মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত মহাসাগরে মধ্যে চীন-ভারত নৌ প্রতিদ্বন্দ্বিতার সাম্প্রতিক মনোযোগের কেন্দ্র হয়ে উঠছে আন্দামান সাগর। এ অঞ্চলের ব্যাপারে চীনের আগ্রহের বিষয়টি বেরিয়ে আসে চলতি মাসের শুরুর দিকে, যখন জানা যায় যে, সেপ্টেম্বর মাসে চীনের গবেষণা নৌযান শিয়ান ওয়ান ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপে বিশেষ অর্থনৈতিক জোনের কাছাকাছি উপকূলীয় জলসীমায় অনুপ্রবেশ করলে ভারতীয় নৌবাহিনী তাদেরকে বের করে দেয়। গত সপ্তাহে এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল কারামবির সিং বলেন যে, চীনের জাহাজ ভারতের জলসীমায় অনুমতি ছাড়াই চলাচল করছে।
গত এক দশকে ভারত মহাসাগরে চীনের উপস্থিতি নাটকীয়ভাবে বেড়ে গেছে। বেড়েছে তাদের অর্থনৈতিক ও সামরিক তৎপরতাও। বিংশ শতকের শেষের দিকে যেখানে ভারত মহাসাগরে চীনের কোন উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে, সেখানে বছরে এখন পিপলস লিবারেশান আর্মি নেভির ১০টি জাহাজ, সাবমেরিন, ও গবেষণা নৌযান কাজ করছে। ভারত মহাসাগরকে নয়া দিল্লী তাদের বাড়ির উঠোন মনে করে, এবং তাই এখানে চীনের নৌ তৎপরতা নিয়ে তারা উদ্বেগ প্রকাশ করে এসেছে। কিন্তু আন্দামান সাগরে এবং এর আশেপাশে অনুপ্রবেশ করাটা ভারতের জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগের।
আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ নয়াদিল্লীকে বিশেষ ভৌগলিক ও সামরিক সুবিধা দিচ্ছে। আন্দামান সাগর পূর্ব ভারত মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকে মালাক্কা প্রণালীর মাধ্যমে সংযুক্ত করেছে। আন্দামান অববাহিকার নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে থাকবে, মালাক্কা প্রণালীকে তারাই নিয়ন্ত্রণ করবে। এই দ্বীপপুঞ্জের কারণে ভারত বঙ্গোপসাগর ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়াতে নিজেদের সামরিক শক্তির প্রদর্শনীও করতে পারে; এই দ্বীপপুঞ্জকে নয়াদিল্লীর বিমানবাহী রণতরী বলা হয়, যেটা কখনও ডোবার আশঙ্কা নেই।
চীন-ভারত নৌ সংঘাতের ক্ষেত্রে এই দ্বীপপুঞ্জকে ভারতের প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন মনে করা হয়। আন্দামান অববাহিকায় দ্রুত নৌ বিজয় লাভ করলে ভারতীয় মহাসাগরের বাকি অংশে চীনের নৌ হুমকি উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে যাবে।
কিন্তু আন্দামান সাগরে ভারতের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য কোন উপায় অবশিষ্ট রাখছে না চীনা নৌবাহিনী। ২০১২ সাল থেকে চীনা নৌবাহিনী নিয়মিত এই এলাকায় সাবমেরিন টহল চালিয়ে আসছে। ভারতীয় নৌবাহিনীর সূত্র মতে, প্রতি তিন মাসে গড়ে তিন থেকে চারটি চীনা সাবমেরিন চলাচলের হদিস পাওয়া গেছে। এই জলসীমায় চীনা নৌবাহিনী তাদের বিশাল সাবমেরিন বহর ব্যবহার করে নজরদারি চালিয়ে থাকে। মালাক্কা প্রণালী নিয়ে বেইজিংয়ের যে সমস্যা রয়েছে, সেটা কাটিয়ে ওঠার অংশ হিসেবেই চীনা নৌবাহিনী আন্দামান সাগরের প্রতি এই আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই জলপথ দিয়ে চীনা বাণিজ্য জাহাজের বড় একটা অংশ যাতায়াত করে এবং বেইজিংয়ের আশঙ্কা রয়েছে যে, এমন পরিস্থিতি আসতে পারে যখন প্রতিপক্ষ শক্তিগুলো এই জলপথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তাছাড়া চীনের বেল্ট অ্যাণ্ড রোড ইনিশিয়েটিভের অধীনে এই জলসীমার ভূকৌশলগত গুরুত্ব অনেক বেড়ে গেছে।
