বৈশাখী পালাগান, পুঁথির প্রচলন এখনো কম হয় না। তাছাড়া গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্ত অড়াম্বরে হলেও উদযাপিত হয়। বাংলা নববর্ষের গুরুত্ব সম্পূর্ণই আলাদা ব্যতিক্রম। ইংরেজী নববর্ষ উৎসব হয় পহেলা জানুয়ারিতে। বাংলা নববর্ষ হোক আর ইংরেজী নববর্ষ হোক মানুষ আপনমনে ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় অতীত স্মৃতি ও আগামীদিনের সুন্দর পরিকল্পনা হাতড়ায়। মূলত পুরাতনকে ধুয়ে মুছে নতুন আঙিনা তৈরি করার দিনই নতুন বছর।
যাইহোক, বিদায়ী বছরের নানা স্মৃতি হাতড়ে আজ থেকে চলবে ভবিষ্যতের হিসাব-নিকাশ। নতুন বছরের ভোর আলোয় উজ্জ্বল হবে, সকলক্ষেত্রে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। সামাজিক বন্ধন হবে অটুট। কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া বছরটি সার্বিক বিষয়ে কেটেছে মোটামুটি। আমজনতার প্রত্যাশা পূরণের স্বার্থে দেশ ও জাতির উন্নয়ন হোক। কেন্দ্র থেকে মাঠপর্যন্ত রাজনৈতিক নেতা ও কর্মীদের মধ্যে যেন সহনশীলতা, সহমর্মিতা, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, শিষ্টাচার ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ অনুপস্থিতি না থাকে। রাজনৈতিক অস্থিরতা আসলে রাজনীতি সচেতন প্রতিটি মানুষকে দারুণভাবে ভাবিয়ে তোলে। সবক্ষেত্রেই সহনশীলতার বড় অভাববোধ হচ্ছে। এটি মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। তাই নববর্ষের দিনটি থেকে অতীতের সবকিছু মাড়িয়ে নতুন সূর্য, নতুন ভোর হোক আলোয় উজ্জ্বল-এই প্রত্যাশা আসলে সবার।
দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে বলতে দ্বিধা নেই পদ্মা সেতুসহ বিভিন্ন উন্নয়নের ক্ষেত্রে দেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তবে সবচেয়ে পিছিয়ে পড়ছে সামাজিক অবক্ষয়ের দিকটা। খুন, ধর্ষণ, হানাহানি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকা- কোনভাবেই শূন্যের কোঠায় আনা যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষ কোন ঝামেলামুক্ত জীবন চায়, চায় স্বস্তি ও শান্তিতে বসবাস করতে। মাদক আজকে যুবসমাজকে গ্রাস করছে। মাদকের টাকার জন্য যশোরে এক যুবক তার বৃদ্ধ পিতা-মাতাকে গলা কেটে হত্যা করেছে। মাদকের জন্য আরো লোমহর্ষক ঘটনা অতীতে ঘটেছে এখনো ঘটছেই একের পর এক। প্রতিবেশী দেশ থেকে ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ মাদকদ্রব্যের ভয়াল থাবায় আমাদের যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। অপরাধ কর্মকা- বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে মাদকদ্রব্য হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে যা অপরাধ বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে পত্র-পত্রিকার খবর প্রকাশ হয়। এসব বিষয় খুবই উদ্বেগের। আজকের এই দিনে মাদক, অপরাধ ও সন্ত্রাস শূন্যের কোঠায় নামবে, সব সম্ভাবনা কাজে লাগানো হবেÑ এই প্রত্যাশাও সবার।
কৃষির ক্ষেত্রে বিরাট উন্নয়ন হয়েছে এটি ধরে রাখার জন্য কৃষকদের সমস্যার সমাধান বিশেষ করে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা দরকার সর্বাগ্রে। কর্মবীর কৃষকরা আমাদের ১৭ কোটি মানুষের আহার যোগান দিচ্ছেন। অথচ তারা নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানসিক কষ্ট তাদের অনেক। কৃষিপণ্যের মূল্যপ্রাপ্তি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। তবুও প্রত্যাশা কৃষকদের সমস্যার সমাধান হবে, রোদ-বৃষ্টির মাঝে দিন-রাত পরিশ্রম করে উৎপাদিত কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্য পাবেন কৃষকরা সেই ব্যবস্থাপনা গড়ে উঠুক। আর একটি বিষয়, বহুদিন থেকেই গ্রামাঞ্চলের পীড়াদায়ক বিষয় এনজিওদের ঋণের জালে আটকেপড়া কৃষকদের বের করে আনা দরকার। তাছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীদের লাগাম টেনে ধরার জোরদার কোন ব্যবস্থাপনা ছিল না গেল বছর। