Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অনাহারক্লিষ্ট মানুষের কষ্ট উপলব্ধির মাস রমজান

প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আবদুল লতিফ নেজামী
আত্মশুদ্ধি, সাম্য, সহমর্মিতা ও মানবীয় গুণাবলী সৃষ্টির উদাত্ত আহ্বান নিয়ে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস পবিত্র রমজান বর্ষ পরিক্রমায় আবার ঘুরে এসেছে আমাদের মাঝে। মুসলমানদের দ্বীন ও দুনিয়ার সমৃদ্ধি, পার্থিব ও আধ্যাত্মিক উন্নতি, দৈহিক ও মানসিক শ্রেষ্ঠত্ব, গৌরব ও মর্যাদার অবিস্মরণীয় স্মৃতি বয়ে নিয়ে প্রতি বছর আসে মাহে রমজান। মুসলিম জাতীয় ঐতিহ্য চেতনায় এবং ধর্মীয় ও সাস্কৃতিক জীবনে রমজান অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রমজান কোরআন নাজিলের মাস। ইসলাম প্রতিষ্ঠার মাস, বিজয়ের মাস এবং ইসলামী অর্থনৈতিক মাস। সমগ্র জাতির মুক্তির বাণী নিয়ে পার্থিব-অপার্থিব জগতের কল্যাণের আলোকবর্তিকারূপে রমজান মাসের ২৭ তারিখে নাজেল হয়েছিল পবিত্র কোরআন। মানবতার মহান নেতা ও তাঁর বিপ্লবী ছাহাবায়ে কেরাম বাতিলের বিরুদ্ধে, অন্যায়, অসত্য, জুলুম-শোষণের বিরুদ্ধে মানুষের প্রভুত্ব খতম করার লক্ষ্যে ১৭ রমজান বদর যুদ্ধসহ লড়াই করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইসলাম। এজন্যে ইসলামের টার্নিং পয়েন্ট বদর যুদ্ধকে ইসলাম প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ বলা হয়ে থাকে। আর ৮ রমজান মক্কা বিজয় হয়েছিল। তাছাড়া ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট সম্পর্কে বাস্তব উপলব্ধি সিয়াম সাধনার মাধ্যমে অর্জিত হয়। মহান এ উপলব্ধি থেকেই বিত্তবান ও সমাজের অর্থনৈতিকভাবে  প্রতিষ্ঠিত  মানুষের জাকাতের বিধান মোতাবেক তাদের মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত ধনসম্পদের চল্লিশ ভাগের একভাগ দুস্থ ও নিঃস্ব মানুষের কল্যাণে কাজ করে বঞ্চনাহীন সুখী, সমৃদ্ধ সমাজ নির্মাণের প্রেরণা যোগায়। তাই পবিত্র রমজান মাসকে অর্থনৈতিক মাস বলা হয়।
পরম করুণাময়ের নির্দেশিত পথ অনুসরণ-করে তাঁর (আল্লাহর) সন্নিহিত হওয়া, চিত্তে তাঁকে অনুভব করা এবং মিলনানাভুতির পুলকাবেশে মিশে যাওয়ার মহড়া চালানোর জন্যে বর্ষ পরিক্রমায় পবিত্র রমজান আমাদের দ্বারপ্রান্তে সমাগত হয়। পরাক্রমশালী আল্লাহর সাথে মিলনাভুতির বিমলান্দে মানুষের আত্মার উদ্বেলিত হওয়ার সুযোগ আসে পবিত্র রমজান মাসে। রমজানের প্রথম ১০ দিন মহান আল্লাহ্্র বিচ্ছুরিত অফুরন্ত রহমতচ্ছটার কৃপায় মানবচিত্তে ইবাদত-বন্দেগির প্রবৃত্তি ও চেতনা জাগ্রত হয়। ফলে রমজানের প্রথম ১০ দিন আত্মসংযম, কৃচ্ছ্রতা ও ত্যাগ-তিতিক্ষা অনুশীলনের মাধ্যমে সিয়াম সাধনায়রত মানুষ রমজানের দ্বিতীয় ১০ দিন মাগফিরাতের দরজায় উপনীত হন। দ্বিতীয়  ১০ দিন  আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহে মিথ্যাকথা বলা, গিবত করা, চোগলখোরি, মুনাফাখোরি, কালোবাজারি, প্রতারণা ও প্রবঞ্চণা প্রভৃতি ইসলামবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকার অনুশীলন করে রোজাদাররা  রমজানের তৃতীয় ১০ দিনের ধাপে  পৌঁছে  সর্বশক্তিমান আল্লাহ-তায়ালার সাথে মিলনানাভূতির অমৃতরস আস্বাদন করতে এবং প্রতিশ্রুত নাজাত (মুক্তি) উপভোগ করতে সক্ষম হন।
