Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যৌথ বাহিনীর হামলায় বিধ্বস্ত হয় পাকিস্তান বিমানবাহিনীর শক্তি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০৩ এএম


২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৫ ডিসেম্বর ১৯৭১ পর্যন্ত সময়ে শহীদ হয়েছেন লাখ লাখ বীর মুক্তিযোদ্ধা। তাদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে এদেশের মাটি। রঞ্জিত হয়েছে গ্রামগঞ্জ, শহর-বন্দর, অলিগলি থেকে রাজপথ। একাত্তরের ৫ ডিসেম্বর দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধে হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের খবর আসতে থাকে। ডিসেম্বরের এদিন দখলদার মুক্ত হয় দেশের অনেক এলাকা। ১৯৭১ সালের এই দিনে ঢাকার আকাশে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথবাহিনীর সাথে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর শেষ মরণপণ লড়াই চলে। বিধ্বস্ত হয় বাংলাদেশে পাকবাহিনীর প্রায় সব বিমান। ওইদিন দুপুরের মধ্যেই পাকিস্তান বিমানবাহিনীর শক্তি নিঃশেষ হয়ে যায়। বাংলাদেশে আগে থেকে মজুদ করা পাকিস্তানের সব জঙ্গি বিমান ধ্বংস হয়। হত্যা ও ধ্বংসের বিভীষিকায় বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে মুক্তিপাগল বাঙালি। চারদিকে বিজয়ের রণধ্বনি। ভারতীয় জঙ্গিবিমানগুলো সারাদিন ধরে অবাধে আকাশে উড়ে পাক সামরিক ঘাঁটিগুলোতে প্রচ- আক্রমণ চালায়, অকেজো করে দেয় বিমানবন্দরগুলো।
ভারতের বিমানবাহিনীর হিসাব মতে বারো ঘণ্টায় দু’শ বত্রিশবার তেজগাঁও এবং কুর্মিটোলা বিমানঘাঁটিতে পঞ্চাশ টনের মত বোমা ফেলা হয়। পাকিস্তানি বাহিনীর কনভয়ের ওপর ভারতীয় জঙ্গি বিমানগুলো আক্রমণ চালায়। এতে পাকিস্তানি বাহিনীর নব্বইটা গাড়ি ধ্বংস হয়। এছাড়াও পাকিস্তানি বাহিনীর সৈন্য বোঝাই কয়েকটা লঞ্চ এবং স্টিমার ধ্বংস হয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল দখলমুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার দিকে আসতে থাকেন। সম্মুখযুদ্ধের পাশাপাশি কূটনৈতিক যুদ্ধেও হারতে থাকে পাকিস্তান।

এ সময় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের চোখে রাজনীতির এক নতুন প্রেক্ষাপট হয়ে ওঠে যুদ্ধরত বাংলাদেশ। কামান-গোলাসহ মারণাস্ত্রের সামনে যার যা কিছু ছিল তাই নিয়ে বাংলার মুক্তিসেনাদের সম্মুখযুদ্ধ দেখে বিস্মিত হয়ে যায় গোটা পৃথিবী। সাবমেরিন ‘গাজী’ ছিল পাকিস্তানি নৌবহরের গর্বের বস্তু। বঙ্গোপসাগরে নৌবাহিনীর যৌথকমান্ডের সফল আক্রমণে তা ধ্বংস হয়। সাবমেরিনটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হতে পাকিস্তান ধার হিসাবে পেয়েছিল।

একাত্তরের এই দিনে নৌবাহিনীর যৌথ কমান্ড চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের সকল নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের জাহাজগুলোকে বন্দর ত্যাগের পরামর্শ দেয়। তারা নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিতেও তাদের অপারগতা প্রকাশ করে। বিশ্বের সব দেশ বুঝতে পারে বাংলাদেশের বন্দরগুলো রক্ষা করার ক্ষমতা আর পাকিস্তানি বাহিনীর নেই। এদিকে লেফট্যানেন্ট আরেফিনের নেতৃত্বে চালনা নৌবন্দরে বড় ধরনের আক্রমণ পরিচালিত হয়। এই যুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং নৌ-বাহিনীসহ সকল সৈন্য বন্দর ত্যাগ করে। কোস্টাল গানসহ প্রচুর গোলাবারুদ হস্তগত হয় মুক্তিবাহিনীর।