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রোধের ব্যবস্থাও বছরের শেষদিকে ছিল একেবারেই ঢিলেঢালা। একইভাবে কৃষিপণ্যের উপযুক্ত মূল্যের ব্যবস্থা হয়নি। এতে কর্মবীর কৃষকরা মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে পারছেন না। নতুন বছরে এসবের অবসানে কার্যকরী ভূমিকা নেয়া হবে বলে আশাবদ। দেশের বিভিন্নস্থানে আরো অগণিত সমস্যা আছে যার ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আশা আমজনতার।
সবই যে নতুন বছরে প্রত্যাশা করলেই সমস্যার সমাধান হবে, তা নয়। তবুও স্মরণ করিয়ে দেয়া। আজকে দেশের সার্বিক জলবায়ুর অবস্থার কথা ভাবলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে অশনি সংকেত। নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদী ও জলাশয়গুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। মাটিরতলার পানি সম্পদ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বৃহত্তম সেচ প্রকল্প বরেন্দ্র, তিস্তা ও জিকে মারাত্মক হুমকির মুখে। ভূপৃষ্ঠের পানি সঙ্কটে ভূগর্ভস্থ পানির উপর চাপ পড়ছে। ভারত গঙ্গা, তিস্তা, গোমতি, ধলেশ্বর, ইছামতি, কোদলা ও বেতাইসহ প্রায় সব ক’টি অভিন্ন নদ-নদীর পানি নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বহুদিন ধরে। নদ-নদীর অসংখ্য শাখা-প্রশাখার উৎস অভিন্ন নদ-নদী। এতে ভাটি অঞ্চলের দেশ বাংলাদেশের জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। নদ-নদীতে মাইলের পর মাইল চর জেগেছে। পদ্মার শাখা নদ-নদীর অবস্থা খুবই করুণ। উর্বর জনপদ হুমকির মুখোমুখি। সবুজ ঘেরা প্রান্তর হচ্ছে বিবর্ণ। পানি বিশেষজ্ঞগণের বক্তব্য, ভারতের অভিন্ন নদ-নদীর পানি প্রতিবন্ধকতায় গড় উঞ্চতা উদ্বেগজনকহারে বৃদ্ধি পেয়ে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর ও পূর্বাঞ্চল এবং মধ্যভাগসহ গোটা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্যে নেমে আসছে জলবায়ু ও ভূ-প্রকৃতির পরিবর্তনের ভয়াবহ বিপদ।
পানি প্রতিবন্ধকতার সাথে কার্বন নিঃসরণে দ্রুত বদলে যাচ্ছে আবহাওয়া। ঘটছে ষড়ঋতুর পরিবর্তন। গড়পড়তা তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণে পরিবেশবিদগণ উদ্বিগ্ন। তাদের কথা, মারমুখী ও বিপজ্জনক হচ্ছে পরিবেশ। এতে, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে। সবারই কথা দেশ ও জাতি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও আমজনতার প্রত্যাশা পূরণের স্বার্থে রাজনৈতিক সহমর্মিতা ও স্থিতিশীলতার বিকল্প নেই। কৃষি, শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য সব ক্ষেত্রে বিরাট সম্ভাবনার দেশটিকে আরো কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায় সরকারের নীতি-নির্ধারকগণ বিশেষ দৃষ্টি দিবেন এই প্রত্যাশাও লাল সবুজের পতাকার দেশটিকে ভালোবাসার সব মানুষের।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উজ্জ্বল

১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
২২ অক্টোবর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