তাই এ মাসের আগমনে আল্লাহর কাছে আত্মনিবেদনের জন্যে উচ্ছ্বসিত মানুষের প্রাণ আবেগাপ্লুত হয়ে উঠে। মানুষের হৃদয় আকুল আবেগে আল্লাহতায়ালার পানে ছুটে যাবার প্রয়াসী হয়। চিত্তে ও জীবনে মহান আল্লাহকে অনুভব করার পুলকাবেশে মিশে যাবার চেষ্টা চালায় মানুষ। রমজান এলেই যেন  রহমত, মাহফিরাত ও নাজাত লাভের জন্যে পরাক্রমশালী ও পরম দয়ালু ¯্রষ্টার  সাথে মিলনের নিগূঢ় রস পান করার নিমিত্তে মানুষের ক্ষুধিত মন আর্তনাদ করতে থাকে।
মাহে রমজান অনন্ত-অসীম রহমত, বরকত ও ফজিলতের মাস। এবাদত-বন্দেগি ও আত্মশুদ্ধির মাস। শান্তি, সহনশীলতা ও সহমর্মিতার মাস। কৃচ্ছ্রতা অনুশীলনের মাস। ব্যক্তিগত এবং সামাজিকভাবে সর্বত্র আল্লাহর দ্বীনের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠায় যাবতীয় প্রতিকূলতার মুখে টিকে থাকার জন্যে যে মনমানসিকতার প্রয়োজন সিয়াম সাধনার দ্বারাই তা অর্জিত হয়। সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মানব জাতিকে মহান আল্লাহতায়ালার রহমত লাভের আহ্বান জানায় এ মাসে। তাই উন্নত চরিত্র অর্জনের পক্ষে অন্তরায় পাশবিক বাসনার প্রাবল্যকে পরাভূত করতঃ পাশবিক শক্তিকে আয়ত্তাধীন করা হচ্ছে সিয়ামের তাৎপর্য।
তাই আজ শুধু রমজানের মাহাত্ম্য আউড়িয়ে আত্মতৃপ্তি পাবার সুযোগ নেই।  বরং অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং মানবতা রক্ষার জন্যে মহানবীর (সা.) নেতৃত্বে সাহাবায়ে কেরাম আত্মত্যাগের যে নজির স্থাপন করে গেছেন, সেই ত্যাগের আদর্শ গ্রহণের মধ্যেই পবিত্র রমজানের চেতনা নিহিত। আজ  প্রয়োজন রমজানের ত্যাগ-তিতিক্ষার সেই চেতনায় উজ্জীবিত হওয়া।   ইসলামের বিজয় পতাকাকে সমুন্নত রাখার জন্যে পবিত্র রমজান মাসে সেই আত্মত্যাগের ইতিহাস আমাদের কাছে এক শিক্ষার বাণী বহন করে ফেরে। রমজানে সংযম ও আত্মত্যাগের অনুশীলন এবং সেইসাথে ইসলাম ভিত্তিক ন্যায়, সত্য ও সততা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণ প্রয়োজন। এসব ত্যাগ-তিতিক্ষা ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় প্রমাণিত, শাশ্বত ও জীবন্ত। তাই মহান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রেখে অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অনুশীলন করার সুযোগ আসে রমজান মাসে। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চিরায়ত ইসলামী মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চরিত্র, ধর্ম ও আদর্শ রক্ষা এবং  সর্বগ্রাসী অপরাধ প্রবণতা রোধের অনুশীলনের চেতনা জোরদার করার অপার সুযোগ সৃষ্টি হয় এ মাসে। তাছাড়া সিয়াম সাধনার মধ্য দিয়ে মানব জাতিকে মহান আল্লাহতায়ালার রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত লাভের আহ্বান জানায় এ মাস।
