Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভবিষ্যৎ ব্যর্থ হলে ক্ষমা করবে না সন্তানরা

কপ-২৫ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় এখন থেকেই কাজ শুরু করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সৃষ্ট অভিবাসী সমস্যা সমাধানের যুতসই কর্মকৌশল তৈরিতে আন্তর্জাতিক স¤প্রদায়কে আলোচনার পথ তৈরির আহ্বান জানান তিনি। গতকাল সোমবার স্পেনের ফেরিয়া দ্য মাদ্রিদে (আইএফইএমএ) অ্যাকশন ফর সারফাইভাল: ভালনারেবল নেশনস কপ-২৫ লিডার্স সামিট’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দেয়া বক্তব্যে তিনি এই আহ্বান জানান।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ক্ষতিগ্রস্ত স¤প্রদায়ের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোনিবেশ করতে হবে, কেননা এ স্থানান্তরও একটি কার্যকর অভিযোজন কৌশলের মধ্যে হতে পারে যা আমাদেরকেই সমর্থন করতে হবে। সুতরাং, বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে তাদের স্থানান্তর এবং সুরক্ষা বিষয়টি বিশ্বব্যাপী যথাযথ মনোযোগ দেয়া উচিত। আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের জন্য একটি যুতসই কর্মকৌশল তৈরির বিষয়ে আলোচনা শুরু করা দরকার।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মানব অভিবাসনের ওপর পড়তে পারে এ বিষয়টি সর্বজনস্বীকৃত। চরম আবহাওয়ার ঘটনাগুলো ইতোমধ্যে সহিংস দ্ব›েদ্বর চেয়েও বেশি মানুষকে স্থানচ্যুত করছে। ধীরস্থিরভাবে সমুদ্র-স্তরের বৃদ্ধি এবং মরুকরণের মতো বিষয়গুলো বিশ্বব্যাপী অনেক কম নজর দেয়া হচ্ছে। আমাদের অবশ্যই এই ভারসাম্যহীনতা সংশোধনের লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।

জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত ফোরামের (সিভিএফ) নেতাদের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমাদের এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকারের দাবিদার সবচেয়ে দুর্বল দেশগুলো তাদের প্রাপ্য সহযোগিতা পেতে ব্যর্থ হয়েছে। নতুন সিভিএফ ও ভি২০ ট্রাস্ট ফান্ড এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর নতুন বিশেষ দূত পাওয়া একটি ভালো সফলতা হতে পারে।

সিভিএফ এবং ভি-২০ কে দক্ষিণ-দক্ষিণ এবং ত্রিমুখী সহযোগিতার একটি মহৎ উদাহরণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বর্তমান সাফল্যের আরও বিকাশ চাই। মানব ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ অবস্থানে আছি, এখন আমরা আমাদের সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপ‚র্ণ হুমকির মুখোমুখি হতে চলেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন এখন প্রতিটি দেশের জন্য বিশেষত বাংলাদেশের মতো জলবায়ু প্রবণ দুর্বল দেশগুলোর জন্য একটি অস্তিত্বের হুমকিতে পরিণত হয়েছে। আমরা যদি আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হই, তাহলে তারা ক্ষমা করবে না। প্রতি মুহূর্তে আমাদের নিক্রিয়তা পৃথিবীর প্রতিটি জীবিত মানুষকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এখনই সময় কাজ করার।

শেখ হাসিনা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্বের জন্য একটি কঠিন বাস্তবতা। এটি এখন মানুষের জীবন ও পরিবেশ, বাস্তুশাস্ত্র এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি করেছে। ১৯৯২ সালে আর্থ সামিটের পর থেকে আমরা গ্রিনহাউস গ্যাস হ্রাসে খুব বেশি অগ্রগতি অর্জন করতে পারিনি, এর নির্গমণ এখনও বেড়ে চলেছে। এই প্রবণতা পৃথিবীকে অস্থিতিশীল করে তুলছে।

ঝুঁকিতে থাকা আমাদের মতো দেশগুলো, এই পরিস্থিতি মোকাবেলা সীমিত ক্ষমতা এবং নির্দিষ্ট ভৌগলিক বৈশিষ্ট্যের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। ক্ষয়ক্ষতির জন্য তুচ্ছ বা কোনো অবদান না রাখলেও ক্ষতির ধাক্কাটা আমাদেরকেই সামলাতে হচ্ছে। এটি একটি অবিচার এবং অবশ্যই বিশ্ব স¤প্রদায়কে বিষয়টি স্বীকার করতে হবে।”

তিনি বলেন, ২০০৯ সালের নভেম্বরে মালেতে ফোরামের প্রথম সভার পর বৈশ্বিক জলবায়ু দৃশ্যপটের যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে। দুর্ভাগ্যক্রমে এক্ষেত্রে ইউএনএফসিসিসির প্রক্রিয়ার অগ্রগতি খুব ধীর এবং অপর্যাপ্ত। বিশেষত আমাদের মতো দুর্বল দেশগুলোতে জাতীয়ভাবে গ্রহণ করা অভিযোজনমূলক উদ্যোগে সহায়তা করার জন্য খুব কমই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গঠন করা তহবিলগুলোতে পর্যাপ্ত মূলধনের অভাব রয়েছে। সরাসরি এবং সহজে তহবিল পাওয়ার জন্য যেসব শর্ত এবং মানদন্ড রয়েছে, বেশিরভাগই সেসব সক্ষম দেশগুলোর পক্ষেই যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা আমাদের মতো দেশগুলোর সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাওয়ার কথা থাকলেও ধারণার চেয়েও কম সহায়তা পাচ্ছি। এক্ষেত্রে একটি নতুন সিভিএফ এবং ভি-২০ ট্রাস্ট তহবিল গঠন এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক বিশেষ দূত নিয়োগ সম্ভব হলে সেটি হবে বড় সাফল্য।

মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কারণে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়টিও তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে আসা ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা নানাভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে পরিবেশ বিপর্যয়ের সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতাও আমাদের হয়েছে। সুতরাং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি, এর প্রভাব এবং মোকাবেলার সক্ষমতা অভাবের ওপর ভিত্তি করে দুর্বল দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়ার একটি মানদন্ড নির্ধারণ করতে হবে। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নিয়মিত সমর্থন এবং আলাদাভাবে উন্নয়ন তহবিল রাখতে চাই।

তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বেশি দায়ী দেশগুলোর ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে চরম উদাসীনতা দেখি আমরা। এতে বৈশ্বিক জলবায়ু ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এবং আমাদেরকে বিপদের মুখে ঠেলে দিচ্ছে। সুতরাং এই উদাসীনতার জবাব চাইতে আমাদের দ্বিধা করা উচিত নয়।

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যাপক হারে অভিবাসনেও জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে, এটা এখন সর্বজনস্বীকৃত। সংঘাতের চেয়ে আবহাওয়াজনিত দুর্যোগের কারণে এরই মধ্যে অনেক মানুষ স্থানচ্যুত হয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং মরুকরণের মতো ধীরগতির প্রভাবের দিকেও বিশ্বের নজর কম। এই ভারসাম্যহীনতা ঠিক করতে আমাদের কাজ করা উচিত।

তিনি বলেন, অভিবাসনের ক্ষেত্রে আমরা একটি কার্যকর অভিযোজন কৌশলের প্রতি আমারা গুরুত্ব দেই, পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠির অভিযোজন সক্ষমতা বাড়ানোর ওপরও গুরুত্ব দিতে চাই। স্থান হারানো মানুষের পুনর্বাসন এবং সুরক্ষার প্রতিও বিশ্বের নজর দেয়া উচিত। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব মানুষ স্থান হারিয়েছে, তাদেরকে সহায়তা দিতে একটি কার্যকর কর্মকৌশল তৈরিতে আমাদের এখনই আলোচনা শুরু করা দরকার।

জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত জাতিসংঘ ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশনের ২৫তম বার্ষিক সম্মেলনে যোগ দিতে তিন দিনের সফরে গত রোববার স্পেন পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

 



 

Show all comments
  • খবর আজকাল ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৫ এএম says : 0
    যেই সন্তানের বাবা সরকারী চাকুরী করে মাসে বেতন পায় ১৫/২৫/৩৫ হাজার টাকা যা তার সংসারে এর চেয়ে বেশি ব্যায় হয়।পাশাপাশি অনেক টাকার সম্পদও করে।এই সন্তান ভবিষ্যতে কি চাকরী করবে, কিভাবে করবে তখন থেকেই সে তার ভবিষ্যতের রুটিন ঠিক করে ফেলে
    Total Reply(0) Reply
  • M. A. Zinnah ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৫ এএম says : 0
    Good speech..... I supported..!
    Total Reply(0) Reply
  • Sazzad Hossain Saju ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৫ এএম says : 0
    গোটা দেশের ভবিষ্যৎ যে অনিশ্চিত তার দায় কে নিবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mubarak Hossen Sobuj ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৬ এএম says : 0
    আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হলে, কিভাবে ভবিষ্যৎ গড়বো।
    Total Reply(0) Reply
  • MD Rasel Ahemed ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৭ এএম says : 0
    কিভাবে আমি সন্তানদের ভবিষ্যত করব। কারণ আমি যে বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করে নিঃস্ব হয়ে গেছি বর্তমান
    Total Reply(0) Reply
  • N F Aronnya ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১২:৩৭ এএম says : 0
    I Agree with you
    Total Reply(0) Reply
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ৯:৫৮ এএম says : 0
    মাননীয় প্রধান মন্ত্রী দক্ষিণ এশিয়ার অত্যন্ত জুকিপূন্য জলবায়ু মানবিক পরিবেশ মারাত্মক অবনতি বাংলাদেশের ইতিমধ্যে যতেষ্ট খতি হয়ে গেছে। ভবিষ্যতে আমাদের নতুন প্রজন্মের ভয়াবহ খতির আশংকা করছেন। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিকট বলিষ্ট ও দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে বলেছেন। এগার লক্ষ রোহিঙ্গা জনগোষ্টি এই অন্চলের পরিবেশের ভয়ংকর বিপদের অশনি সংকেত। গ্রিন হাউজ এপেক্ট। আধুনিক সভ্যতার নানান তেজষকিয়তা জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ করনীয় এখনী ঠিক করতে বিশ্ব সমাজের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র প্রধানের মধ্যে বিশ্ব মানবতার দিশারী মানবতার মা যথার্থ উপযুক্ত নীতি নিদ্ধারনী সত্য দায়িত্বশীল কথা বলেছেন বিশ্ব ফোরামের এই গুরুত্বপূর্ণ সভায়। মানুষের বাসযোগ্য পৃথিবী চায়। অতি সাধারণ মানুষ হিসাবে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতার কন্যা কে আন্তরিক ধন্যবাদ অভিনন্দন সালাম।
    Total Reply(0) Reply
  • Naim Uddin ৩ ডিসেম্বর, ২০১৯, ১০:১১ এএম says : 0
    thanks to PM
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রধানমন্ত্রী

৩১ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