পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের কাছে ভারত যখন যা পেতে আবদার করেছে, মুঠো ভরে তা-ই পেয়ে গেছে অবলীলায়। ভারতের আবদার-অভিলাষ পূরণের তালিকায় এ যাবৎ সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মনে করা হয় ‘কানেকটিভিটি’ কিংবা ’ট্রান্সশিপমেন্টে’র নামে ট্রানজিট ও করিডোর। বিনিময়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তি বা অর্জন কী? ট্রানজিট চুক্তির শিরোনামেই তা স্পষ্ট। ২০১৮ সালের ২৫ অক্টোবর দিল্লিতে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পাদিত এ চুক্তির প্রথমেই বলা হয়েছে: ‘এগ্রিমেন্ট অন দ্য ইউজ অব চট্টগ্রাম অ্যান্ড মোংলা পোর্ট ফর মুভমেন্ট অব গুডস টু অ্যান্ড ফরম ইন্ডিয়া’। চুক্তি অনুসারে ভারতের পণ্য ভারতেই যাচ্ছে। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে করিডোর সুবিধায়। যা একতরফা ট্রানজিট ও করিডোর ব্যবস্থা। তাতে বাংলাদেশের কোন পণ্য ভারতে রফতানি হচ্ছে না। ইতোমধ্যে করিডোর সুবিধায় ভারতের ট্রানজিট পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছে এ পর্যায়ে ট্রায়াল রান বা পরীক্ষামূলক ট্রানজিট কার্যক্রম চলছে। শিগগিরই চালু হবে পুরোদমে।
ভারতের কলকাতা বন্দর থেকে গত ৮ আগস্ট বাংলাদেশের জাহাজ ‘এমভি রিশাদ রায়হান’ যোগে ভারতের ট্রানজিট পণ্যের চালান আসে মোংলা বন্দর দিয়ে। যা এ বন্দরে আসা প্রথম চালান। এতে আনীত ১৬ দশমিক ৩৮০ মেট্রিক টন লোহার পাইপ সিলেটের তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয়ে পৌঁছে যায়। সাড়ে ৮ মে. টন প্লাস্টিকের কাঁচামাল কুমিল্লার বিবিরবাজার স্থল সীমান্ত দিয়ে সরাসরি ভারী ট্রাকযোগে আসামে নিয়ে যাওয়া হয় পরদিনই। ট্রানজিট চুক্তির পর ভারতের পণ্যবাহী প্রথম জাহাজ ‘এমভি সেঁজুতি’ বিগত ২১ জুলাই’ ২০২০ইং কলকাতার হলদিয়া বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়ে। ওই জাহাজে ৪টি কনটেইনারে আনীত টাটা স্টিলের টিএমটি বার (রড) এবং ডালের চালান আখাউড়া স্থলসীমান্ত দিয়ে ত্রিপুরার আগরতলা হয়ে পশ্চিম ত্রিপুরার জিরানিয়ায় ও আসামের করিমগঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ট্রনাজিট চুক্তির অনেক আগেই ‘পরীক্ষামূলক’ প্রথম ট্রানজিট পণ্য আনা-নেয়া হয় ২০১৫ সালের ২ জুন ‘এমভি ইরাবতী স্টার’ জাহাজে। চট্টগ্রাম বন্দর হয়ে ভারতের তিনটি বন্দরে পরিবহন করা হয় উক্ত জাহাজের কনটেইনারবাহী পণ্য।
অর্থনীতিবিদগণ বলছেন, ভারতকে একতরফা ট্রানজিট ও করিডোর সুবিধা দিয়ে প্রতি পদে পদে এর খেসারত দিতে হচ্ছে। ট্রানজিটের শুরুতেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ভাটির দেশ বাংলাদেশের ভূমি প্রধানত বালিমাটির। নরম মাটির ওপর তৈরি দেশের রাস্তাঘাট-সড়ক। এতে করে ট্রানজিটের ভারী ট্রাকবহরের চাপে সড়ক ভেঙেচুরে দেবে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক ভয়াবহ বন্যায় বিশেষ করে সিলেট, কুমিল্লা অঞ্চলের সড়ক, রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অনেক জায়গায় ভাঙাচোরা, জরাজীর্ণ সড়ক, রাস্তাঘাট দিয়ে ট্রানজিটের পণ্যবোঝাই ভারী ট্রাক-লরি চলাচল করতে গেলে সড়ক আরও বিধ্বস্ত ও অচল হয়ে যেতে পারে। আশুগঞ্জসহ নৌবন্দর, নৌ-রুটসমূহে, নৌপথে এবং চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দরে ড্রেজিং করে নৌপথ নাব্য রাখতে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয়। নৌপথে ট্রানজিট পণ্য পরিবহনের বাড়তি চাপে নাব্যতা বিপর্যস্ত হতে পারে।
