Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোনাহ বর্জনে মেলে সুখী জীবন

মুনশি মুহাম্মদ উবাইদুল্লাহ | প্রকাশের সময় : ২০ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম

বিপর্যয়ে ঢাকা বিপুলা পৃথিবী। কোথাও সুখ নেই, শান্তি নেই। হাহাকারে ভরে উঠেছে গোটা পরিবেশ। শান্তি-স্বস্তির খোঁজে কাঁদছে বিশ্বমানবতা। বিপদাপদ, দুঃখ-দুর্দশায় বিষিয়ে উঠেছে জনজীবন। মুক্তিকামী মানুষের আর্তনাদ ভেসে আসছে দিকে দিকে। কারণ-অকারণ তবু খোঁজার নামগন্ধ নেই। অথচ এরশাদ হচ্ছে-‘জলে-স্থলে মানুষের কৃতকর্মের কারণেই বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহতায়ালা তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান।’ (সুরা রুম : ৪১)। মানুষ যখন গোনাহের কাজ পরিহার করে কিংবা গোনাহ করে তৎক্ষণাৎই আল্লাহর কাছে তওবা করে, তখন থেকেই ধীরে ধীরে তার জীবনের সব দুঃখ-দুর্দশা, অশান্তি-পেরেশানি দূর হতে থাকে; যাবতীয় আপদ থেকে সে মুক্তি পায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-সূত্রে বর্ণিত; রাসুল (সা.) এরশাদ করেন-‘মুহাজির ঐ ব্যক্তি, যে আল্লাহর নিষিদ্ধ বিষয় পরিহার করে।’ (সহিহ বোখারি : ১০; সহিহ মুসলিম : ৪০)।

