মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
নীরব, অদৃশ্য এবং ভয়ঙ্কর – যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে সাবমেরিনের ধারণাটা শুধু সাগরে যুদ্ধের চেহারাই বদলে দেয়নি, বরং দেশে দেশে নৌ শক্তি ও প্রতিরোধ সক্ষমতার মানদণ্ডই পাল্টে দিয়েছে এটা। ১৬ শতকে ডুবন্ত নৌযানের বিষয়টি ছিল কল্পকাহিনী। ১৮৬৪ সালে আমেরিকান গৃহযুদ্ধের সময় প্রথমবারের মতো কনফেডারেট বাহিনীর আংশিক ডুবন্ত সাবমেরিন সিএসএস হানলি১, ২৪০ টনের মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ ইউএসএস হাউসাটনিককে ধ্বংস করে দেয়। এরপর, ১৯ শতকের প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে আধুনিক যুদ্ধ সাবমেরিনের উন্নয়নের গতি অনেক বেড়ে গেছে যেগুলো নিজেদের লুকিয়ে চলতে পারে এবং দূরপাল্লার অভিযানে অংশ নিতে পারে। এর পর থেকেই নৌবাহিনীগুলো সাবমেরিন যুদ্ধের বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিয়েছে।
পাকিস্তানের জন্য এটা স্বাভাবিক যে, তারা সাবমেরিন ক্লাবে যুক্ত হবে। কিন্তু পাকিস্তান নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল শুধু দুইটা সুলুপ বোট, দুটো ফ্রিগেট এবং চারটি মাইনসুইপার নিয়ে। প্রথম সাবমেরিনের জন্য তাদের ১৭ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর পর তারা সাবেক-ইউএস টেঞ্চ শ্রেণীর সাবমেরিন হাতে পায়। সত্তর দশক নাগাদ, পাকিস্তান নৌবাহিনীর বহরে যুক্ত হয় ৪টি ডাফনে ও দুটে আগোস্তা শ্রেণীর সাবমেরিন, যেগুলো ফরাসি নৌবাহিনীর কাছ থেকে এসেছিল। পাকিস্তান নৌবাহিনীতে সাবমেরিন সংযুক্তির বিষয়টি নানা কারণেই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। এর গুরুত্ব শুধু এটুকু নয় যে, এ অঞ্চলে প্রথম সাবমেরিন ব্যবহার করেছে পাকিস্তান, বরং এর মাধ্যমে এটাও ফুটে উঠেছিল ছিল ছোট হলেও সুশৃঙ্খল একটি নৌবাহিনী অগ্রসর পরিকল্পনার মাধ্যমে তার প্রতিপক্ষ বড় নৌ শক্তিগুলোকে ছাড়িয়ে যেতে পারে। পাকিস্তান নৌবাহিনীর প্রথম সাবমেরিনটির নাম ছিল পিএনএস গাজি।
গাজি ও হাঙ্গর নাম দুটো পাকিস্তান নৌবাহিনীতে নৌ যুদ্ধ, পেশাদারিত্বের প্রতীক, সাহস, ত্যাগ আর সেবার উদাহরণ হয়ে আছে। ১৯৬৫ সালে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময়, শুধু পাকিস্তানেরই সাবমেরিন ছিল। স্থল ও বিমান বাহিনী যখন দেশের জন্য লড়ছিল, নৌবাহিনীও তখন জনগণের দৃষ্টির অগোচরে কাজে নেমে পড়েছিল। গাজীকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের পরিকল্পনা সাজিয়েছিল নৌবাহিনী এবং এটাকে ব্যবহার করে গুরুত্বপূর্ণ মুম্বাই উপকূলের উপর নজর রাখা হয়েছিল, যেখানে ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমান ও বিমানবাহী রণতরী আইএনএস বিক্রান্ত মোতায়েন ছিল।
এই গাজীর উপস্থিতিটি এতটাই কার্যকর ছিল যে ভারতের কোন জাহাজই খোলা সাগরে যাওয়ার সাহস করেনি। ফলে সেগুলো পাকিস্তানী বন্দরগুলোর জন্য কোন চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারেনি। ভারতীয় নৌবাহিনীর মানসিকতার উপর গাজী যে প্রভাব ফেলেছিল, সেটার কারণে ভারতীয় নৌবাহিনীর দুর্গ ও রাডার স্টেশান ডাওয়ারকার মধ্যে সফল অভিযান চালানোর দুঃসাহস করেছিল পাকিস্তান। গাজি শুধু শত্রুর নৌবাহিনীকে নিরস্তই রাখেনি, বরং ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়ও এই স্মৃতি ভারতীয় বাহিনীকে তাড়িয়ে নিয়েছে।
১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময় পিএনএস/এম গাজিকে নির্দেশ দেয়া হয় ভারতীয় নৌবাহিনীর অলংকার আইএনএস বিক্রান্তকে খুঁজে বের করে সেটাকে ধ্বংস করে দিতে হবে। নির্দেশ অনুযায়ী ৩ হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দেয়ার জন্য রওনা হয় গাজি। কিন্তু প্রথম ধাপ পার হওয়ার পর দুঃখজনক দুর্ঘটনার কারণে গাজী অকেজো হয়ে পড়ে এবং ক্রুরা মারা যায়। এই ট্রাজিক পরিণতির পরও এখন পর্যন্ত গাজি পাকিস্তান নৌবাহিনীতে বীরত্ব ও সাহসিকতার প্রতীক হয়ে আছে।
গাজি অকেজো হওয়ার পর তার জায়গা নেয় ডাফনে শ্রেণীর সাবমেরিন পিএনএস/এ হাঙ্গর। ১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর হাঙ্গর ভারতীয় ফ্রিগেট জাহাজকে খুঁজে বের করে। সাবমেরিনের কমাণ্ডার আহমেদ তাসনিম আক্রমণে যান এবং শত্রু ফ্রিগেটকে লক্ষ্য করে দু’টি টর্পেডো ছোড়েন। প্রথম টর্পেডো মিস হলেও দ্বিতীয়টি নিখুঁতভাবে আঘাত হানে এবং ২ মিনিটেরও কম সময়ের মধ্যে প্রায় ২০০ ক্রু নিয়ে জাহাজটি ডুবে যায়। কমাণ্ডিং অফিসার এরপর দূর থেকে আরেকটি জাহাজকে আঘাত করে সেটিরও ক্ষতি করে এবং এরপর নিরাপদে পাকিস্তানের পোতাশ্রয়ে ফিরে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।