Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধুলায় বিপর্যস্ত গাজীপুর

মো. দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০১ এএম

গাজীপুরে ধুলায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ধুলার কারণে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে নগরবাসী। গাজীপুর ধুলা আর দূষণের নগরীতে পরিণত হয়েছে। দিন দিন বেড়েই চলেছে এ দূষণ। নগরীর টঙ্গী থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে কোনাবাড়ি পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ধুলায় জনজীবন বিপর্যস্ত। অতিরিক্ত ধুলাবালি বাতাসে যোগ হয়ে মাঝে-মধ্যেই ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে।

এলাকাবাসী ও পথচারীদের অনেকেই হাঁচি-কাশিসহ ব্রঙ্কাইটিসের মত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। গাজীপুরের বাতাসে যেন বিষ আর বিষ। দূষণ এখন চরমে। বায়ু দূষণের মাত্রা এখন রাজধানী ঢাকাকেও ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকার পাশের এই মহানগরে ধুলা আর ধোঁয়ার ঘনত্ব বাড়ছেই। ধুলামাখা রাজপথে পায়ে হাঁটারও পরিবেশ নেই। শ্বাস-প্রশ্বাসে বিশুদ্ধ বাতাস নেয়ার সুযোগ নেই। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন নগরবাসী ও যানবাহনে চলাচলকারী মানুষ। এই দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতর ও সিটি কর্পোরেশনের দীর্ঘ কিংবা স্বল্প মেয়াদি তেমন কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি নগরবাসীর।

স্থানীয় বাসিন্দা, পথচারী ও যাত্রী সাধারণের অভিযোগ, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তির পাশাপাশি প্রচÐ বায়ুদূষণ এখন নিত্য সঙ্গী। এই দুটি মহাসড়কে বিআরটি প্রকল্প, সাসেক প্রকল্প চলমান থাকায় এখানে প্রতিনিয়ত দূষণ হচ্ছে।

গাজীপুর মহানগর উত্তর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার মাজহারুল ইসলাম জানান, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের চলমান কাজের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রচÐ ধুলা সৃষ্টি হচ্ছে। মহাসড়কের পাশে নির্মাণ কাজের মালামাল আনা-নেয়ার সময় এমনকি রাস্তার পাশে আলগা পাথর রাখার সময় প্রচÐ রকমের ধুলা সৃষ্টি হচ্ছে। মহাসড়কের এ অংশে দিনে দুইবার পানি ছিটানোর প্রতিশ্রæতি দিলেও বিআরটি প্রকল্পের পক্ষ থেকে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পানি দেয়া হয় না। কোনো দিন দুইবার পানি ছিঁটালেও বেশিরভাগ সময়ই একবার পানি দেয়। এতে কিছুক্ষণের মধ্যেই পানি শুকিয়ে গিয়ে আবার ধুলার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিআরটি কর্তৃপক্ষ সকালে পানি দিতে দিতে বেশ বেলা হয়ে যায়। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার সময় মানুষ যখন অফিস বা গন্তব্যে ছুটতে থাকে তখন রাস্তায় পানি ছিটায়। সচেতন পথচারীরা মহাসড়কের এ অংশ অতিক্রম করার সময় মুখে মাস্ক পড়েন। শুধু ধুলাবালিই নয় গাজীপুরের বিভিন্ন ইটভাটার ধোঁয়াও প্রতিনিয়ত গাজীপুরের বায়ুকে দূষিত করছে।

কোনাবাড়ী এলাকার বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন জানান, গাজীপুর মহানগরীর কড্ডা, বাইমাইল, ইসলামপুর, বাসনসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকশ’ ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার অধিকাংশের মালিকরা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। ইচ্ছেমত গাছ পোড়াচ্ছে, নির্দিষ্ট উচ্চতার চিমনী ব্যবহার করছে না। কিংবা নির্দিষ্ট উচ্চতার চিমনী ব্যবহার করলেও চিমনীতে কোন ছাঁকনি ব্যবহার করা হচ্ছে না। এতে ইটভাটার কালো ধোয়া এবং কালো ছাঁই গিয়ে ইটভাটার আশপাশ এলাকা ছাড়াও কয়েক মাইল দূরে থাকা মানুষের ঘরবাড়ি এবং পাছপালার ওপর গিয়ে পড়ছে।

গাজীপুর-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী এনা পরিবহনের চালক আবুল হোসেন জানান, গাজীপুরের মত এত বায়ুদূষণ আর কোথাও দেখা যায় না। চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বাতাসে ধুলার পরিমাণ খুব বেশি। ভোরে ও রাতে ধুলা ও কুয়াশা মিলে এক রকমের ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে। এতে অল্প দূরেই সামনের রাস্তায় কিছু দেখা যায় না। এ যেকোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

গাজীপুর মহানগর দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার থোয়াই অং পরু মারমা জানান, গাড়ি চলাচলের সময় দিন-রাত ধুলা উড়তে থাকে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে হচ্ছে। ধুলায় আক্রান্ত হয়ে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শাহাদত হোসেন ও সার্জন মো. হোসেনুজ্জামানসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মোমেনুল ইসলাম জানান, প্রকল্প এলাকায় প্রতিদিন কমপক্ষে দুইবার পানি ছিটানো হচ্ছে। তবে রোদের কারণে পানি শুকিয়ে যায়। তারপরও প্রয়োজনে কোনো কোনো এলাকায় দুইবারেরও বেশি পানি ছিটানো হয়। সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপ থাকায় অনেক সময় কাজটি করতে বেশ বেগ পেতে হয়।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) নজরুল ইসলাম জানান, ওই প্রকল্প আমাদের আওতাভুক্ত নয়। তারপরও সহযোগিতা চাইলে আমরা পানি সরবরাহ করবো। এখনও পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ওই প্রকল্পের ধুলা নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো হচ্ছে না।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, এই ধুলাবালি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। সড়ক ও জনপদ বিভাগসহ যারা সড়কে কাজ করছে তাদেরকে লিখিত ও মৌখিকভাবে বলেছি। এসবের বিরুদ্ধে অভিযানও চালাচ্ছি। এরপরও যদি পরিবেশবান্ধব করে কাজ না করেন তাহলে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেবো।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