রমজান মাসে এক সাথে ইফতারের মাধ্যমে সার্বজনীন সাম্য, মৈত্রী, মানবিকতাসম্পন্ন মানসিকতা জোরদার করার মহড়া প্রদর্শিত হয় এবং পারস্পরিক সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্য বোধের চেতনাকে জাগ্রত করে। এতে পারস্পরিক সহমর্মিতার ক্ষেত্রে আমাদের বিশ্বাস, চেতনা ও উপলব্ধি প্রতিবিম্বিত হয়। রমজান মাসে সংঘবদ্ধভাবে ইফতার গ্রহণের মাধ্যমে তৌহিদী জনতার চিত্তকে পারস্পরিক সহমর্মিতার এক গরীয়ানের আসন দেয়। তাই পবিত্র রমজানের ইফতার আমাদের কাছে পারস্পরিক সহযোগিতা শিক্ষার বাণী বহন করে ফেরে। একত্রে ইফতার মুসলিম জনতার মানসলোক ও চেতনারাজ্যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন দৃঢ় হয়। তাই রমজানে ইফতারের যথোপযুক্ত অনুশীলনই পারে সকলকে সৌভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ করতে। ইফতারসহ রমজানের প্রতিটি কর্তব্য ঐশী বিধান এবং মহানবীর (সা.) নির্দেশিত পথে সঠিকভাবে অনুশীলনের মাধ্যমেই মহান আল্লাহতায়ালার নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব হয়। একত্রে ইফতার গ্রহণের মাধ্যমে সহমর্মিতার সদভ্যাস গড়ে তুলে ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক কল্যাণ সাধনের পথ প্রশস্ত করার অনুশীলন করার মাস হচ্ছে রমজান। রমজানে একত্রে ইফতার গ্রহণ মানুষের অন্তরে একে অন্যের প্রতি ভালোবাসা, সাম্য ও মৈত্রীর অনুভূতি স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জাগ্রত করে এবং মানুষের মনে শৃঙ্খলা, ধনী-দরিদ্রের ব্যবধান ভুলে একত্রে জীবনযাপনের মানসিকতা, সৌহার্দ্যবোধ, ইত্যাদি নৈতিক ও আত্মিক গুণাবলী অর্জনে সহায়তা করে। এজন্যেই তৌহিদী জনতার চিত্তের ওপর ইফতারের প্রভাব অত্যন্ত বেশি।  রমজান মাসে ইফতার অন্যের সুখ-দুঃখাদিতে এগিয়ে আসার ক্ষেত্রে মানুষের ঝিমিয়ে পড়া চেতনাকে শাণিত, ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিক দায়বোধহীন ব্যক্তিদের  কর্তব্যবোধে উজ্জীবিত ও উদ্দিপ্ত করে, এবং  মানুষের চিন্তা-ভাবনার  জগতে বিরাজমান নৈরাজ্যের উন্নতি ঘটাতে, উন্নত মানবিক জীবন ও সমাজের মনোভূমিতে শৃঙ্খলা আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। রমজান  ইসলামের আলোকে বৈষম্যহীন সমাজ ব্যবস্থা কায়েম এবং সকলকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে চেতনায় ও ঐতিহ্যে ইফতারের অবদানকে সামনে আনার সংগ্রামে জনগণ উজ্জীবিত হয়।
ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। একমাত্র ইসলামের শাশ্বত বাণীই মানব জাতির ইহলৌকিক ও পারলৌকিক শান্তি নিশ্চিত করতে পারে। ইসলাম মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথ নির্দেশনার মাধ্যমে জাগতিক কর্মকা- তথা দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে উত্তরণ সম্ভব করে তোলে ইসলামের মহান শিক্ষার তাৎপর্যবহ সিয়ামের এ মাসে। দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। আর সিয়াম হচ্ছে ঈমানের একটি অন্যতম  প্রধান স্তম্ভ।
সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মার পবিত্রতা, সংযম, সহনশীলতা ও আত্মশুদ্ধি অর্জিত হয়, তা জাতীয় অগ্রগতিতে সম্পৃক্ত হলে জাতি গঠনে পালন করবে অসাধারণ ভূমিকা। দরিদ্র মানুষের সেবাসহ মানবতার কল্যাণে ইসলামের মহান আদর্শের অনুশীলনে সমাজে সংঘাত, সন্ত্রাস ও দুর্নীতি দূরীভূত হবে। এভাবে কলহভিত্তিক যেকোনো কর্মধারা মানুষের কাছে পরিত্যজ্য বলে গণ্য হবে।  
ইসলামের আদর্শ ও মূল্যবোধ সমুন্নত রাখার দীপ্ত শপথ গ্রহণের উপায় হচ্ছে সিয়াম সাধনা। জাতীয় আদর্শ ও স্বকীয়তা বিরোধী অপসংস্কৃতির পথ রুদ্ধ করে ইসলামে নির্দেশিত নৈতিকতা ও শালীনতা অনুশীলনের দ্বারা সদভ্যাস গড়ে তুলে মানুষের ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক কল্যাণ সাধনের পথ প্রশস্ত হয় পবিত্র রমজান মাসে।
বিরাজমান অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে রমজানের শুধু  মাহাত্ম্য আউড়িয়ে অতীত ইতিহাসের গৌরবের কথা বর্ণনা করে আত্মতৃপ্তি পাবার সুযোগ নেই। বরং রমজান মাসে যুগে যুগে অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং মানবতা রক্ষার জন্যে আত্মত্যাগের যে নজির আছে, সেই সংযম ও ত্যাগের আদর্শ গ্রহণের মধ্যেই পবিত্র রমজানের চেতনা নিহিত। আজ প্রয়োজন রমজানের ত্যাগ-তিতিক্ষার সেই চেতনাকে উজ্জীবিত করা। অতীতে ইসলামের বিজয় পতাকাকে সমুন্নত রাখার জন্যে পবিত্র রমজান মাসে মুসলিম  সমাজের আত্মত্যাগের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে। রমজানে সংযম আত্মত্যাগের অনুুপ্রেরণা এবং সেইসাথে ইসলামভিত্তিক ন্যায়, সত্য ও সততা প্রতিষ্ঠার দৃঢ় প্রত্যয়, যা যুগে যুগে প্রেরণা যুগিয়ে আসছে। এসব ত্যাগ-তিতিক্ষা ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় প্রমাণিত, শাশ্বত ও জীবন্ত। তাই মহান আল্লাহর ওপর অবিচল আস্থা ও বিশ্বাস রেখে অসত্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার অনুশীলন করার সুযোগ আসে রমজান মাসে। জাতীয় আদর্শ, ঐতিহ্য রীতিনীতি ও স্বকীয়তা বিরোধী অপসংস্কৃতির পথ রুদ্ধ করতে এবং নৈতিকতা ও শালীনতার দ্বারা সহমর্মিতার সদভ্যাস গড়ে তুলে ব্যাষ্টিক ও সামষ্টিক  কল্যাণ সাধনের পথ প্রশস্ত করার মাস হচ্ছে রমজান। এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের চিরায়ত ইসলামী মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চরিত্র, ধর্ম ও আদর্শ রক্ষা এবং  সর্বগ্রাসী অপরাধ প্রবণতা রোধের অনুশীলন করার মোক্ষম সময় হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস।     
