মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : বিশ্বপ্রকৃতি ধ্বংসের আশংকা প্রতিদিনই বেড়ে চলেছে। অতীতের যে কোনও সময়ের তুলনায় বর্তমানে এই আশঙ্কা নজিরবিহীন কিংবা অতুলনীয় বলা চলে। জলবায়ুর মনুষ্যসৃষ্ট জনিত পরিবর্তন এবং অন্ধ-মুনাফার উৎপাদন ব্যবস্থার ধারাবাহিকতা বিশ্বপ্রকৃতির ওপর এই নজিরবিহীন হুমকির সমান্তরালে বেড়েছে প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনে জড়িতদের খুন হওয়ার প্রবণতা। অতীতের যে কোনও সময়ের চেয়ে বেশি ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন তারা। পরিবেশ রক্ষার প্রশ্ন আর পরিবেশকর্মীর জীবনের সুরক্ষার প্রশ্ন তাই সমার্থক হয়ে উঠেছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায় এক বছরেই ১৮৫ পরিবেশকর্মী খুন হয়েছে। প্রাণ-প্রকৃতি-প্রতিবেশ নিয়ে সরব বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল উইথনেস-এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে এইসব অনুসন্ধান রিপোর্ট তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনে ২০১৫ সালে সারা বিশ্বে ১৮৫টি নিহতের ঘটনা নথিবদ্ধ করেছে গ্লোবাল উইথনেস। যা ২০১৪ সাল থেকে ৫৯ শতাংশ বেশি। ২০০২ সাল থেকে এ সংক্রান্ত তথ্য ও পরিসংখ্যান সংগ্রহ করছে সংস্থাটি। তারা জানিয়েছে, সেই সময় থেকে এ পর্যন্ত সময় বিবেচনায় নিলে এক বছরে এটিই সর্বোচ্চ খুনের ঘটনা। ২০১৫তে সংঘটিত ১৮৫ খুনের মধ্যে ৫০ জনই নিহত হয়েছেন ব্রাজিলে। ফিলিপাইনে নিহত হয়েছেন ৩৬ জন। এ দুই দেশে প্রতি সপ্তাহে নিহত হচ্ছেন অন্তত তিনজন পরিবেশকর্মী। উল্লেখ্য, এখানে কেবল গ্লোবাল উইথনেস-এর প্রতিবেদনের নিহতের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়েছে। প্রকৃত নিহতের সংখ্যা অনেক বেশি হতে পারে বলে জানিয়েছে গ্লোবাল উইথনেস। প্রকৃতি রক্ষার আন্দোলনগুলো কখনও আদিবাসী ভূমি রক্ষার নামে, কখনও খনিবিরোধিতার নামে, কখনও বাধবিরোধিতার নামে উপস্থাপন হয়। দারিদ্র্য, দুর্নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে বিশ্বজুড়ে সক্রিয় আন্তর্জাতিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গ্লোবাল উইথনেসের প্রচারণা প্রধান বিলি কেইট বলেন, খনিজ, কাঠ ও পাম অয়েলের মতো পণ্যের চাহিদা আছে বলেই সরকার ও অপরাধী চক্র ভূমির দখল নিচ্ছে। এসব থেকে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছে। যারাই এর বিরুদ্ধে দাঁড়াচ্ছেন তারাই হারাচ্ছেন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা। পরিণত হচ্ছেন রাষ্ট্র ও ভাড়াটে খুনীদের লক্ষ্যবস্তুতে। কেইট আরও বলেন, আমরা বেশ কিছু হত্যাকা-ের তথ্য সংগ্রহ করেছি। কিন্তু তারপরও বাদ পড়েছে আরও অনেক হত্যার ঘটনা। এই হত্যাকা-গুলো বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। যদিও অন ডেঞ্জারাস গ্রাউন্ড শীর্ষক ওই প্রতিবেদনে আশঙ্কা প্রকাশ করে উল্লেখ করা হয়, নির্ভরযোগ্য তথ্য ও তথ্য প্রাপ্তির সহজলভ্যতার অভাবে সংঘটিত