পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বহুল আলোচিত গুলশানের হোলি আর্টিজান মামলার রায় ছাপিয়ে আলোচনায় উঠে এসেছে আসামির মাথায় থাকা আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট তথা আইএসে’র প্রতীক সম্বলিত টুপি। এত নিরাপত্তার মধ্যেও দু’জন আসামির কাছে কীভাবে এই টুপি গেলো- সেই প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। সাধারণ মানুষের মতো খোদ মন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ভাবনায় পড়েছেন এই টুপির রহস্য নিয়ে। টুপির ঘটনার রহস্য উদঘাটনে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কারা কার্তৃপক্ষ। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এদিকে, আদালতের গারদ থেকে আসামি রিগ্যানকে এজলাসে নেওয়া এবং রায় ঘোষণা শেষে প্রিজন ভ্যানে তোলার মধ্যবর্তী বিভিন্ন সময়ে তার মাথা কখনো ফাঁকা, কখনো কালো টুপি আবার আইএসের প্রতীক সম্বলিত টুপি দেখা গেছে। একজন ব্যক্তির মাথা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকম থাকায় বিষয়টি নিয়ে আরও রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সকালে আদালতে আনার সময় কারও মাথায় এমন টুপি ছিল না। বের হওয়ার সময় রাফিউল ইসলাম ওরফে রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যানের (২২) মাথায় এই টুপি দেখা যায়। পরে আসামিদের প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় আরেক আসামি মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব গান্ধী ওরফে সুভাষ ওরফে শান্ত ওরফে টাইগার ওরফে আদিল ওরফে জাহিদের (৩২) মাথায়ও একই টুপি দেখা যায়। কারাগার থেকে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে এসব আসামিদের আনা হলেও আইএসের প্রতীক সংবলিত টুপি তারা কোথায় পেলেন- তা নিয়ে উপস্থিত সবার মধ্যে বিস্ময় ও প্রশ্ন তৈরি হয়। তারা কারাগার থেকে এ টুপি নিয়ে এসেছেন, নাকি আদালতে আনার সময় বা পরবর্তীতে কোনোভাবে তাদের কাছে এই টুপি এসেছে- রায়ের পর এই একটি বিষয় নিয়ে আদালত চত্বরে আলোচনার ঝড় ওঠে।
রায় ঘোষণার সময় উপস্থিত কেউ কেউ বলেন, দুপুরের দিকে ৮ আসামির মধ্যে ৭ জনের মৃত্যুদন্ড ও ১ জনকে খালাশ দিয়ে রায় ঘোষণা করেন আদালত। রায় ঘোষণার পরপরই আসামিরা এজলাসের মধ্যেই চিৎকার-চেঁচামেচি ও অকথ্য ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। এ সময় আদালত ভবনের পাঁচতলার এজলাস থেকে লিফটে করে নামার সময় এক আসামির মাথায় আইএস’র প্রতীক সম্বলিত টুপি দেখা যায়। ঘটনার সময় এজলাসের কাছে উপস্থিত কেউ কেউ বলছেন- আদালতে প্রথমে তাকে কালো টুপি পরা দেখা যায়। আবার কেউ বলেন এজলাসে থাকতেই আইএস’র ওই টুপি পরেছেন।
এ বিষয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের (কেরানীগঞ্জ) জেলার মাহবুবুল ইসলাম বলেন, হলি আর্টিজানের মামলায় ৮ আসামিকে আমরা আদালতে পাঠানোর উদ্দেশে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করি। এদের মধ্যে ৭ জনের কাছে কিছুই ছিল না, একজনের কাছে নামাজের জন্য সাদা টুপি ছিল। আইএস’র টুপির বিষয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে- সেটি আমাদেরও প্রশ্ন। তিনি নিজেও এমন টুপি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তিনি আরও বলেন, আদালতের রায়ের পরও তাদের আমরা রিসিভ করেছি। চেক করে তাদের কারাগারের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়েছে, কিন্তু তখনও এমন টুপি পাওয়া যায়নি। পুলিশের প্রসিকিউশন বিভাগের উপ কমিশনার জাফর হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি নানা মাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি।
এদিকে, আসামি রিগ্যানকে কারাগার থেকে প্রথমে আদালতের গারদে হাজির এবং গারদ থেকে এজলাসে নেওয়া ও এজলাস থেকে বের করে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় কখনো তার মাথায় টুপি ছিল এবং টুপি ছাড়া দেখা গেছে। ইনকিলাবের কাছে থাকা ছবিতে দেখা যায়- আদালতের গারদ থেকে বের করে এজলাসে নেওয়ার সময়ে রিগ্যানের মাথায় আইএসের প্রতীকবিহীন একটি কালো টুপি ছিল। পরে রায় ঘোষণা শেষে আদালত ভবন থেকে নিচে নামানো হলে তার মাথা ফাঁকা দেখা যায়। আবার রিগ্যানকে প্রিজন ভ্যানে তোলার সময় তার মাথায় আইএসের প্রতীক সম্বলিত ওই টুপিটি দেখা যায়।
গতকাল দুপুরে সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সংবাদ সম্মেলনেও টুপির বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল। জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বিষয়টি জেনেছি। এটি নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। আমি এখনই তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলব।
এই বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, এটি আমরা দেখেছি, ছবিও দেখেছি। আমরা বিস্মিত হয়েছি। কারাগার থেকে আনার সময় আসামিদের তল্লাশি করে দেখা হয়। তাদের সঙ্গে কি আছে তা দেখা হয়। এ ধরনের টুপি তাদের কাছে কীভাবে গেল, বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হবে। এছাড়া দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমার জানামতে আইএসের কোনো টুপি নেই। আইএস’র সৃষ্টি থেকে এ পর্যন্ত তাদের কোনো টুপি দেখা যায়নি। তারপরও তাদের কোনো টুপি আছে কিনা তা বিশ্লেষণ করে দেখা হবে। পাশাপাশি কারো গাফলতির কারণে এরকম টুপি আসামির কাছে এসেছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে।
মহানগর দায়রা জজের নিচতলার গারদের দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক হারুনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আসামিদের চেক করা হয়- তাদের কাছে ছুরি-চাকু বা বিস্ফোরক জাতীয় কিছু আছে কিনা। তাদের কাছে টুপি থাকলে, কিংবা টুপির মধ্যে কী লেখা আছে- এটা বোঝা সম্ভব নয়।
কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি
এদিকে, টুপির বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। আইজি প্রিজন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তাফা কামাল পাশা বলেন, এই টুপি সে কারাগার থেকে সংগ্রহ করেছে কি না- তা খতিয়ে দেখতে এডিশনাল আইজি প্রিজনকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এ ঘটনায় কারও অবহেলা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, রায় ঘোষণার পর দেশের সব কারাগারে নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।