সমাজে ঘুষ-দুর্নীতি ও মাস্তানদের অবাধ পদচারণা, বিষ ফোঁড়ার মতো ভিসিআর, নগ্ন ও অশ্লীল ছায়াছবি প্রদর্শন, পর্ণ ও রম্য পত্র-পত্রিকা, চলচ্চিত্রের প্রসার, সুন্দরী প্রতিযোগিতায় ও মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতায় মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তোলার ফলে অপহরণ, গুম, খুন, হাইজ্যাক, ইভটিজিং, নারী ধর্ষণ, এসিড নিক্ষেপের মতো অসামাজিক কার্যকলাপ ও অপরাধ প্রবণতা বেড়ে চলেছে অস্বাভাবিকহারে। শুরু হচ্ছে সর্বত্র নৈতিক অবক্ষয়। অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ছে এবং অপসংস্কৃতির পথ প্রশস্ত হচ্ছে। অপসংস্কৃতির দূষিত জোয়ারে শুধুু সুস্থ সংস্কৃতিই ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না, বরং ভেসে যাচ্ছে চিরায়ত মূল্যবোধ, ধ্যান-ধারণা, চরিত্র, ধর্ম ও আদর্শ। বিপন্ন হয়ে পড়ছে নৈতিক মেরুদ-। মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করছে নীতি-নৈতিকতায়। তাই আজ এসব অপরাধের শিকার মজলুমদের আর্তচিৎকার ও আহাজারি এবং জালেমদের উৎপীড়ন থেকে মজলুমদের রক্ষায় পবিত্র রমজান মাসে দৃঢ় প্রত্যয় গ্রহণের অনুশীলন করতে হবে। কারণ রমজান শুধু উপবাসের নাম নয়, বরং পবিত্র রমজান অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের মাস। ইসলামের সূচনাকাল থেকে যুগে যুগে অন্যায়-অত্যাচারের বিরুদ্ধে এবং মানবতা রক্ষার জন্যে পবিত্র রমজান মাসে  আত্মত্যাগের যে নজির আছে, তা যথাযথভাবে অনুশীলনই হচ্ছে রমজানের তাৎপর্য।
পরিশেষে বলতে চাই যে, পরকালে ¯িœগ্ধ প্রবাহিনী অভ্রভেদী প্রাসাদ গড়ে তোলার জন্যে প্রয়োজন ইসলামের আদর্শকে কঠোরভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে মহান আল্লাহকে ভক্তিভরে প্রণতি করা। অনন্ত অসীম বিধাতার প্রতি অন্তরকে  কৃতজ্ঞতা রসে সিক্ত করা।
শুধু উপবাস থাকাই রমজানের সাফল্যের শর্ত নয়, বরং উপবাসের সাথে যাবতীয় পাপ কাজ যেমন মিথ্যা কথা বলা, গিবত করা, চোগলখোরি, মুনাফাখোরি, কালোবাজারি, প্রতারণা ও প্রবঞ্চণার মতো ইসলামবিরোধী কাজ থেকে বিরত থাকার কঠোর অনুশীলন না করলে রমজানের ফল পাওয়া যাবে না। ইসলামের মহান শিক্ষার তাৎপর্যবহ সিয়ামের এ মাসের পবিত্রতা, ভাব-গাম্ভীর্য ও মর্যাদা বজায় রাখা সকলের নৈতিক দায়িত্ব। সমগ্র জাতির মুক্তির রমজানের মাহাত্ম্য ও গুরুত্ব উপলব্ধি করার জন্যে বিশ্ব মুসলিমকে তাওফিক দান করতে মহান আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ কামনা করি।
লেখক : চেয়ারম্যান, ইসলামী ঐক্যজোট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অনাহারক্লিষ্ট মানুষের কষ্ট উপলব্ধির মাস রমজান
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