একাত্তরের এই দিনে মিত্রবাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট স্থলপথে এগিয়ে আসতে থাকে। প্রধান সড়ক দিয়ে না এগিয়েও মিত্রবাহিনী বিভিন্ন সেক্টরের প্রধান প্রধান সড়কের কতগুলো এলাকায় অবরোধ সৃষ্টি করে। ফলে ঢাকার সঙ্গে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের, নাটোরের সঙ্গে ঢাকা ও রংপুরের এবং যশোরের সঙ্গে নাটোর ও রাজশাহীর যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। ভারতের ৫৭ মাউন্টেন ডিভিশন আখাউড়ার যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাথে মিলিত হয়।

ভারতীয় সেনাবাহিনী আখাউড়ার দক্ষিণ এবং পশ্চিমাংশ দিয়ে অবরোধ করে। এখানে পাকিস্তানি বাহিনী মিত্রবাহিনীর সাথে যুদ্ধে টিকতে না পেরে অবশেষে আত্মসমর্পণ করে। ফলে আখাউড়া সম্পূর্ণরূপে শত্রুমুক্ত হয়। এই যুদ্ধে সুবেদার আশরাফ আলী খান, সিপাহী আমীর হোসেন, লেফট্যানেন্ট বদিউজ্জামান, সিপাহী রুহুল আমীন, সিপাহী সাহাব উদ্দীন, সিপাহী মুস্তাফিজুর রহমান শহীদ হন।

আখাউড়া মুক্ত হওয়ার পর কিছু পাকিস্তানী সৈন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে পালিয়ে যাওয়ার সময় মিত্রবাহিনীর হাতে নিহত হয়। এ দিনেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উত্থাপন করে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে; কিন্তু রাশিয়ার ভেটোর কারণে তা বরবাদ হয়ে যায়। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া যুদ্ধে বিভিন্ন দেশ নিজেদের কোন পক্ষে জড়াবে তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয় বিভিন্ন দেশের নীতিনির্ধারণী মহলে।

চীনের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সীমানা মেনে ভারতীয় বাহিনীকে পূর্ব পাকিস্তান থেকে অবিলম্বে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে অত্যন্ত কড়া ভাষায় জাতিসঙ্ঘে প্রস্তাব উত্থাপন করে। ভারত পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনের পক্ষ থেকে ভারতকেই দায়ী করা হয় স্পষ্টভাবে। অন্য দিকে রাশিয়াও জাতিসঙ্ঘে উত্থাপিত এক প্রস্তাবে জানায় যুদ্ধবিরতির আগে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান আগে করতে হবে। পাকিস্তান রক্ষায় বঙ্গোপসাগরে কেউ কোনো নৌ জাহাজ পাঠালে তারাও ভারতের আক্রমণের শিকার হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী।

 

 



 

Show all comments
  • Kamrul Hasan ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪৫ এএম says : 0
    পাকিস্তানের ব্যর্থতাই আজ বাংলাদেশের এই অবস্থা।
    Total Reply(0) Reply
  • জোহেব শাহরিয়ার ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
    পাকিস্তানের শোষণ থেকে তো অনেক আগেই ‍মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু ভারতের আগ্রাসন থেকে কবে মুক্তি মিলবে আল্লাহই ভালো জানেন।
    Total Reply(0) Reply
  • সুক্ষ্ম চিন্তা ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১:৪৮ এএম says : 0
    আল্লাহ যা কিছু করেন ভালোর জন্যই করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • Mamoon Mozumder ৫ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৯:১৯ এএম says : 0
    Bangladesher ebong Pakistaner proyttekti jela die ek ekta rastro gothon korte parley parley onek bhalo hobey karon Muslim desher sonkhya onek berde jabe aar OIC er sodosyo sonkhya sotadhik hobey !
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