পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
শেখ হাসিনা এক অনন্য রাজনীতিক। অপ্রতিদ্ব›িদ্ব এবং অপ্রতিরোধ্য নেতা। দেশের রাজনীতি তো বটেই; বিশ্বের রাজনীতিতেও তাঁর মতো রেকর্ডের নজীর খুঁজে পাওয়া দুস্কর। তিনি বাংলাদেশের চার বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে ৯ বার নির্বাচিত হন। এটা রেকর্ড। বিশ্বের কোনো দেশে কোনো নেত্রী চার বার প্রধানমন্ত্রী এবং ৯ বার দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এমন নজীর নেই। আকাশ ছোঁয়া জনপ্রিয় নেতা শেখ হাসিনা দেশ বিদেশে সমান জনপ্রিয়। উন্নয়নের মহাসড়কে দেশকে তুলে তিনি দেশকে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সন্মানিত করে তুলেছেন; আবার মিয়ানমারের নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে মাদার অব হিউম্যানিটি সন্মানে ভুষিত হয়েছেন। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথের সদস্য অনেক দেশে তার নাম ‘উদাহরণ’ হিসেবে আলোচিত হয়ে থাকে। প্রখর দূরদৃষ্টি এবং সুচিন্তিত সিদ্ধান্তই তাকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে। তাঁর বিভিন্ন চিন্তাশীল বক্তব্য-কথাবার্তা এখন বিশ্বের সেরা দার্শনিক, সমাজবিদ, ইতিহাসবিদ ও বিজ্ঞজনের ‘বাণীর’ মতোই উদ্বৃতি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। অথচ রাজনীতিতে আসা এবং দীর্ঘ চলার পথ মোটেই কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না। ১৯৭৫ সালের সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর খাদের কিনারে যাওয়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ’৮১ সালে এসে তিনি দলকে পূণর্জ্জীবিত করেন। এই ৩৮ বছরে তিনি আওয়ামী লীগকে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলে পরিণত করেন; পাশাপাশি জনগণের ভোটে ক্ষমতায় গিয়ে দেশের উন্নয়নে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেন।
এবারের আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবম বারের মত দলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। দলের তাঁর প্রতিদ্ব›িদ্ব দূরের কথা প্রতিপক্ষও নেই। ১৯৮১ সাল থেকে এ পর্যন্ত টানা ৩৮ বছর উপমহাদেশের প্রচীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্বিতীয় বারের মত দলের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন ওবায়দুল কাদের।
বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রবর্তনের পর আওয়ামী লীগ দ্বিখন্ডিত হয়। নানা মত নানা পথের নেতারা কেউ কারো নেতৃত্বে মানতে রাজী নন। অনেকেই দল ছেড়ে অন্য দলে গিয়ে মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন। কেউ কেউ রাজনীতি থেকে দূরে চলে যান। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের যখন বেহাল অবস্থা; তখন ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রæয়ারি অনুষ্ঠিত ১৩তম জাতীয় সম্মেলনে বিরোধ ঠেকাতেই শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ওই কাউন্সিলে শেখ হাসিনা সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৭৫’এ সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর দীর্ঘ ৬ বছর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বিদেশেই ছিলেন শেখ হাসিনা।
গতকাল সকাল ১০টায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে ২১তম সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন। পুরো অনুষ্ঠান শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিচালনা করেন এবং বিভিন্ন মনোমুগ্ধ কথা বার্তার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি প্রাণবন্ত করে রাখেন।
কাউন্সিল অধিবেশনের শেষ সময়ে কার্যনির্বাহি কমিটি বিলুপ্ত করে নির্বাচন কমিশনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নাম প্রস্তাব করতে বলেন কাউন্সিলরদের। এ সময় দলের সভাপতি হিসেবে শেখ হাসিনার নাম প্রস্তাব করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আবদুল মতিন খসরু। এতে সমর্থন দেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য পীযুষ কান্তি ভট্টাচার্য। পরে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন অন্য কাউন্সিলরদের তিনবার জিজ্ঞাসা করলে তারাও শেখ হাসিনার নাম বলেন। পরে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বায় শেখ হাসিনাকে দলের সভাপতি ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান।