হিজরতের দুটি দিক রয়েছে। একটি বাহ্যিক, অপরটি আত্মিক। বাহ্যিক দিকটি হলো- নিজ ঘরবাড়ি ছাড়া; আর আত্মিক বিষয় হলো- গোনাহ থেকে বেঁচে থাকা। সুতরাং যদি দীন হেফাজতের উদ্দেশ্যে ঘরবাড়ি ছাড়া আবশ্যক না হয়, এ অবস্থায় কেউ নিজের ঘরে থেকে গোনাহ থেকে বেঁচে থাকে, তাহলে আল্লাহর দরবারে তার নাম ‘মুহাজির’ হিসেবে লেখা হয়। অথচ কেউ ঘরবাড়ি ছাড়লো, কিন্তু গোনাহ বর্জন করলো না, তাহলে তার এ ঘরবাড়ি ছাড়া অনর্থক ও অহেতুক হবে। হাদিসটির ভাষায় গোনাহ ছাড়াকেই প্রকৃত ‘হিজরত’ বলে।
গোনাহ ছাড়লে রিজিকে প্রশস্ততা আসে এবং বরকত হয়। এরশাদ হচ্ছে-‘যদি তারা তাওরাত, ইঞ্জিল এবং যা প্রতিপালকের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, পুরোপুরি পালন করতো, তবে তারা ওপর থেকে এবং পায়ের নিচ থেকে খেতো। তাদের কিছু লোক সৎপথের অনুগামী আর অনেকেই মন্দ কাজ করে যাচ্ছে।’ (সুরা মায়িদা : ৬৬)। অন্যত্র এরশাদ হচ্ছে-‘আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ইমান আনতো এবং পরহেজগারি অবলম্বন করতো, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানি ও পার্থিব নেয়ামতসমূহ উন্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যাপ্রতিপন্ন করেছে; তাই তাদের কৃতকর্মের কারণে আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি।’ (সুরা আরাফ : ৯৬)। আয়াতদুটি দ্বারা বোঝা যায়- গোনাহের কারণে রাব্বুল আলামিন বিভিন্ন সম্প্রদায়কে ধ্বংস করেছেন। আর গোনাহের কারণেই তাদেরকে বঞ্চিত করেছেন তাঁর অপূর্ব নেয়ামতরাজি থেকে।
যুগে যুগে আমরা দেখতে পাই, পাপাচারের ফলে যতো শাস্তি এবং গজব নেমে এসেছে পৃথিবীর বুকে। এর বহু প্রমাণ রয়েছে কোরআনে কারিমে এবং হাদিস শরিফে। আল্লাহতায়ালার আনুগত্যের কারণে এক নগরবাসী ছিলো দারুণ সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে। অবশেষে যখন তারা তাঁর নাফরমানি আরম্ভ করলো, তখন সীমাহীন দারিদ্র ও দুঃখ-দুর্দশায় আক্রান্ত হলো। পবিত্র কোরআনে এর বর্ণনা এভাবে এসেছে-‘আল্লাহ একটি জনপদের দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন, যা নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত ছিলো। যেখানে প্রত্যেক জায়গা থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ আসতো। অতঃপর তারা আল্লাহর নেয়ামতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো, তখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কারণে ক্ষুধা ও ভয়ের স্বাদ আস্বাদন করালেন।’ (সুরা নাহল : ১১২)।
গোনাহের কারণে আল্লাহর শাস্তি নেমে আসার পাশাপাশি রাব্বে কারিম তার নেয়ামতরাজিও কমিয়ে দেন। কারুনকে তিনি দান করেছিলেন অঢেল ধনসম্পদ। কিন্তু সে তাঁর নাফরমানি করেছিলো। দম্ভ করেছিলো তার সম্পত্তির ওপর। ফলে তিনি তাকে ও তার প্রাসাদকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিলেন। এরশাদ হচ্ছে-‘তার পক্ষে আল্লাহ ছাড়া এমন কেউ ছিলো না, যে তাকে সাহায্য করতে পারে এবং সে নিজেও আত্মরক্ষা করতে পারলো না। গতকাল যারা তার মতো হওয়ার বাসনা প্রকাশ করেছিলো, তারা সকালে বলতে লাগলো- হায়, আল্লাহ তাঁর বান্দাদের মাঝে যার জন্য ইচ্ছে রিজিক বাড়ান এবং যার জন্য ইচ্ছে কমান। তিনি আমাদের প্রতি দয়া না করলে আমাদেরকেও ভূগর্ভে বিলীন করে দিতেন। হায়, কাফেররা সফলকাম হবে না।’ (সুরা কাসাস : ৮২)।
প্রত্যেক জাতির মাঝেই রাব্বুল আলামিন নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন। যেনো তাঁরা তাদের উম্মতকে আল্লাহর নাফরমানির ব্যাপারে সতর্ক করতে পারেন। আর তাঁরাও রাব্বুল আলামিনের সে গুরুদায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। হজরত হুদ (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে বলেছিলেন-‘হে আমার কওম! তোমাদের পালনকর্তার কাছে তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা করো, এরপর তাঁরই প্রতি মনোনিবেশ করো; তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর বৃষ্টিধারা প্রেরণ করবেন এবং তোমাদের শক্তির ওপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন; তোমরা কিন্তু অপরাধীদের মতো বিমুখ হয়ো না।’ (সুরা হুদ : ৫২)। হজরত নুহ (আ.) তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেন-‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো; তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজ¯্র বৃষ্টিধারা বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান স্থাপন করবেন এবং নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : ১০-১২)।
বিভিন্ন কালে গোনাহের কারণে বহু জাতি ধ্বংস হয়েছে। যেমন- সাবার অধিবাসীর জন্য তাদের বাসভূমিতে একটি নিদর্শন ছিলো দুটি উদ্যান; একটি ডানে, অপরটি বামে। তা তিনি ধ্বংস করে দিয়েছিলেন তাদের গোনাহের কারণে। এরশাদ হচ্ছে-‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার রিজিক খাও এবং স্বাস্থ্যসম্মত শহর এবং ক্ষমাশীল পালনকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। অতঃপর তারা অবাধ্যতা করলো। ফলে আমি তাদের ওপর প্রবল বন্যা প্রেরণ করলাম। এমন দুই উদ্যানে তাদের বাগানদুটি পরিবর্তন করে দিলাম, যাতে বিষাদ ফলমূল, ঝাউ এবং সামান্য কুলগাছ উদ্গত হয়। এটা ছিলো কুফরের কারণে তাদের প্রতি আমার শাস্তি। আমি অকৃতজ্ঞ ছাড়া কাউকে শাস্তি দিই না।’ (সুরা সাবা : ১৫-১৭)।
সুখশান্তি পেতে হলে তাই গোনাহ ছেড়ে আমাদের আল্লাহর প্রতি রুজু হওয়ার বিকল্প নেই। কারণ যে আল্লাহকে ভয় করে এবং গোনাহ বর্জন করে, আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ করে দেন এবং তাকে তার ধারণার চেয়েও বেশি জায়গা থেকে রিজিক দান করেন। এরশাদ হচ্ছে-‘যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য মুক্তির পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণার চেয়েও বেশি জায়গা থেকে রিজিক দেবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে তার জন্য তিনিই যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক : ২-৩)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