পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা, ধর্ষণ, ও গণহত্যার অভিযোগে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতে (আইসিজে) দায়েরকৃত মামলায় তিনদিনের শুনানির দ্বিতীয় দিনে বক্তব্য উপস্থাপন করেন ডি-ফ্যাক্টো নেত্রী অং সান সু চি। শান্তিতে নোবেলজয়ী এই নেত্রী গতকাল বুধবার নেদারল্যান্ডসের রাজধানী দ্য হেগের আদালতে জঘন্য মিথ্যাচার করে বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে রাখাইনের অসম্পূর্ণ এবং বিভ্রান্তিকর চিত্র উপস্থাপন করেছে গাম্বিয়া। এখানে শুধু অনুমানের ওপর ভিত্তি করে গণহত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে; যা হতে পারে না।
সামরিক বাহিনীর অভিযানে রক্তপাত হলেও গণহত্যার মতো কিছু হয়নি।’ গতকাল শুনানির দ্বিতীয় দিনে প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্যে রাখেন সু চি। শুরুতে তিনি আন্তর্জাতিক আইন ও সনদসমূহের বাধ্যবাধকতার বিষয়ে কথা বলেন। রাখাইনে ২০১৭ সালের রক্তাক্ত নৃশংসতাকে ‘আভ্যন্তরীণ সংঘাত’ আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে চালানো মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ক্লিয়ারেন্স অপারেশনকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল শুধু সন্ত্রাস ও বিচ্ছিন্নতাবাদ মোকাবেলা।’ তিনি বলেন, ‘ক্লিয়ারেন্স অভিযান পরিচালনার সময় কখনও কখনও অননুমোদিত শক্তি প্রয়োগ করে থাকতে পারে সেনাবাহিনী।’ সু চি দাবি করেন, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইনের পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল এবং এটি বাইরে থেকে অনুধাবন করা সম্ভব নয়। জটিলতার কারণেই রোহিঙ্গারা সেখানে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। যে জন্য অনেকে নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশে পালিয়েছে। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের বাধ্যতামূলক দেশ ত্যাগের অভিযোগটি মানবতাবিরোধী অপরাধ হলেও গণহত্যা হতে পারে না।’
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টার দাবি, সেনা সদস্যরা যুদ্ধাপরাধ করে থাকলে তা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্পত্তি হবে। এ বিষয়টিকে আন্তর্জাতিকীকরণের সুযোগ নেই। ১৯৪৮ সালের গণহত্যা সনদ এখানে প্রযোজ্য নয়। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের এ মামলার বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয় উল্লেখ সু চি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে যখন তার দেশ (মিয়ানমার) বিচার করতে কিংবা ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হবে শুধু তখনই আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এর বিচার করতে পারবে। তার দেশে তো এখন বিচার চলছে।’ আদালতে তিনি বলেন, ‘আমরা আদালতের কাছে আর্জি জানাই তারা যেন এমন কোনো পদক্ষেপ নেয়া থেকে বিরত থাকে, যা রাখাইনের বর্তমান সহিংস পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করে তোলে।’
মিয়ানমারে গণহত্যার উদ্দেশে অভিযান পরিচালনার অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে দাবি করে সু চি বলেন, ‘রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘন কোনোভাবেই মেনে নেবে না আমাদের সরকার। যখন দেশের বিচার ব্যবস্থা ব্যর্থ হবে, শুধু তখনই আন্তর্জাতিক বিচার আদালত এর বিচার করতে পারবে।’ তিনি বলেন, ‘যেসব সেনার বিরুদ্ধে এ অভিযোগ প্রমাণিত হবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। যদি মিয়ানমার সামরিক বাহিনী এমন কোনো কাজ করে; যেখানে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে। তাহলে দেশের সংবিধান অনুযায়ী তাদের বিচার হবে।’
সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গেয়ে সু চি বলেন, ‘স্থানীয় সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার জবাবে সেনাবাহিনী অভিযান চালিয়েছে। মিয়ানমারের এ মামলায় গণহত্যার অভিপ্রায় শুধু অনুমাননির্ভর হতে পারে না।’ তিনি বলেন, ‘রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন গণহত্যার উদ্দেশ্য কী হতে পারে; যা অন্যায় কাজ করার দায়ে অভিযুক্ত সৈনিক ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে তদন্ত, বিচার ও শাস্তি দেয়? যদিও এখানে সবার মনোযোগ সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ওপর তারপরও আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি যে, যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বেসামরিক অপরাধীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
এ সময় অং সান সু চি রাখাইনের সহিংস পরিস্থিতির জন্য সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকে দায়ী করেন। তিনি আরাকানে মুসলমানদের ইতিহাস বর্ণনা করে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোকে সংঘাতের ফল হিসাবে অভিহিত করেন। কয়েকশত মৃত্যুর ঘটনা ঘটে থাকতে পারে স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ তদন্ত ও বিচার ব্যবস্থা কাজ করছে।’
এর আগে গত মঙ্গলবার শুনানির প্রথম দিন যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী পল এস রাইখলার আদালতের কেন অন্তর্র্বতী পদক্ষেপের নির্দেশনা দেয়া উচিত, সে বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরেন। রাখাইনে গণহত্যা, ধর্ষণ ও মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়ে তাদের বিতাড়িত করা নিয়ে তিনি জাতিসংঘের বিভিন্ন তদন্ত ও প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে বলেন, বসনিয়ার ক্ষেত্রে যতটুকু তথ্যের ভিত্তিতে আদালত অন্তর্র্বতী নির্দেশনা দিয়েছেন, মিয়ানমারের অবস্থা তার চেয়েও খারাপ।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রক্তাক্ত এক সামরিক অভিযান চালিয়ে ৭ লাখ ৪০ হাজারের বেশি মানুষকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। রক্তাক্ত এই অভিযানে ধর্ষণ, গণধর্ষণ, হত্যা, জ্বালাও-পোড়াও চালানো হয়। প্রাণে বাঁচতে সেই সময় রোহিঙ্গাদের ঢল নামে প্রতিবেশী বাংলাদেশে।
এর প্রতিবাদে পশ্চিম আফ্রিকার মুসলিম দেশ গাম্বিয়া ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্যদের উৎসাহে গণহত্যার দায়ে মামলা করে মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক আদালতে তোলে। মঙ্গলবার প্রথম দফায় মিয়ানমারের বিরুদ্ধে হেগের এ আদালতে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে টানা আন্দোলন করে বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছিলেন সু চি; কিন্তু এখন সেই সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়েই গণহত্যার দায় এড়াতে আন্তর্জাতিক বিচারিক আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিশ্বজুড়ে নিন্দিত হচ্ছেন তিনি। সূত্র : রয়টার্স, সিএনএন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।