এরপর সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন দলের সদ্য বিলুপ্ত ঘোষিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক। এতে সমর্থন দেন সদ্য বিলুপ্ত ঘোষিত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান। পরে নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ূন ফের অন্য কাউন্সিলরদের জিজ্ঞাসা করলে তারাও ওবায়দুল কাদেরের নামই বলেন। এতে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় ওবায়দুল কাদেরকে দলের সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান।
আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমি আওয়ামী লীগে আছি, এখানেই থাকবো। এটাই আমার পরিবার। ‘৭৫ সালে আমি মা-বাবা, ভাইবোন হারিয়ে বিশাল এক পরিবার পেয়েছি। সেটা হলো বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ পরিবার।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের দায়িত্বে আছি। ৩৯ বছর চলছে। আমি কোনও পদে থাকি বা না থাকি আওয়ামী লীগে আছি, এখানেই থাকবো। এটাই আমার পরিবার। আমার আপনজন যাদের রেখে গেছিলাম তাদের কাউকে পাইনি। তবে আমি পেয়েছিলাম বিশাল একটা পরিবার, সেটা হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মীদের ভালোবাসই আমার চলার পথের শক্তি। আমার অর্থ, সম্পদ নেই। নেতাকর্মীদের ভালোবাসাই আমার একমাত্র শক্তি। সেজন্য চেষ্টা করেছি সংগঠনকে গড়ে তুলতে। তবে সামনে আপনাদের ভাবতে হবে। আমার ৭৩ বছর বয়স হয়েছে। এটা ভুলে গেলে চলবে না। নতুন নেতা নিয়ে ভাবতে হবে। দলকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে।
দ্বিতীয়বার সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় ওবায়দুল কাদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, এবার আপনারা আমাদের দায়িত্ব দিয়েছেন নতুন পর্ষদ গঠনের। ওবায়দুল কাদের পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আর সভাপতি হিসেবে আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি আমার সাধারণ সম্পাদককে অভিনন্দন জানাই। আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে কাজ করছি। ছাত্রলীগ থেকেই আমাদের সবার যাত্রা শুরু। শেখ হাসিনা বলেন, যে গুরু দায়িত্ব আপনারা আমাকে দিয়েছেন তা যেন যথাযথভাবে পালন করতে পারি তার জন্য সবার দোয়া চাই, সমর্থন চাই। এই কাউন্সিল থেকেই সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সংসদ মনোনয়ন বোর্ড কাউন্সিল গঠন করে নিতে চাই।
৩৯ বছর ধরে সভাপতি : ১৯৮১ সাল থেকে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে আছেন। ৩৮ বছর পার হয়ে ৩৯ বছর ধরে তিনি এই দায়িত্ব পালন করছেন। ওবায়দুল কাদের ২০১৬ সাল থেকে দলের সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন।
১৯৮১ সালের ১৪ থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি ১৩তম জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। এতে শেখ হাসিনা সভাপতি ও আব্দুর রাজ্জাক সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর দেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। পরে ১৯৮২ সালে আব্দুর রাজ্জাক দলত্যাগ করলে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী।
১৯৮৭ সালের ১ থেকে ৩ জানুয়ারি ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের ১৪তম জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
এরপর ১৯৯২ সালের ১৯ থেকে ২০ সেপ্টেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে দলের ১৫তম জাতীয় সম্মেলনে কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ দুই বছর থেকে বাড়িয়ে তিন বছর মেয়াদী করা হয়। এতে শেখ হাসিনা সভাপতি ও জিল্লুর রহমান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৯৭ সালে ৬ থেকে ৭ মে আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ১৬তম জাতীয় সম্মেলন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুনঃনির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও জিল্লুর রহমান। ২০০২ সালে আওয়ামী লীগ যখন বিরোধীদলে তখন পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয় দলের ১৭তম জাতীয় সম্মেলন। এ সম্মেলনে সভাপতি শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন আব্দুল জলিল।
২০০৯ সালের ২৪ জুলাই ১৮তম জাতীয় সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০১২ সালে ২৯ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হয় দলটির ১৯তম জাতীয় সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পুননির্বাচিত হন শেখ হাসিনা ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর দুই দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।