পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দুর্নীতির সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত না করেই চার্জশিট দেয়া হয়েছে বিটিসিএলের ৫৭৫ কোটি টাকা আত্মসাত মামলার। কয়েক দফা তদন্ত করা হলেও দাখিল করা হয়েছে দায়সারা গোছের চার্জশিট। আদালত এই চার্জশিট গ্রহণ করলেও আসামিরা শেষ পর্যন্ত বেরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
আদালত এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের আগস্টে বিটিসিএলের ৫৭৫ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করে দুদক। তৎকালীন উপ-পরিচালক এস এম সাহিদুর রহমান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলায় বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স কোম্পানি লি:-এর (বিটিসিএল) সাবেক ৪ ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। মামলাগুলোতে অভিন্ন আসামিও রয়েছেন। এজাহারে দন্ডবিধির ৪০৯/৪৭৭(ক)/১০৯ সনের (২ নং) দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫ (২) ধারা প্রয়োগ করা হয়।
আসামিরা হলেন- তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক এস ও এম কলিম উল্ল্যা, সাবেক এমডি এস এম খাবিরুজ্জামান, সাবেক এমডি আবছার আলম, সাবেক এমডি ড. আবু সাঈদ খান, এরিকসন বাংলাদেশ লিমিটেডের কনটাক্ট ম্যানেজার আসিফ জাহিদ, রিলেশন ম্যানেজার নজরুল ইসলাম, প্রকৌশলী মাসরুরুল হাকিম, এডিই রোনেল চাকমা, মো: বদিউল আলম, ডিই মো: হাবিবুর রহমান প্রামাণিক, জিএম (ওটিআর) আনোয়ারুল মামুন, সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ তৌফিক, আজিজুল ইসলাম এবং বিভাগীয় প্রকৌশলী (আইটিএক্স) আনোয়ার হোসেন মাসুম।
এজাহারে বলা হয়, আইটিএক্স-৫ ও ৭-এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে অবৈধ ভিওআইপি কারবার চালানো হয়েছে। আইটিএক্স ৫-এর কল ডিভাইস সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হতো না এবং ডিভাইস অকার্যকর বা বিকল রেখে বিদেশ থেকে আসা কল বাইপাস করার বিষয়ে। আর আইটিএক্স ৭-এর সিডিআর সঠিকভাবে জেনারেট করা হয়নি। বিশেষ প্রতিক্রিয়ায় কল ডাটা মুছে ফেলা হয়েছে। পাশাপাশি এ দু’টি আইটিএক্স-এ বিদেশ থেকে আসা কলের ক্ষেত্রে অবৈধভাবে অতিরিক্ত একটি বি-টেবিল তৈরি করে এবং দু’টি আইটিএক্সের প্রতিটির জন্য দু’টি করে অবৈধ রুট চালু রেখে কল বাইপাস করা হয়েছে। ২০১১ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১২ সালের নভেম্বর পর্যন্ত সংঘটিত এ অপরাধে সরকারের ৫৭৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে। মামলাটি তদন্তের পর অধিকাংশ আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে কয়েকজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেন উপ-পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম।