ট্রানজিট-করিডোর প্রসঙ্গে প্রবীণ ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর মু. সিকান্দার খান ইনকিলাবকে বলেন, বন্ধুত্ব হতে হবে পরস্পরের চাওয়া-পাওয়া, দেয়া-নেয়ায় সমতার ভিত্তিতে। ওয়ান-টু-ওয়ান যাচাই হতে হবে। আমরা কী দিয়েছি তারা কী দিলো এর হিসাব প্রয়োজন। আখাউড়া, তামাবিল, কুমিল্লা দিয়ে ট্রানজিটের ট্রায়াল রানের পণ্য চালান যাচ্ছে। তবে রাস্তাঘাট-সড়ক ঠিকঠাক রাখতে হবে। তিনি বলেন, ট্রানজিটের ভারী যানবাহন গেলে তার চাপে সড়ক ভেঙেচুরে ও দেবে যাবে। আমাদের দেশে নরম মাটির ওপর রাস্তাঘাট-সড়ক তৈরি। এসব ভারী বাহন চলাচলের অনুমতি দেয়ার আগেই মাটি পরীক্ষা করতে হবে। কারিগরিভাবে মনিটরিং হতে হবে। যাতে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অর্থাৎ আমাদের সম্পদের ক্ষতিসাধন না হয়।
গত ৮ আগস্ট বিবিসি’র প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ শুধু ট্রানজিটের ‘পথ’ হয়েই থাকবে কি না সেই প্রশ্নও উঠেছে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ প্রফেসর এম এম আকাশ বলেন, মোংলা বন্দর থেকে ভারত যদি ট্রানজিট সুবিধা নেয়, বাংলাদেশকেও বাংলাবান্ধা দিয়ে নেপালে বা অন্য কোন জায়গা দিয়ে ভুটানে যাওয়ার ট্রানজিট সুবিধা ভারতকে দিতে হবে। এটা নিয়ে বাংলাদেশের বার্গেইন করা উচিৎ। যাতে এটা মাল্টিল্যাটারাল হয়। সেই সুযোগ বাংলাদেশের আছে। এমন না হলে দু’টি সার্বভৌম দেশের মধ্যে একটা সমতার সম্পর্ক হল না। বাংলাদেশের সাথে নেপালের সরাসরি সীমান্ত না থাকায় বাংলাদেশ বাংলাবান্ধা সীমান্ত থেকে ভারতের জলপাইগুড়ির ফুলবাড়ী হয়ে স্থলপথে নেপালের কাকরভিটা যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশ যথেষ্ট দরকষাকষি করেনি। এসব কারণে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যকার এ চুক্তিকে ‘অসম’ বলে মনে করেন অধ্যাপক আকাশ।
বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী করিডোর অচলপ্রায় : তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা হয়ে ভারতের ফুলবাড়ী-শিলিগুড়ি, নেপালের কাকরভিটা মিলিয়ে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও ভুটান সীমান্ত কাছাকাছি অবস্থিত। চীন সীমান্তও বেশি দূরে নয়। গুরুত্বপূর্ণ এই করিডোর ভৌগোলিকভাবে ‘চিকেন নেক’ হিসেবে পরিচিত। বাংলাবান্ধার বিপরীতে ভারতের ফুলবাড়ী। মাত্র ৭ কি.মি. দূরে শিলিগুড়ি। মাত্র ৩০ কি.মি. দূরত্বের মধ্যে নেপালের কাকরভিটা সীমান্ত। পরস্পর স্বল্প দূরত্বের এই করিডোরটি প্রায় অচল করে রেখেছে ভারত। এতে করে আন্তঃদেশীয় মিলনমেলায় সহযোগিতার দ্বার রুদ্ধ হয়ে আছে। বাংলাবান্ধা থেকে ‘চিকেন নেক’ সেই ফুলবাড়ী-শিলিগুড়ি করিডোরের দূরত্ব মাত্র ২২ কিলোমিটার। প্রস্থ ২১ থেকে স্থানভেদে ৪০ কি.মি.। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত ফুলবাড়ী চুক্তি সম্পাদিত হয়। এরফলে ভারতের ক্ষুদ্র এই করিডোর রুটের মাধ্যমে বাংলাদেশ-নেপাল-ভারতের পণ্য পরিবহন ও বাণিজ্যিক প্রবেশাধিকার লাভ করে।
