পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্বস্তির রেলযাত্রা পশ্চিমাঞ্চলের রেলযাত্রীদের কাছে অস্বস্তির যাত্রা হয়ে রইল। সংস্কারের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের হিসাব দেখানো হলেও উন্নত হয়নি রেলপথ। সামনে এগিয়ে যাবার বদলে উল্টো পথেই হাঁটছে রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চল। ক’টার ট্রেন ক’টায় ছাড়বে আর ক’টায় পৌছাবে এমন অনিশ্চয়তার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে রেলের লাখো যাত্রী। বিত্তবান থেকে নি¤œবিত্ত মানুষের পছন্দের বাহন রেলের যাত্রীরা শঙ্কামুক্ত চিত্ত নিয়ে এখন আর রেলযাত্রা করতে পারছেন না। সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি দূর্ঘটনা আর ভয়াবহ সিডিউল বিপর্যয় প্রতিদিন ভ্রমন করা হাজার হাজার যাত্রীর অস্বস্তি আরো বাড়িয়েছে। স্বজনদের ট্রেনে তুলে দিয়ে নিশ্চিন্ত থাকতে পারছেন না পরিবারের অন্য সদস্যরাও। রেলের এমন বেহাল দশার জন্য সাধারণ মানুষ দুষছেন রেলের দায়িত্বরতদের। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পর কেন রেলের এমন মরনদশা এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
আশির দশকের শুরুতে রেলের উন্নয়নে পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের নামে দু’ভাগে ভাগ করা হয়। পূর্বাঞ্চলের প্রধান কার্যালয় হয় চট্টগ্রাম আর পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান কার্যালয় রাজশাহীতে। এমন বিকেন্দ্রীকরনে মানুষ প্রত্যাশার জাল বুনে ভাল রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে ওঠার। শুরুতে বেশকিছু কার্যক্রমও শুরু হয়। যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু হওয়ায় রাজধানী ঢাকার সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগে বিপ্লব ঘটে। শুরু হয় আন্ত:নগর ট্রেনযাত্রা। একের পর এক ট্রেনের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
পশ্চিম রেল সূত্রে জানা যায়, উত্তরের পঞ্চগড় থেকে দক্ষিণের বাগেরহাট। পূর্বে জয়দেবপুর থেকে পশ্চিমে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরজুড়ে রয়েছে দেড় হাজার কিলোমিটারের বেশি রেলপথ। রয়েছে এক হাজার তিনশো সাতষট্টি ছোট ব্রীজ কালভার্ট। যার প্রায় অধিকাংশ বৃটিশ-পাকিস্তান আমলে নির্মিত। এসব সেতুর আয়ু ফুরিয়েছে বহুকাল আগেই। তারপরও জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চল রেল হবার পর নতুন নতুন রেল স্টেশনের বদলে একে একে নিভিছে দেউটির মত অর্ধশত স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ১৭৩টি স্টেশনের মধ্যে চালু রয়েছে ১২৩টি। এরমধ্যে অনেক গুলো বন্ধের পথে। কোনটি শুধু নাম নিয়ে টিকে আছে। স্টেশন বন্ধ হওয়ায় যাত্রীরা যেমন বঞ্চিত হচ্ছে তেমনি রেলের পরিচালন সময় বেড়েছে। সরকারের রাজস্ব আয়ও কমেছে। বন্ধ স্টেশনগুলো বেওয়ারিশ হয়ে স্টেশনের যন্ত্রপাতি ও সম্পদ বিনষ্ট হচ্ছে।
রেল সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পশ্চিমাঞ্চল রেল উল্টো পথে হাঁটছে। বড় দূর্নীতির আখড়ায় পরিনত হয়েছে। এ অঞ্চলে নিরাপদ ট্রেন চলাচলের জন্য নেয়া হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে। উদাহরন দিয়ে বলেন, ট্রেনের নিরাপদ যাত্রার জন্য ২০১৬-১৮ সালের জুন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ রেললাইন সংস্কার, ব্রীজ, কালভার্ট নির্মাণ ও মেরামত লাইনে পর্যাপ্ত পাথর পুরাতন রেললাইন বদল, কাঠের নড়বড়ে স্লিপার বদলসহ অর্ধশত প্রকল্প নেয়া হয়। এজন্য ব্যয় দেখানো হয় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা। এতে লোক দেখানো কিছু কাজ হলেও আসলে কাজের কাজ হয়নি। হয়েছে বড় লুটপাট। যদিও এ সময় রেলপথ ঝুঁকিমুক্ত ঘোষনা দিয়ে কিছু রুটে ট্রেনের গতি ঘন্টায় ১০০ কিলোমিটার করা হয়। প্রথম প্রথম এমনটি দেখা গেলেও এখন আর তা নেই। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ফের রেলের গতি আগের চেয়ে কমে ৭০/৮০তে নেমেছে। বেড়েছে রেল দূর্ঘটনার সংখ্যা। যদিও এমনটি মানতে নারাজ রেলের প্রকৌশল বিভাগ। তাদের মতে কিছু লাইন ও ব্রীজ সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে আরো কিছু নতুন প্রকল্প নেয়া হয়েছে। এগুলো শেষ হলে ফের রেলের গতি বাড়বে।