অবকাঠামো পরিকল্পনার অধীনে আন্দামান সাগরের উপকূল বরাবর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক, সংযোগ ও উন্নয়ন প্রকল্পের সাথে যুক্ত চীন। চায়না-মিয়ানমার ইকোনমিক করিডোরের অধীনে কিয়াউকফিউ দ্বীপপুঞ্জে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করছে বেইজিং, যেটা আরাকান উপকূলের কাছে অবস্থিত। ইউনান প্রদেশ থেকে মান্দালে পর্যন্ত রেলওয়ে সড়কও নির্মাণ করছে তারা। আন্দামান সাগর এবং থাইল্যান্ড উপসাগরের মধ্যে ক্রা ক্যানেল নির্মাণের যে প্রস্তাবনা রয়েছে, সেটি নির্মিত হলে বঙ্গোপসাগরের ভূগোলই পাল্টে যাবে এবং চীনকে সোজা পূর্ব ভারত মহাসাগরের দোরগোড়ায় নিয়ে আসবে। এই প্রকল্পগুলো আন্দামান সাগরে চীনের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থকে নাটকীয়ভাবে বদলে দেবে।
চীনের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের প্রতি হুমকি মোকাবেলার জন্য চীনা নৌবাহিনী যে কৌশল গ্রহণ করেছে, সেটা হলো ‘সি ডিনায়াল’ – অর্থাৎ কোন সাগরের দখল না নিয়েও সেখানে শত্রুকে প্রবেশ করতে না দেয়া। ভৌগলিক অবস্থানের অসুবিধার কারণে দক্ষিণ চীন সাগরের মতো আন্দামান সাগরে নিজেদের শক্তির প্রদর্শনী করতে পারে না চীনা নৌবাহিনী। কিন্তু সাবমেরিনের মতো সি ডিনায়াল প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে চীনা নৌবাহিনীর পক্ষে এটা নিশ্চিত করা সম্ভব যাতে ভারত এই জলসীমায় একক কর্তৃত্ব করতে না পারে। সে কারণে চীনা নৌবাহিনী নিজেদের সাবমেরিনের বহরের উন্নয়নের জন্য যেটা করছে সেটা এমনি এমনি করছে না।
আন্দামান অববাহিকায় চীনের উপস্থিতি মোকাবেলার জন্য ভারতের কৌশল হলো আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বাড়ানো। চলতি বছরের শুরুর দিকে, নয়াদিল্লী ঘোষণা দেয় যে, দ্বীপপুঞ্জের সামরিক ও অর্থনৈতিক অবকাঠামোর উন্নয়নের জন্য সেখানে ভারত ৫০ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বিনিয়োগ করবে। ২০২২ নাগাদ, ভারত কমপক্ষে ৩২টি নৌ জাহাজ মোতায়েন করতে চায় সেখানে।
চীন-ভারত নৌ প্রতিযোগিতার মধ্যে, আন্দামান সাগর ধীরে ধীরে কিন্তু নিশ্চিতভাবে গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র হয়ে উঠছে। দুই পক্ষ এখন এক ধরনের ধ্রুপদী নিরাপত্তা সঙ্কটে ভুগছে, যেখানে এক পক্ষের নৌ শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া হিসেবে সক্ষমতা বাড়াচ্ছে ভিন্ন পক্ষ। এর অর্থ যদিও এটা নয় যে, দুই পক্ষের মধ্যে সঙ্ঘাত অনিবার্য, তবে এটা দেখা যাবে যে, আন্দামান সাগরের চারপাশের জলসীমায় দুই দেশের নৌবাহিনী আরও ঘন ঘন পরস্পরের মুখোমুখি হচ্ছে। সূত্র: এসএএম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।