অথচ দুই যুগ অতিবাহিত হলেও সেই চুক্তি কাজীর গরু কেতাবে আছে, বাস্তবে নেই। সেই সামান্য একটি করিডোর প্রায় অচল করে রাখায় চার-পাঁচটি দেশের আমদানি-রফতানি সম্ভাবনা অনিশ্চিত। নেপাল ও ভুটানের সাথে বাণিজ্য সচল রাখতে হলে পশ্চিমবঙ্গের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত কড়িডোরটি গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় বৃহত্তর বাংলা দুই ভাগ হলে শিলিগুড়ি চিকেন নেক করিডোর সৃষ্টি হয়। ২০০২ সালে ভারত, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ এ অঞ্চলে একটি মুক্ত বাণিজ্যাঞ্চল গঠনের প্রস্তাব গ্রহণ করে। এ অঞ্চলে অবাধে চার দেশের বাণিজ্যিক লেনদেনের অঙ্গীকার করা হয়। ভারতের অসহযোগিতার মুখে সম্ভাবনা ভেস্তে যাচ্ছে।
অন্যদিকে নিত্য ও ভোগ্যপণ্য, শিল্পপণ্য, আইটি, সেবাখাতে বাংলাদেশের উৎপাদিত শতাধিক ধরনের মানসম্পন্ন পণ্যের চাহিদা এবং বাজার সম্ভাবনাময় অঞ্চল উত্তর-পূর্ব ভারতের ‘দ্য সেভেন সিস্টার্স’ হিসেবে পরিচিত সাতটি রাজ্য। আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়, অরুণাচল, মিজোরাম, মনিপুর ও নাগাল্যান্ড ছাড়াও সিকিম, পশ্চিমবঙ্গ এমনকি তামিলনাডু-উড়িষ্যাসহ দেশটির অনেক অঞ্চল। ট্যারিফ নন-ট্যারিফ বাধায় বাংলাদেশের পণ্য প্রবেশে আগে থেকেই চলে আসছে অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা। ট্রানজিট-করিডোর ব্যবস্থায় ‘ভারতের পণ্য ভারতে’ পরিবহনের কারণে দেশের রফতানি সম্ভাবনা আটকে গেছে।
তেল-গ্যাস ট্রানজিট : সিলেট বিভাগের বন্যা বিধ্বস্ত সড়ক, মহাসড়ক ব্যবহার করে আসাম থেকে ত্রিপুরা, মণিপুর রাজ্যে ট্রানজিট-করিডোর ব্যবস্থায় জ্বালানি তেল ও এলপিজি গ্যাস পরিবহন করবে ভারত। উত্তর-পূর্ব ভারতে সাম্প্রতিক বন্যা ও ভূমিধসে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় ভারতকে এ সুবিধা দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, আপদকালীন সময় নভেম্বর মাস পর্যন্ত বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে ভারতকে জ্বালানি ট্রানজিট সুবিধা দেয়া হবে। কিলোমিটারে প্রতি টন জ্বালানি পরিবহনের জন্য ভারতীয় গাড়ি এক টাকা ৮৫ পয়সা টোল দেবে।
চট্টগ্রাম, আশুগঞ্জ বন্দর থেকে ট্রানজিট জ্বালানি পণ্য নিয়ে আসাম, ত্রিপুরাগামী ট্রাককে একই হারে টোল দিতে হয়। মেঘালয়ের ডাউকি থেকে সিলেটের তামাবিল হয়ে ঢুকবে জ্বালানি তেল, এলপিজিবাহী গাড়ি। সিলেট থেকে মৌলভীবাজারের শমশেরনগর থেকে চাতলাপুর চেকপোস্ট হয়ে ত্রিপুরার কৈলাশহরে যাবে। জ্বালানি পরিবহন শেষে একই পথে ভারতে ফিরে যাবে। বন্যায় রেলপথ বিধ্বস্ত হওয়ায় গোয়াহাটি থেকে মেঘালয় ঘুরে ত্রিপুরা, মনিপুর, মিজোরামে জ্বালানি পাঠানো হবে। এ অবস্থায় দেশের বন্যাবিধ্বস্ত জরাজীর্ণ সড়কে অত্যধিক চাপ পড়বে। #
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।