Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গোলাকান্দাইল-পুরিন্দা ও পুরিন্দা-মাধবদী সড়ক লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকের হাতে স্টিয়ারিং বাড়ছে দুর্ঘটনা

‘পুলিশ-প্রশাসনকে মাসোহারা দিয়ে চালাই’

প্রকাশের সময় : ২৪ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মো. আল আমিন ভূঁইয়া, আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) থেকে
ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের গোলাকান্দাইল-পুরিন্দা ও পুরিন্দা-মাধবদী অংশে অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের কারণে বেপরোয়া চলাচলে দুর্ঘটনার সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি মহাসড়কে থ্রি হুইলার বা সিএনজি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় লেগুনার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রী, স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদেরকে। আর এতেই ব্যাপকভাবে চলাচল করছে লেগুনা। আর এদের অধিকাংশ চালকই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন। দক্ষ ও ড্রাইভিং লাইসেন্স ওয়ালা চালকের ব্যাপক অভাবের কারণে কোন রকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই তাদের সমবয়সী কোনো চালকের সাথে কয়েক দিন সাথে থেকে বা গাড়ির হেলপাড়ি করে ড্রাইভিং সম্বন্ধে কোনো রকম হালকা একটু ধারনা লাভ করেই ড্রাইভার বা চালক বনে যাচ্ছেন। এ কারণে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে আহত ও নিহত হচ্ছে সাধারণ যাত্রী ও পথচারীরা। আর তারা এভাবেই অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন। পুলিশের নাকের ডগাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ড্রাইভার ও হেলপার দিয়ে গাড়ি চলাচল করলেও তাদের যেন মাথা ব্যথা নেই। কারণ তারা নাকি মাসোহার নেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ভূলতা থেকে পুরিন্দা ও পুরিন্দা থেকে মাধবদী সড়কে চলাচলরত অধিকাংশ লেগুনার চালকরাই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও ড্রাইভিং লাইসেন্সবিহীন। এ কারণেই এ সড়কের যাত্রী আছেন আতঙ্কে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক লেগুনা চালকরা গতি বাড়িয়ে একবার চলতে শুরু করলে তারা আর বুঝেন না যে গাড়ির গতি কমিয়ে চলতে হবে। এরা এটাও বুঝতে চান না যে, গাড়ির গতি যত বেশি হয়, ক্ষতি তত বেশি হয়। অনেকে আবার সিগন্যাল কি এটাও তারা বুঝতে চান না। ফলে যা হবার তাই-ই হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত লোক এই সমস্ত আনাড়ি অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের কারণে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যাচ্ছে বা জীবনের তরে পুঙ্গু হয়ে অন্যের বোঝা হয়ে চলতে হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে কেউ কেউ স্পটেই মারা যাচ্ছে। আমাদের দেশে শক্ত আইন থাকলেও আইনের প্রয়োগ না থাকায় বেপোরোয়া হচ্ছে চালকরা। লেগুনা চালকরা বলেন, লেগুনা চালাতে গেলে স্থানীয় পুলিশ প্রসাশনকে মাসোহারা দিয়ে চালাই, তাই তারা আমাদের কিছু বলতে পাড়ে না। তাই সচেতন নাগরিকরা মনে করেন, প্রসাশনের উচিত হবে আনাড়ি ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকদের যাতে গাড়ি চালাতে না দেয় এবং প্রাপ্ত বয়স্ক চালকরা যাতে ড্রাইভিং সম্বন্ধে পুরোপুরি না শিখে যাতে যান চলাচল করতে না পাড়ে। পাশাপাশি তাদের বুঝানো দরকার যে, “একটি দুর্ঘটনা সারা জীবনের কান্না” কিংবা ‘বাস্তব বড় কঠিন’ উক্ত গুরুত্বপূর্ণ স্লোগান সমূূহ শুধু লেগুনা পিছনে লিখে রাখলে চলবে না। সারা জীবনের কান্নার শিকার যাতে কোনো পরিবার বা ব্যক্তিকে যাতে না হতে হয়, সে লক্ষ্যে আগে থেকেই অভিজ্ঞতা অর্জনের পাশাপাশি যথাযথ প্রয়োগে তাদেরকে এগিয়ে আসা দরকার এবং নিজেকে একজন দক্ষ চালক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া দরকার। পাঁচরুখী এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও পাঁরুখীতে অবস্থিত এমপি টাওয়ারের একাংশের মালিক কায়সার হামিদ আলমগীর বলেন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক লেগুনার চালকদের কারণে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা। কিছু দিন আগে আমার টাওয়ারের ডাচ-বাংলা ব্যাংক এর এটিএম বুথের সিকিউরিটি গার্ড পাঁচরুখী থেকে লেগুনায় গাউছিয়া যাবার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রীসহ নিহত হয়েছে। এ রকম আরো অনেক ঘটনা রয়েছে। অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অনভিজ্ঞ চালকরা যাতে গাড়ি চালাতে না পাড়ে প্রশাসনকে তার একটা ব্যবস্থা করা দরকার। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত বেগম আনোয়ারা কলেজের অধ্যক্ষ মো. জাকির হোসেন জানান, পাঁচরুখীতে একটি ডিগ্রি কলেজ, একটি হাই স্কুল, কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা রয়েছে। এদের সব কটিই মহাসড়কের পাশে। তাই শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের একমাত্র বাহন লেগুনা। তাই প্রশাসনের উচিত হবে শিক্ষক-শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের কথা চিন্তা করে যাতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও অনভিজ্ঞ চালকরা যেন গাড়ি চালাতে না পাড়ে তা কঠোর হাতে দমন করতে হবে এবং যথাযথ নিয়মে যাতে যানবাহন চলাচল করতে পাড়ে সে লক্ষ্যে সকল ড্রাইভারদের আরো সচেতন করে তোলা ও একটি দুর্ঘটনার ভয়াবহতা সম্বন্ধে জ্ঞানার্জনের জন্য তাদেকে প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা। তাদেরকে যথাযথ নিয়মে যান চলাচল করার ব্যাপারে আরো সচেতন করে তোলা। সঠিক ড্রাইভিং লাইসেন্স ওয়ালা ড্রাইভারদেও ব্যতীত অন্য কাউকে সড়কে গাড়ি চালাতে না দিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরো শক্ত ভূমিকা রাখা দরকার বলে জানান। কয়েকজন লেগুনা মালিক জানান, ভালো ও অভিজ্ঞ ড্রাইভাররা লেগুনা চালাতে চান না। তারা বাস, ট্রাক, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কার চালাতে আগ্রহী। মূলত ভালো চালকের অভাবেই বাধ্য হয়েই তাদেরকে লেগুনা চালাতে দিতে হয়। ভূলতা পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ এসআই রবিউল হোসেন জানান, মহাসড়কে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন অনভিজ্ঞ চালকরা যাতে গাড়ি চালাতে না পারে তার জন্য কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে ও হবে। আড়াইহাজার থানার অফিসার ইনর্চাজ সাখাওয়াত হোসেন জানান, কোনো অবস্থাতেই অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন অনভিজ্ঞ চালকরা গাড়ি চালাতে পারবে না। তাদের বিরুদ্ধে অতি দ্রুত অভিযান পরিচলনা করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