পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মিয়ানমারের আরাকানে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর মিয়ানমার সরকারের গণহত্যা মামলার শুনানি আজ নেদারল্যান্ডসের হেগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস আইজেসিতে শুরু হচ্ছে। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যার অভিযোগে আইসিজেতে গাম্বিয়া এ মামলা দায়ের করে। শুনানি চলবে আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি নিজ দেশের সেনাবাহিনীর পক্ষে সাফাই গাইতে হেগে গেছেন। শুনানি পর্যবেক্ষণে বাংলাদেশ থেকে ২০ জনের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নিচ্ছে। প্রতিনিধিদলে সরকারি কর্মকর্তা ছাড়াও থাকবেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি ও কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া তিনজন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ। প্রতিনিধিদলের সদস্যরা রোববার ও সোমবার দুই ভাগে ভাগ হয়ে নেদারল্যান্ডসে যাত্রা করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মূলত শুনানি পর্যবেক্ষণ করতেই সেখানে উপস্থিত থাকবেন তারা।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহ্রিয়ার আলম বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে বসে নেই। আন্তর্জাতিকভাবে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। নেদারল্যান্ডসে আমাদের লোকজন আছে। তারা শুনানি দেখবে এবং জানার পর আমরা সিদ্ধান্ত নেব। জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে শুনানি হবে। আর মিয়ানমার সবসময় মিথ্যাচার করছে। সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করছি।
আইসিজের ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নেদারল্যান্ডসের পিস প্যালেসে অবস্থিত আইসিজেতে আজ গাম্বিয়ার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যার মামলার শুনানি শুরু হবে। আগামীকাল বক্তব্য উপস্থাপন করবে মিয়ানমার। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে গাম্বিয়া পাল্টা যুক্তি দেবে মিয়ানমারের বিপক্ষে। আর দুপুরে মিয়ানমার গাম্বিয়ার জবাব দেবে। আইসিজেতে মিয়ানমারের পক্ষে বক্তব্য দেবেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চি। সব মিলিয়ে শুনানি চলবে তিন দিন।
এর আগে গত ১১ নভেম্বর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলাটি করে। গাম্বিয়াও গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ।
কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের একটি প্রতিনিধিদল শুনানি পর্যবেক্ষণে অংশ নিচ্ছে। সেখানে ইউরোপসহ বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে রোহিঙ্গাদের অন্য দলও যাবে। তারা আদালতের বাইরে রাখাইনের নৃশংসতার বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হবে।
২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর পূর্বপরিকল্পিত ও কাঠামোগত সহিংসতা জোরদার করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। হত্যাকান্ড, সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ঘরবাড়িতে অগ্নিসংযোগের বাস্তবতায় জীবন বাঁচাতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। এই নৃশংসতাকে ‘গণহত্যা’ আখ্যা দিয়ে গত ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস (আইসিজে)-এ মামলা করে গাম্বিয়া।
রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী যে বর্বরতা চালিয়েছে, তার মাধ্যমে জাতিসংঘের প্রস্তাবনা লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। হেগের আদালতে অভিযোগকারীদের একা মোকাবেলা করবেন না সু চি। মিয়ানমার এরই মধ্যে গাম্বিয়ার অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য তারা ‘বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক আইনজ্ঞ’ নিয়োগ দিয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে একজন অ্যাসোসিয়েট লিগ্যাল অফিসারের দায়িত্ব পালন করা মাইকেল বেকার মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধিদলের অংশ হিসেবে হেগে গেছেন। আইসিজের বিচারকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছিলেন মাইকেল বেকার। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের হাজিরা দিতে যাওয়া ইতিবাচক পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। মিয়ানমার হেগে কী আইনি কৌশল গ্রহণ করবে সে ব্যাপারে না জানালেও এটা পরিষ্কার যে, সু চি আর মিয়ানমারের আইনজীবীদের ব্যাপকভাবে তথ্য-প্রমাণ নির্ভর বহুল আলোচিত গণহত্যা, গণধর্ষণ এবং রোহিঙ্গা গ্রামগুলোতে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর অভিযোগ চ্যালেঞ্জ করতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে।
তথ্যপ্রমাণের মধ্যে রয়েছে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ৪৪৪ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন। জাতিসংঘের ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং মিশন তাদের এই প্রতিবেদনে বলেছে যে, রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা চালানোর প্রমাণ রয়েছে, যেগুলোর জন্য মানবতাবিরোধী অপরাধ, যুদ্ধাপরাধ এবং গণহত্যার দায়ে বিচার করা উচিত। রিপোর্টে শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের পাশাপাশি বেসামরিক কর্তৃপক্ষকেও তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মুখোমুখি করার কথা বলা হয় যারা ‘মিথ্যা ভাষ্য ছড়িয়েছে, [নিরাপত্তা বাহিনীর] অপকর্মকে অস্বীকার করেছে, স্বাধীন তদন্তে বাধা দিয়েছে এবং তথ্যপ্রমাণাদি নষ্ট করেছে’।