আদালত চার্জশিটটি গ্রহণ করলেও একজন আসামির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কিছু নির্দেশনাসহ পুন: তদন্তে পাঠায় হাইকোর্ট। ্এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি নির্ধারণ, বেনিফিশিয়ারি এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দায়-দায়িত্ব নিরুপণের কথা বলা হয়। এ প্রেক্ষিতে পুন: তদন্তে দুদক বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কারিগরি মতামত চায়। বুয়েট দু’টি মামলায় মতামত প্রদানের বিনিময়ে ৪৮ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু কোন খাত থেকে বুয়েটের দাবিকৃত অর্থ পরিশোধ করা হবে- এ প্রশ্নে দেখা দেয় জটিলতা। পরে ওই অর্থ পরিশোধের সিদ্ধান্ত না পাওয়ায় বেনিফিশিয়ারি চিহ্নিত না করেই কয়েক মাস আগে অনেকটা গোপনেই চার্জশিট দেন উপ-পরিচালক জালালউদ্দিন আহমেদ।
বিটিসিএলের কডাইলে (বনানী) অবস্থিত আইটিএক্স-৫ ও আইটিএক্স-৭ (মহাখালী আন্তর্জাতিক এক্সচেঞ্জ নামে পরিচিত)-এর মাধ্যমে ৩টি ইন্টারকানেকশন এক্সচেঞ্জ হয়ে বিভিন্ন অপারেটরের কাছে বিদেশ থেকে পৌঁছানো সর্বমোট কল ছিল ৪৫২ কোটি ৬৮ লাখ ৫৬ হাজার ৯৩৩ দশমিক ১৬ মিনিট। এর মধ্যে বিটিসিএলের মাধ্যমে যাওয়া কল ছিল ২৬১ কোটি ৩১ লাখ ৪১ হাজার ৭০৫ দশমিক ০৮ মিনিট, গেটকো হয়ে যাওয়া কলের পরিমাণ ছিল ৮১ কোটি ৮৯ লাখ ২১ হাজার ৯৫৪ দশমিক ০৮ মিনিট এবং এম এন্ড এইচ হয়ে যাওয়া কল ছিল ১০৯ কোটি ৪৭ লাখ ৯৩ হাজার ২৭৪ দশমিক ০০ মিনিট। অথচ আইটিএক্স-৫ ও আইটিএক্স ৭-এ ঐ সময় কলের পরিমাণ দেখানো হয়েছে মাত্র ২৪০ কোটি ৮৪ লাখ ৯০ হাজার ৮৬৪ দশমিক ৮৮ মিনিট। অর্থাৎ ২১১ কোটি ৮৩ লাখ ৬৬ হাজার ৬৮ দশমিক ২৮ মিনিট কল কম দেখানো হয়েছে। যার মূল্য ৭ কোটি ৩ লাখ ৯১ হাজার ৭৭২ মার্কিন ডলার বা ৫৭৫ কোটি ৩৩ লাখ ৮২ হাজার ৯৭৫ দশমিক ৫১ টাকা।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিটিসিএলের বিভাগীয় তদন্ত প্রতিবেদন এবং সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য থেকে জানা যায়, আইটিএক্স-৫ ও ৭-এর মাধ্যমে ব্যাপকভাবে অবৈধ ভিওআইপি কারবার চালানো হয়েছে। প্রমাণ মিলেছে, আইটিএক্স ৫-এর কল ডিভাইস সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হতো না এবং ডিভাইস অকার্যকর বা বিকল রেখে বিদেশ থেকে আসা কল বাইপাস করার বিষয়ে। আর আইটিএক্স ৭-এর সিডিআর সঠিকভাবে জেনারেট করা হয়নি। বিশেষ প্রক্রিয়ায় কল ডাটা মুছে ফেলা হয়েছে।
পাশাপাশি এ দু’টি আইটিএক্স-এ বিদেশ থেকে আসা কলের ক্ষেত্রে অবৈধভাবে অতিরিক্ত একটি বি-টেবিল তৈরি করে এবং দু’টি আইটিএক্সের প্রতিটির জন্য দু’টি করে অবৈধ রুট চালু রেখে কল বাইপাস করা হয়েছে। বিটিসিএলের বিভাগীয় তদন্ত এবং বিটিআরসি ও মন্ত্রণালয়ের উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও এর প্রমাণ রয়েছে। মামলাটির শেষ পরিণতি জানতে চাওয়া হলে সর্বশেষ তদন্ত কর্মকর্তা দুদক উপ-পরিচালক জালালউদ্দিন আহমেদ বলেন, সঠিক দিন-তারিখ মনে নেই। ইতোমধ্যেই মামলাটির চার্জশিট দেয়া হয়েছে। সম্ভবত এটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে।
এদিকে এজাহারে উল্লেখিত দুর্নীতিতে কে সুবিধাভোগী সেটি চিহ্নিত করা না গেলে অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট বারের আইনজীবী মোহাম্মদ রেজাউল করিম। তিনি বলেন, এ মামলা থেকে দোষী ব্যক্তিরা সহজেই বেরিয়ে আসতে পারেন। চার্জশিটে ত্রুটি থাকলে বিচারে আরেক দফা সুবিধা নিতে পারেন আসামিরা। ফলে বৃহৎ এই দুর্নীতি মামলায় পার পেয়ে যেতে পারেন চিহ্নিত দুর্নীতিবাজরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।