হত্যাকা-ের প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় করা সম্ভব হয়নি। প্রাপ্ত সংখ্যার চেয়ে বাস্তবে হত্যাকা-ের সংখ্যা আরও অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর হয়ে ভূমির অধিকার নিয়ে লড়াই করতে গয়ে নিহত অনেক পরিবেশকর্মীই পেয়েছেন মরণোত্তর খ্যাতি। ব্রাজিলের চিকো মেন্দেস অ্যামাজনের রেইনফরেস্ট রক্ষা করতে গিয়ে এক র্যাঞ্জারের হাতে নিহত হন ১৯৮৮ সালে। মার্কিন নান সিস্টার ডরোথি স্ট্যাং অ্যামাজনের পারা রাজ্যের ওনুপা শহরে নিহত হন ২০০৫ সালে। এই হত্যাকা-ে চারজনকে অভিযুক্ত করা হয়। কিন্তু এমন অনেকেই আছেন যারা সংশ্লিষ্ট জাতি-গোষ্ঠীর বাইরে তেমন কোনও পরিচিতি ছাড়াই পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। ফিলিপাইনের পরিবেশ কর্মী মিশেল কাম্পোসের পিতা ও পিতামহ দু’জনেই পূর্বসূরিদের ভূমি রক্ষায় লড়তে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। ওই সময় খনি স্থাপনের জন্য বাস্তুচ্যুত হন কয়লা, নিকেল ও স্বর্ণে সমৃদ্ধ মিন্দানাও অঞ্চলের লুমাদ গোষ্ঠীর অন্তত ৩ হাজার মানুষ। সেই অঞ্চলের মানুষ জানান, ২০১৫ সালেই সেখানে নিহত হয়েছেন ২৫ পরিবেশকর্মী। কাম্পোস বলেন, আমরা হুমকির মুখে পড়ি, অত্যাচারিত ও অপমানিত হই এবং খুন হই। খনি প্রতিষ্ঠানগুলোকে রক্ষা করে আধাসামরিক বাহিনী। তিনি আরও বলেন, আমার পিতা, পিতামহ ও স্কুলের শিক্ষক একের পর এক নিহত হয়েছেন। আমরা সবাই জানি কারা তাদের হত্যাকারী। অথচ তারা এখনও গোষ্ঠীর মধ্যেই নিশ্চিন্তে চলাফেরা করছেন। সরকার আমাদের কোনওভাবেই সাহায্য করছে না। এদিকে, ব্রাজিলে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন ক্রমেই ভয়ংকর অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে লড়াই হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এই অপরাধী চক্রগুলোতে মূলত স্থানীয় মানুষরাই বিভিন্ন দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে কাজ করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ধারাবাহিক হত্যাকা-ের সবচেয়ে সাম্প্রতিক শিকার ইসিদিও আন্তোনিও। তিনি মারানহো রাজ্যে ছোট একটি গোষ্ঠীর নেতা ছিলেন। গোষ্ঠীর ভূমি থেকে অবৈধভাবে গাছ কাটার প্রতিবাদ করায় বছরখানেক ধরে তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এই হত্যাকা-ের কোনও তদন্ত করেনি পুলিশ। ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা জানান, ব্রাজিল থেকে সংগ্রহীত ও আন্তর্জাতিকভাবে বাজারজাত করা কাঠের ৮০ শতাংশই অবৈধ। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও চীনে বিক্রি হয় এসব কাঠ। গ্লোবাল উইথনেস জানায়, ব্রাজিলে কৃষি বাণিজ্য, পানিবিদ্যুৎচালিত বাঁধ ও পানির অধিকার নিয়ে কাজ করা কর্মীরা নিহত হচ্ছেন আধাসামরিক বাহিনীর হাতে। কেইট বলেন, ছোট ছোট গ্রামগুলোতে অথবা রেইনফরেস্টের গভীরে সংঘটিত এই সব হত্যাকা- অপ্রকাশিতই রয়ে যাচ্ছে। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।