নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
নেপাল সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসের আরচ্যারি ডিসিপ্লিনে অপ্রতিরোদ্ধ বাংলাদেশ। নারী ক্রিকেটেও সেরা সালমা খাতুনরা। গতকাল পোখরায় যেন বসেছিল লাল-সবুজদের স্বর্ণ জয়ের হাট। বাংলাদেশ আরচ্যারদের সোনাঝড়া দিনে ক্রিকেটে বাংলার বাঘিনীরা জিতল দক্ষিণ এশিয়ার সেরার খেতাব। এদিন আরচ্যারদের ছয় ও নারী ক্রিকেটারদের একটি সহ মোট ৭টি স্বর্ণপদক জিতে নিজেদের গেমসের ইতিহাসে একদিনে সর্বোচ্চ স্বর্ণ জয়ের রেকর্ড গড়লো বাংলাদেশ। এর আগে ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে কারাতে ডিসিপ্লিন থেকে চার ও তায়কোয়ান্ডো থেকে একটিসহ একদিনে সর্বোচ্চ পাঁচটি স্বর্ণপদক জিতেছিল লাল-সবুজরা। এবার হিমালয়কন্যার দেশে তা ছাড়িয়ে গেল।
কাঠামান্ডুতে গেমসের পাঁচ দিনে সাত স্বর্ণ জিতলেও মন ভরছিল না বাংলাদেশের। কিছু ডিসিপ্লিনে ভারত না থাকায় বাংলাদেশের স্বর্ণ জয়ের প্রত্যাশা ছিল বেশি। তাই বলে সৃষ্টিকর্তা একদিনে সেই প্রত্যাশার অনেকটাই পূরণ করবেন তা হয়তো ভাবতে পারেননি স্বয়ই বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) কর্তারাও। আরচ্যারি ও নারী ক্রিকেটে ভারত খেলছে না বলে লাল সবুজদের অধিক সোনার প্রত্যাশা ছিল আগেই। তাই বিওএ’র কর্মকর্তারা কাল সবাই ছুটে যান পোখারায়। হতাশ হননি তারা। একদিনেই সৃষ্টিকর্তা দু’হাত ভরে দিলেন তাদের।
এসএ গেমসের ইতিহাসে এবারই প্রথম সোনালী হাসি রোমান সানা ও মোহাম্মদ তামিমুলদের। অতীতে এ ডিসিপ্লিনে সোনা জিততে পারেনি বাংলাদেশ। কিন্তু কালকের দিনের শুরুটা ছিল স্বর্ণালী। বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনে নতুন ইতিহাস গড়ে এদিন সকালে পোখারার রঙ্গশালা আরচ্যারি রেঞ্জে পুরুষ দলগত রিকার্ভ ইভেন্টে রোমান সানা, তামিমুল ইসলাম ও হাকিম আহমেদ রুবেল স্বর্ণ জিতলেন। শুরু হলো ইতিহাসের যাত্রা। এই সোনা জয়ের মধ্য দিয়ে বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ১৯৯৫ মাদ্রাজ সাফ গেমসে দেশের বাইরে সর্বোচ্চ ৭টি স্বর্ণপদক জিতেছিল বাংলাদেশ। রোমানদের সোনা জয়ে আট স্পর্শ করলো লাল-সবুজরা। এবার ইতিহাস গড়ার পালা। কাজটি ঠিকই করেছেন বাংলাদেশের তীরন্দাজরা। কাল সকালের দিকে ছিল রিকার্ভ পুরুষ, নারী দলগত ও মিশ্র দলগত এবং দুপুর ও বিকেলে ছিল কম্পাউন্ড পুরুষ, নারী দলগত ও মিশ্র দলগত-এই ছয় ইভেন্টের খেলা। সব ক’টিতেই সেরা হলেন লাল-সবুজের আরচ্যাররা।