Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফরিদপুরে পুলিশের সাথে পাল্টাপাল্টি গুলিতে ফাতেমা হত্যায় জড়িত ইয়াসিন নিহত

ফরিদপুর জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ১৬ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১১:০৯ এএম

আসামি ও পুলিশের সাথে পাল্টাপাল্টি গুলিতে ধর্ষন শেষে ফরিদপুরের চাঞ্চল্যকর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে হত্যার ঘটনায় জড়িত আসামি ইয়াসিন সেক নিহত, আহত তিন পুলিশ সদস্য।
গত রাত দুইটার সময় শহরের লঞ্চঘাট জোড়া ব্রিজের সামনে এ ঘটনা ঘটে। সে শহরের ওয়ারলেস পাড়ার মনি সেকের পুত্র। তার বিরুদ্ধে ৩ টি মামলা বিজ্ঞ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আসামীর ছবি সংগ্রহ করে আসামী ইয়াছিনকে চিহৃত করা হয়। এরপর জনগনের সহয়তায় তাকে আটক করা হয়। গতরাতে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে আসামী ও পুলিশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি গুলি বিনিময় হয়। আর এসময় নিহত হয় আসামী ইয়াছিন। আর এসময় আহত হয় তিন পুলিশ সদস্য।
পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসাপাতলে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে। পুলিশ লাশের ময়নাতদন্তের জন্য তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরন করেছে।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার ১৪ বছরের শহরের বহুল আলোচিত প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে বিকেল বেলা রাজেন্দ্র কলেজের মেলার মাঠ থেকে তুলে নিয়ে যায় ইয়াছিন নামে ওই ধর্ষক। পরের দিন পাশের টেলিগ্রাম অফিসের পাশ থেকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
গতকাল রাতে চাঞ্চল্যকর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ১৪ বছরের কিশোরী ফাতেমা নিখোঁজ হওয়ার ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে। রোববার রাত ৮টার দিকে জেলা পুলিশের অফিসিয়াল পেইজে ১১ সেকেন্ড ও ১৯ সেকেন্ডের দু’টি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। একইসাথে প্রকাশিত ওই ফুটেজে চিহ্নিত সন্দেহভাজন খুনির পরিচয় সনাক্ত করে দিতে পারলে ব্যক্তিগতভাবে তাকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেয় মামলার তদন্তদকারী কর্মকর্তা।
ডিস্ট্রিস্ট পুলিশ, ফরিদপুর নামের ফেসবুক পেইজে প্রকাশিত ওই সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা গেছে, শহরের রাজেন্দ্র কলেজের মাঠে অনুষ্ঠিতব্য ব্রান্ডিং মেলার মাঠ থেকে বাম হাত ধরে ফাতেমাকে মাঠের বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি।
প্রথম ফুটেজটি গত বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের। ১৯ সেকেন্ডের ওই ফুটেজে দেখা যায় সন্দেহভাজন ওই খুনি মেলার শিশু কর্ণারের দিকে একটি স্টলের পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে বাশের খুঁটির নিকট এসে উকিঝুঁকি দিচ্ছে। সেখানে তার গতিবিধিই ছিলো সন্দেহজনক।
এরপরের ১১ সেকেন্ডের আরেকটি ফুটেজে দেখা যায়, ফাতেমার হাত ধরে মেলার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে সন্দেহভাজন ওই খুনি। ফুটেজে সনাক্ত ওই সন্দেহভাজন খুনির বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছর। তার পরণে অফ হোয়াইট রঙের কালো স্টেপের ফুলহাতা জামা ও একটি ফেড করা জিন্স প্যান্ট। আর ফাতেমার পরণে ছিলো কমলা রঙের একটি পায়জামা ও পরিহিত। এই পায়জামাটি পুলিশ ফাতেমার লাশের সাথে জব্দ করে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার বিকেলে নিখোঁজ হন বাক ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমা বেগম (১৪)। এর পরেরদিন শুক্রবার সন্ধার একটু পর সাড়ে ৬টার দিকে রাজেন্দ্র কলেজের পাশে টেলিগ্রাম কার্যালয়ের চত্ত্বর থেকে ফাতেমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় ফাতেমার মুখ থেতলানো ছিলো। রক্ত জমাট বাঁধা। বিবস্ত্র ফাতেমার গলায় ফাঁস দেয়া ছিলো। ফাতেমাকে হত্যার আগে ধর্ষণ করা হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। এখনো ফাতেমার লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
ফাতেমার বাবার নাম এলাহি শরিফ। তিনি রিক্সা চালানোর পাশাপাশি সোনালী ব্যাংকের এটিএম বুথের গার্ড হিসেবে কাজ করেন। তিন মেয়ের মধ্যে ফাতেমা বড়। ফাতেমা জন্ম থেকেই বুদ্ধি প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক)। ওই কিশোরী বাবার সাথে শহরের রাজেন্দ্র কলেজ সংলগ্ন এলাকায় একটি ভাড়া বাড়িতে বসবাস করতো।
বুদ্ধি ও বাক প্রতিবন্ধী ফাতেমার এই নৃশংস হত্যাকান্ডের খবরে ফরিদপুরের জনমনে তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই খুনিদের যেকোন মূল্যে খুঁজে বের করার জোর দাবি উঠে।
এঘটনায় ফরিদপুর সুইড ফিরোজার রহমান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী ছাত্রী শিশু ফাতেমা হত্যার দৃষ্টান্তমুলক বিচারের বিক্ষোভ মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদান করে। রোববার দুপুরে নিহত ফাতেমার সহপাঠী, শিক্ষক ও অভিভাবকবৃৃন্দ স্কুল প্রাঙ্গণ থেকে মিছিল বের করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে স্মারকলিপি দেয়। ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার স্মারকলিপি গ্রহণ করে ফাতেমা হত্যার সাথে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টাস্তমুলক শাস্তি প্রদানের আশ্বাস দেন। এসময় ফরিদপুর সুইড ফিরোজার রহমান বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রধান শিক্ষক তানজিম আফরোজ, সহকারী শিক্ষক অহিদা রহমান, এএন হাসান ইমাম, নিহত ফাতেমার মা ববিতা বেগম, পিতা মোঃ ইলাহি শরিফ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জেলা প্রশাসক ফাতেমার পরিবারকে আর্থিকসহ সবধরনের সহযোগীতারও আশ্বাস দেন।
বিকেলে একই দাবিতে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে প্রগতিশীল সংগঠন সমুহের ব্যানারে। অধ্যাপক শিপ্রা রায়ের সভাপতিত্বে এসময় বক্তব্য দেন অধ্যাপক আব্দুল মোতালেব, দিলীপ রায়, সাংবাদিক রেজাউল করিম, এমদাদ মিয়া, বলাই পাল, আবরার নাদিম ইতু প্রমুখ।
এরপর গতরাতে পুলিশের সাথে বন্ধুকযুদ্ধে নিহত হলো ধর্ষন শেষে ফরিদপুরের চাঞ্চল্যকর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী কিশোরী ফাতেমাকে হত্যার ঘটনায় জড়িত আসামি ইয়াসিন সেক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্ষন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