পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দেশের ৯২ শতাংশ আমদানি ও রফতানি বাণিজ্য চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হচ্ছে। গত ১৫ বছরের হিসাবে বার্ষিক গড়ে ৯ থেকে ১৪ ভাগ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে কন্টেইনারবাহী এবং খোলা সাধারণ পণ্যসামগ্রীর হ্যান্ডলিং কার্যক্রম। এ বছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ৩০ লাখ ইউনিট অতিক্রম করে যাবে। ক্রমবর্ধমান পণ্য পরিবহনের চাপ ও চাহিদার তুলনায় বন্দরের সক্ষমতা, অবকাঠামো সুবিধা খুবই সীমিত। আছে বন্দর নেভিগেশন চ্যানেলে নাব্যতার সমস্যা। এতে করে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম জাতীয় আমদানি-রফতানির চাপ সামাল দিতে গিয়েই হিমশিম অবস্থায় রয়েছে। বে-টার্মিনালসহ বন্দর অবকাঠামো বৃদ্ধির প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। কর্ণফুলী নদীর ওপারে বন্দর সম্প্রসারণের উদ্যোগ অনুপস্থিত।
তাছাড়া মীরসরাই বঙ্গবন্ধু শিল্পনগর, আনোয়ারা চায়না অর্থনৈতিক জোন, শংখ নদীর তীরে প্রস্তাবিত শিল্পাঞ্চল, মহেশখালীতে নির্মাণাধীন শিল্পাঞ্চলের যান্ত্রিক সরঞ্জামাদি এবং শিল্প-কারখানায় উৎপাদিত রফতানিমুখী মালামাল চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পরিবহন করতে হবে। এতে করে খুব শিগগিরই প্রবল চাপের মধ্যে পড়তে হবে বন্দর-শিপিং, পরিবহন ও রাজস্ব খাতগুলোকে। পণ্যসামগ্রী পরিবহনের বর্ধিত পরিমান দাঁড়াবে হাজার হাজার কন্টেইনার এবং লাখ লাখ মেট্রিক টন। যার পর্যাপ্ত প্রস্তুতি এখনও নেই। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে চলমান মেগাপ্রকল্পগুলোর জন্য সমুদ্রবন্দর প্রত্যাশিত সার্ভিস প্রদানে সক্ষম না হলে বিনিয়োগকারীদের কাছে ভুল সঙ্কেত যাবে।
এহেন নাজুক এবং সীমাবদ্ধতার মাঝেই বিনামাসুলে ভারতের মালামাল ভারতেই পরিবহনের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এতে দেশের আর্থিক লাভের খাতা থাকছে শূন্য। তাছাড়া বন্দর পরিবহন খাতের বিশেষজ্ঞগণ আশঙ্কা করছেন, ট্রানজিট ও করিডোরের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশটিকে কুলিগিরির সেবা দিতে গিয়েই ভেঙে পড়বে সীমিত অবকাঠামোর সড়ক-মহাসড়ক, রেলওয়ে ও নৌপথের সমগ্র পরিবহন ব্যবস্থা। কেননা পলি-বালি মাটির উপর গড়ে ওঠা ভাটির দেশ বাংলাদেশের সড়ক-মহাসড়ক অবকাঠামো তেমন টেকসই ও মজবুত নয়। ভারতীয় করিডোর সুবিধার আবদার পূরণের ক্ষেত্রে সড়ক-মহাসড়ক, সেতুসমূহ পণ্য বোঝাই ভারী যানবাহন (হেভি ভেহিক্যালস) চলাচলের মোটেই উপযোগী নয়। রেলওয়ে অবকাঠামো ভারতের মতো উন্নত ও মজবুত নয়। যার ফলে আর্থিক ও বৈষয়িক ক্ষয়ক্ষতি ঘটবে অপূরণীয়।
আগামী জানুয়ারি’২০২০ থেকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে ভারতে মালামাল পরিবহন করা হবে। এর মূল বৈশিষ্ট্যগত দিকই হচ্ছে ‘টু অ্যান্ড ফ্রম ইন্ডিয়া’। অর্থাৎ ভারত থেকে ভারতীয় মালামাল ভারতেই যাবে। মাঝখানে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর থাকবে ট্রানজিট, ট্রান্সশিপ কিংবা করিডোর পোর্ট। তাও আবার বিনামাসুলে। এরফলে ভারত উপভোগ করবে একমুখী পরিবহন ও বাণিজ্যের সুবিধা। যেখানে ভারতের সাথে দীর্ঘদিন চলমান একচেটিয়া ব্যবসা-বাণিজ্য বাংলাদেশের প্রতিকূলে অর্থাৎ কয়েকগুণ বেশি হারে ভারতের অনুকূলে রয়েছে, সেখানে সমুদ্রবন্দরের ট্রানজিটের মাধ্যমে ভারত পাচ্ছে একমুখী বাণিজ্য।
চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর দিয়ে ট্রানজিট সুবিধাসহ সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারের জন্য করিডোর সুবিধা আয়ত্তে নেয়ার পর দেশটির বিশেষত অনুন্নত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ৭টি রাজ্যে (দি সেভেন সিস্টার) এবং বন্দর-সুবিধাবিহীন (ল্যান্ড লক্ড) প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভূটানে বাংলাদেশের শতাধিক ধরনের পণ্যসামগ্রী, সেবাখাতের বিশাল যে রফতানি বাজার সম্ভাবনা রয়েছে তা চিরতরে অবসান ঘটবে।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মালামাল পরিবহনের জন্য ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার জানুয়ারি মাস থেকে ব্যবহার করতে যাচ্ছে। গত ৫ ডিসেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠকে এ সম্পর্কে জানানো হয়, পরীক্ষামূলক বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে ট্রানজিট চার্জ ও কাস্টম চার্জ প্রয়োগ করা হবে না। এ সময়ে কেবল প্রথাগত চার্জ প্রযোজ্য হবে। এ ব্যাপারে চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ভারত জানিয়ে দিয়েছে, তারা শুধু বন্দর ব্যবহারের ফি দিতে রাজি, সড়কের ফি দিতে রাজি নয়।
আসছে জানুয়ারিতে ‘পরীক্ষামূলকভাবে’ বন্দর ব্যবহারের কথা বলা হলেও বাস্তবটা ভিন্ন। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ভারতমুখী পণ্যের ট্রানজিট ব্যবস্থা চালু এমনকি সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষরের অনেক আগেই ‘পরীক্ষামূলক’ ব্যবস্থায় সর্বপ্রথম পণ্যসামগ্রী আনা-নেয়া শুরু হয় ২০১৫ সালের ২ জুন ‘এমভি ইরাবতী স্টার’ জাহাজ দিয়েই। জাহাজটি বন্দরের ১৩ নম্বর জেটিতে ভিড়ে এবং ভারতের তিনটি বন্দরগামী পণ্যভর্তি ৯২টি কন্টেইনার নামায়। ভারতের চেন্নাই, কোচিন ও নভোসেবা বন্দরে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশে কন্টেইনারগুলো চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পণ্য পরিবহনের এই ‘ট্রানজিট’ অথবা ‘করিডোর’ ব্যবস্থাকে তখন উভয় দেশের সরকারি মহল থেকে অভিহিত করা হয় ‘ট্রান্সশিপমেন্ট’ কিংবা ‘কানেকটিভিটি’ হিসেবে। ওই জাহাজে মালামাল খালাসের পর বিগত ৬ ও ৭ জুন ’১৫ইং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে ভারত কর্তৃক চট্টগ্রাম ও মংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের বিষয়ে সমঝোতা স্মারক এবং উপক‚লীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অবশেষে গত ৩ থেকে ৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়াদিল্লী সফরকালে ভারত কর্তৃক চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার সম্পর্কিত এসওপি (স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউর) সমেত পূর্ণাঙ্গ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।