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রীড়াবিদ হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা রোমান সানার হাত ধরেই আসে দিনের প্রথম স্বর্নপদক। সকালে রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে তীর ধনুক হাতে নিয়ে মাঠে নামেন রোমান, তামিমুল ও হাকিম আহমেদ রুবেল। তারা ৫-৩ সেট পয়েন্টে হারান শ্রীলঙ্কার রবিন কাভিশ, সজীব ডি সিলভা ও সান্দান কুমার হেরাথকে। এর কিছুক্ষণ পরেই রিকার্ভ নারী দলগতের ফাইনালে বিউটি রায়, ইতি খাতুন ও মেহনাজ আক্তার মনিরা ৬-০ সেট পয়েন্টে ভুটানকে হারিয়ে দিনের দ্বিতীয় সোনা জিতেন। ইতি খাতুনকে নিয়ে রিকার্ভ মিশ্র দলগত ইভেন্টে ৬-২ সেট পয়েন্টে ভুটানকে হারিয়ে আরচ্যারি থেকে দেশকে তৃতীয় সোনা এনে দেন রোমান। এরপরেই নারী ক্রিকেটে বাংলাদেশ ২ রানে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে দিনের চতুর্থ স্বর্ণ জয় করে। দুপুরের পর আরচ্যারির কম্পাউন্ড ইভেন্ট থেকে আসে আরো তিন সোনা। কম্পাউন্ড পুরুষ দলগত ইভেন্টের ফাইনালে সোহেল রানা, অসীম কুমার দাস ও আশিকুজ্জামান ২২৫-২১৪ স্কোরে ভুটানকে হারিয়ে স্বর্ণ জেতেন। নারী দলগতে সুস্মিতা বনিক, সুমা বিশ^াস ও শ্যামলী রায় জুটি ২২৬-২১৫ স্কোরে শ্রীলঙ্কাকে হারান।
দিনের শেষ স্বর্ণ আসে কম্পাউন্ড মিশ্র দলগত থেকে। সোহেল রানা ও সুস্মিতা বনিক জুটি ১৪৮-১৪০ স্কোরে নেপালের তীরন্দাজদেরকে হারিয়ে দিনের শেষ সোনালী হাসি হাসেন। আরচ্যারিতে একদিনে ছয় স্বর্ন। যার মধ্যে রোমান সানা একাই জিতেছেন দু’টি। ইনজুরির কারণে ২০১৬ এসএ গেমস খেলতে না পারলেও এবার নিজের সেরাটা দিয়েই লড়ছেন নেপালে। বাংলাদেশ আনসারের তীরন্দাজ রোমান বলেন,‘আসলে আমার স্বপ্ন ছিল ২০১৬ সালের এসএ গেমসে খেলার। কিন্তু অপ্রত্যাশিতভাবে চোটের কারণে আমি ওই আসরে খেলতে পারিনি। সেই কষ্ট লাঘব হলো এবার। আমার প্রথম দিনটাই শুরু হয়েছে দলগত স্বর্ণ দিয়ে। এরপর রিকার্ভ মিশ্রতেও সোনা জিতেছি। দুটো স্বর্ণ জেতা হয়েছে। আরেকটি বাকি ব্যাক্তিগত ইভেন্টে। যা আগামীকাল (আজ) অনুষ্ঠিত হবে। এটা আমার ক্যারিয়ারের সেরা অর্জন।’ রোমনা সানার মতো আনন্দে আত্মহারা তামিমুল ইসলাম ও হাকিম আহমেদ রুবেলও।
আরচ্যারির পাশাপাশি স্বর্ণালী দিন কাটিয়েছেন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটাররাও। দক্ষিণ এশিয়ার অলিম্পিক খ্যাত এসএ গেমসে এবারই প্রথম মহিলা ক্রিকেট অর্ন্তভূক্ত হয়েছে। আর অভিষেক আসরেই চ্যাম্পিয়ন হলেন সালমা খাতুন ও জাহানারা আলমরা। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ফাইনালে তারা ২ রানে জিতে আরেক ইতিহাস রচনা করলো।
নেপাল এসএ গেমস শেষ হতে বাকি আর দু’দিন। হাতছানি দিচ্ছে আরেকটি রেকর্ডের। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ এই আসর থেকে লাল-সবুজরা সোনা জিতেছে ১৪টি। গেমসের ইতিহাসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্বর্ণপদক জয় ১৮টি। ২০১০ ঢাকা এসএ গেমসে লাল-সবুজরা এই কৃতিত্ব অর্জন করেছিল। সেই রেকর্ড স্পর্শ করতে বাকি আর মাত্র চার সোনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।