মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
সংবিধান মূলতবি ও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পাকিস্তানে জরুরি অবস্থা জারির অভিযোগে সাবেক সেনাশাসক, অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল পারভেজ মোশারফকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে ইসলামাবাদের এক বিশেষ আদালত। পাকিস্তানের ইতিহাসে কোনও সেনাশাসককে বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহের অভিযোগে মৃত্যুদন্ড দেয়ার ঘটনা এই প্রথম।
বিশেষ আদালতের রায়ে পারভেজ মোশাররফ মৃত্যুদন্ড পাওয়ার পর মঙ্গলবার রাতে রাওয়ালপিন্ডিতে সেনাবাহিনীর জেনারেল হেডকোয়ার্টারে শীর্ষ কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। এর পরই প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিবৃতি দেন পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দফতরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আসিফ গফুর।
সেনাবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, একজন সাবেক সেনাপ্রধান, জয়েন্ট চিফ অব স্টাফ কমিটি চেয়ারম্যান এবং পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, যিনি ৪০ বছর দেশের সেবা করেছেন, দেশকে সুরক্ষা দিতে যুদ্ধে লড়েছেন, তিনি কোনোভাবেই দেশদ্রোহী হতে পারেন না। পাশাপাশি সেনাবাহিনী প্রশ্ন তুলেছে, বিশেষ আদালত গঠন, পারভেজ মোশাররফকে আত্মপক্ষ সমর্থনের অধিকার না দেয়া ও তাড়াহুড়ো করে মামলা শেষ করার।
এই রায় ঘোষণার পরেই মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। টুইটারে আসিফ গফুর স্পষ্ট ভাবে বলে দেন, ‘জেনারেল পারভেজ মুশারফের (অবসরপ্রাপ্ত) যে রায় বিশেষ আদালত দিয়েছে, তাতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তীব্র ব্যথিত এবংক্ষুব্ধ।’
তবে মোশারফ গত তিন বছর ধরে দুবাইয়ে। তা ছাড়া এই মৃত্যুদÐের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার রাস্তাও খোলা রয়েছে তার সামনে। শাস্তির কথা জানার পরই দুবাইয়ে হাসপাতালের শয্যা থেকে এক ভিডিও বার্তায় মোশারফ বলেন, ‘দশ বছর ধরে দেশের সেবা করেছি। দেশের হয়ে লড়াই করেছি। এই মামলায় আমার কথাটুকুও শোনা হল না। স্রেফ ষড়যন্ত্রের শিকার করা হল।’
স্বাধীনতা-পরবর্তী পাকিস্তানের ইতিহাস বলছে, সামরিক অভ্যুত্থান ও তার জেরে সংবিধান মূলতবি হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন নয়। কিন্তু তার জেরে কোনও প্রাক্তন সেনাশাসকের মৃত্যুদন্ড বেনজির। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরিয়ে ক্ষমতায় আসেন মোশারফ। কিন্তু যে অপরাধের কারণে তাকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হল, সেটি ২০০৭ সালের। সে বছর ৩ নভেম্বর নিজের প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ বাড়াতে সংবিধান মুলতুবি করে দেন মোশারফ, জরুরি অবস্থা জারি করেন পাকিস্তানে। গৃহবন্দি করা হয় শতাধিক বিচারককে। পেশোয়ার হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ওয়াকার আহমেদ সেঠের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ সেই মামলার চ‚ড়ান্ত শুনানির পর মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করে। তবে দুই বিচারক মৃত্যুদন্ডের পক্ষে রায় দেন, একজন বিপক্ষে।
স্বাস্থ্যের অবস্থা খারাপ হওয়ায় চলতি মাসেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে মোশারফকে। গত তিন বছর ধরেই অবশ্য চিকিৎসার জন্য দুবাইয়ে রয়েছেন তিনি। ‘প্রিয় মাতৃভ‚মিতে’ ফেরার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছিলেন বটে। কিন্তু নিরাপত্তার খাতিরে ও ভগ্নস্বাস্থ্যের জন্য আর ফেরা হয়নি। এই রায়ের পর সেই প্রত্যাবর্তন আদৌ হবে কি না, জল্পনা শুরু হয়েছে ইতিমধ্যেই। তবে সুপ্রিম কোর্টে তার আইনজীবীরা আবেদন করার পরও যদি এই শাস্তির হেরফের না হয়, সে ক্ষেত্রে একমাত্র পাক প্রেসিডেন্টের কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানাতে হবে মোশারফকে। অর্থাৎ আরও বেশ অনেকটা সময়।
অবশ্য এই রায় দিতেই ছয় বছর সময় লেগে গেল পাকিস্তানের আদালতের। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বাসঘাতকতা ও দেশদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছিল মোশারফের বিরুদ্ধে। তখন ফের ক্ষমতায় ফিরেছেন পিএমএল(এন) নেতা নওয়াজ শরিফ। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরের মধ্যে সরকারি তরফে ওই অভিযোগের সপক্ষে সমস্ত তথ্যপ্রমাণ জমা দেয়া হয়েছিল বিশেষ আদালতে। এর মধ্যে ২০১৬ সালে চিকিৎসার কারণে দুবাই চলে যান মোশারফ।
চলতি বছরের ১৯ নভেম্বর আদালত জানায়, ২৮ নভেম্বর ঘোষণা হবে রায়। কিন্তু তাতেও নতুন বাধা। পাকিস্তানের ক্ষমতাসীন তেহরিক-ই-ইনসাফ সরকারের পক্ষ থেকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের কাছে নতুন করে অনুরোধ জানানো হয়, যাতে বিশেষ আদালতকে ওই দিন রায়দান পিছিয়ে দিতে নির্দেশ দিতে দেয়া হয়। সরকারের পক্ষে আইনজীবীরা বিশেষ আদালতকে জানান, শুধু মোশারফ নন, ওই সময়ে তার সঙ্গে পুরো প্রক্রিয়ায় যুক্ত হিসেবে আরও তিন জন অর্থাৎ প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শওকত আজিজ, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি আবদুল হামিদ ডোগার ও প্রাক্তন আইনমন্ত্রী জাহিদ হামিদকেও সন্দেহভাজন হিসেবে তালিকাভুক্ত করতে। আদালত অবশ্য মামলার শেষ পর্যায়ে এই নতুন অন্তর্ভুক্তিতে রাজি হয়নি। মুশারফের আইনজীবীও তার মক্কেলের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ চান। কিন্তু আদালত রাজি হয়নি। সূত্র : গালফ নিউজ, টিওআই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।