রাজশাহী রেলের সূত্র জানান, পশ্চিম রেলের লাইনে যে ধারণক্ষমতা তার থেকে দ্বিগুনের বেশি ট্রেন নিয়মিত চলাচল করছে রাজশাহী রুটে। অথচ লাইন উপযোগী না করে একের পর এক ট্রেন বাড়িয়ে চলেছেন তারা। বলা হচ্ছে যাত্রীদের চাহিদার দিকে লক্ষ্য রেখে তা করা হচ্ছে। ধারণক্ষমতা অনুসারে প্রতিদিন রাজশাহী রুটের রেল লাইনের ওপর দিয়ে ২২টি ট্রেন চলাচল করতে পারে। কিন্তু সেই লাইনে বর্তমানে চলছে অর্ধশত ট্রেন। আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা চলছে। রেল কর্তৃপক্ষ যাত্রীদের নিরাপদ চলাচলের বিষয়টা নিশ্চিত না করে একের পর এক ট্রেনের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। চাহিদা পূরনের কথা বলে মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলা হচ্ছে।
সিডিউল বিপর্যয় প্রসঙ্গে বলা হয় ক্যাপাসিটির দ্বিগুনের বেশি ট্রেন চলার ফলে ট্রেনগুলোকে পাসিং দেবার জন্য স্টেশনের বাইরের বিভিন্ন স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখতে হচ্ছে। এর সাথে যুক্ত হয়েছে তিনটি বিরতিহীন ট্রেন। সেগুলোকে অগ্রাধিকার দিতে হচ্ছে। তাছাড়া রেলপথ ঝুঁকিপূর্ণ থাকায় গতি কমানো হয়েছে। একটু এদিক ওদিক হলে দূর্ঘটনা নিশ্চিত। এমন ঝুঁকির মধ্যে চলছে যাত্রীবাহী ও মালগাড়ি। বিদেশ থেকে আনা দ্রুত গতির বগিগুলোর সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে সময় বাড়ছে। ঘটছে সিডিউল বিপর্যয়। রেলপথের স্থায়ী সংস্কার ছাড়া এর উন্নয়ন সম্ভব নয়। আরো ট্রেন বাড়াতে গেলে দূর্ঘটনাও আরো বাড়ার শঙ্কা থেকে যায়।
রাজশাহীর আব্দুলপুর রুটের গুরুত্বপূর্ণ রেল লাইন বহুদিন ধরেই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ২০০১ সালে কিছু সংস্কার হলেও পেরিয়ে গেছে আঠারো বছর। নেই পাথর, পঁচা কাঠের স্লিপার, নেই ক্লিপ। নড়বড়ে হয়ে আছে সবকিছু। কোনমতে জোড়াতালি দিয়ে রেল চলাচলের উপযোগী করে রাখা হয়েছে। ফলে এ রুটে প্রায় ঘটছে লাইনচ্যুতির ঘটনা। বাচ্চারা লাল মাফলার দেখিয়ে নিশ্চিত বড় দূর্ঘটনার হাত থেকে ট্রেন রক্ষার ঘটনাও ঘটেছে। রেলের সূত্র জানান, এ রুটে নতুন একটা লাইন করার বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয় চিন্তাভাবনা করছে। তা বাস্তবায়িত হলে এ রুটে দূর্ভোগ কমবে।
রেলের গতি বাড়ানোর জন্য চারশো কোটি টাকা ব্যয়ে সংস্কার কাজের পরও কেন গতি বাড়েনি এনিয়ে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে কালো বিড়াল তথ্য। রেলের পথে সামান্য কিছু পাথর ফেলে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে পুরো বিল। এ নিয়ে তদন্তে নেমেছে দুদক। শুধু কি পাথর ? স্টেশনে স্টেশনে পরিচ্ছন্নতার নামে বিøচিং পাউডার ভীম পাউডারসহ অন্যান্য মালামাল কেনা দেখানো হলেও বাস্তবে তা হয়নি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বলেন, রেলের বাবুরা ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত আর বাইরে একটি রাজনৈতিক সিন্ডিকেট যোগসাজস করে এক দশক ধরে নিয়োগ বানিজ্য, টেন্ডারের নামে কাজ ভাগাভাগি করে লুটে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। দায়সারা গোছের কাজ দিয়ে হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে। বড় কর্তারা বদলি হয়ে চলে গেছে। একে অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় সেরেছে। ফলে রেলের উন্নয়নে সরকারের নেয়া হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ দেখালেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। রেলভবনে টেন্ডার নিয়ন্ত্রন করে জিরো থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক হওয়াওয়ালাদের সংখ্যাও কম নয়। এইতো ক’দিন আগেও রেলের টেন্ডার নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের দু’গ্রæপের সংঘর্ষে একজনের প্রাণ গেল। এসব নিয়ে সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ জানাবে কিভাবে। রেলেরতো সর্বাঙ্গ পঁচে গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।