সু চি আর তার আইনি টিমকে তথ্যপ্রমাণ দিয়ে এটাও প্রমাণ করতে হবে যে, মিয়ানমার সরকার আর নিরাপত্তা বাহিনী উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনের সঙ্ঘটিত বর্বরতা ঢাকতে সচেতন চেষ্টা চালায়নি। গত দুই বছরে স্যাটেলাইট ছবি থেকে দেখা গেছে যে, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সাবেক গ্রামগুলো বুলডোজার দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হয়েছে, যেটাকে সঙ্ঘাত-পরবর্তী তথ্যপ্রমাণ নষ্টের একটা নির্লজ্জ প্রচেষ্টা বলে মনে হয়েছে। এ গ্রামগুলোতে নিরাপত্তা বাহিনীর ফ্যাসিলিটি নির্মাণ করা হয়েছে এবং প্রধানত বৌদ্ধ অধিবাসীদের জন্য শত শত নতুন ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।
হেগে মিয়ানমার সরকার আর তাদের প্রতিনিধিদের জন্য খারাপ খবর হলো হেগে আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার যে অভিযোগের মোকাবেলা তাদের করতে হবে, সেটা তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা একটি অভিযোগ মাত্র। ১৩ নভেম্বর রোহিঙ্গা আর ল্যাটিন আমেরিকান মানবাধিকার সংগঠনগুলো আর্জেন্টিনার একটি আদালতে একটি মামলা করেছে মিয়ানমার সরকার আর সামরিক বাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। যে আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে এই মামলা করা হয়েছে, সে অনুযায়ী মারাত্মক আন্তর্জাতিক অপরাধের সাথে জড়িত, গ্রেফতারকৃত, শাস্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে তার নিজ দেশের বাইরে অন্য যে কোনো দেশে গ্রেফতার করা হতে পারে।
ঠিক পরদিনই ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট (আইসিসি) ঘোষণা দিয়েছে যে, ২০১৭ সালে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপরাধ সঙ্ঘটনের দায়ে মিয়ানমার সরকারের বিরুদ্ধে তদন্তের অনুমোদন দিয়েছে তারা। আদালত বলেছে যে, ‘ব্যাপকমাত্রায় সহিংস কর্মকান্ড চালানো হয়েছে যেগুলো মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে’।
এর আগে আইসিসির তদন্তের চেষ্টা জটিলতা ধারণ করেছিল। কারণ যে রোম ঘোষণার মধ্য দিয়ে আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়, সেখানে স্বাক্ষর করেনি মিয়ানমার। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাবনার মাধ্যমে আইসিসি’র তদন্তের যে চেষ্টা করা হয়েছিল রাশিয়া আর চীনের বিরোধিতার কারণে সেটা বাস্তবায়িত হতে পারেনি।
শামসুল হক শারেক, কক্সবাজার থেকে জানান, বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মিয়ানমারের গণহত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে বলে আশা করেন রোহিঙ্গারা। তবে তাদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তারা বিশ্ব সম্প্রদায়ের চাপে মিয়ানমার বিচারের মুখোমুখি হওয়ায় তারা যেমন খুশি, অন্যদিকে মিয়ানমারের কিছু হিন্দুকে মুসলমান সাজিয়ে হেগের আদালতে নিয়ে গিয়ে মিয়ানমারের পক্ষে দাঁড় করানোর প্রস্তুতি চলছে বলে জেনে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিষয়টি প্রমাণিত হবে কি না তা নিয়ে রোহিঙ্গারা উদ্বিগ্ন। এসব হিন্দু মুসলমান সেজে কিভাবে আদালতকে বিভ্রান্ত করবে তার মহড়াও নাকি ইতোমধ্যে করা হয়েছে মিয়ানমারে। রোহিঙ্গাদের অনেকেই বলছেন, মিয়ানমারের এ ধরনের ক‚টকৌশলে বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মিয়ানমার বয়কটের ডাক
মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি যখন সর্বোচ্চ আদালতে গেছেন; ঠিক তখন ‘মিয়ানমার বয়কট’-এর ডাক দিয়েছে ১০টি দেশের ৩০টি সংগঠন। নেপিদোর ওপর চাপ জোরালো করতেই এমন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সু চি যখন হেগে অবস্থান করছেন, তখন জার্মানভিত্তিক ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনস নামের প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘বয়কট মিয়ানমার ক্যাম্পেইন’ শুরু করা হয়েছে। সংগঠনটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণহত্যা মামলার শুনানিকে সামনে রেখে ৩০টি মানবাধিকার, শিক্ষাবিদ এবং পেশাদারদের সংগঠন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ক‚টনৈতিক ও রাজনৈতিক চাপ বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ফরসি ডটকো, রেস্টলেস বিংস, ডেস্টিনেশন জাস্টিস, রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক অব কানাডা, রোহিঙ্গা হিউম্যান রাইটস ইনিশিয়েটিভ অব ইন্ডিয়া ও এশিয়া সেন্টারের মতো সংগঠনগুলো।
কর্মসূচি নিয়ে বয়কট রোহিঙ্গা ডটঅর্গ তাদের ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ‘২০১৯ সালের ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসে এসব সংগঠন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে মিয়ানমারকে বর্জনের আহ্বান সম্বলিত প্রচারণা শুরু করেছে।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের অক্টোবর থেকে সেনাবাহিনী ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নৃশংসতা, গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এর পক্ষে প্রত্যক্ষ ও নথিভুক্ত প্রমাণ রয়েছে। সারাবিশ্ব এর নিন্দা জানালেও হতাশার কথা, এ অভিযোগগুলো প্রত্যাখ্যান করছেন শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি।
ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা নাই সান লুইন বয়কট কর্মসূচি প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন স্পষ্ট করেছে যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জাতিকে নির্মূল করে দেয়ার একটি নীতি গ্রহণ করা হয়েছে। রোহিঙ্গা অধিকারকর্মী হিসেবে আমরা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অধীনে ১৫ বছর গৃহবন্দি থাকা অং সান সুচির মুক্তির আন্দোলন করে এসেছি। তবে তিনি সেই অবস্থা থেকে মুক্তি পাওয়ার পর শুধু খুনি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে চলছেন। তাই আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে প্রাতিষ্ঠানিক ও আনুষ্ঠানিক সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে সবার প্রতি আহ্বান জানাই।’ সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আইসিজে ওয়েবসাইট ও কক্সবাজার প্রতিনিধি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।