চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
একবার নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ সফরে ছিলেন। মরুভূমির সফর। সকলেরই প্রচ- পানির পিপাসা লেগেছে। পানিও শেষ! কী করা যায়? তারা নবীজীকে জানালেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা. ও আরেকজন সাহাবীকে পাঠালেন পানির খোঁজে। কোথাও পানি নেই। ইতিমধ্যে দেখলেন, এক বৃদ্ধা দুই মশক পানি নিয়ে উটে চড়ে যাচ্ছে। এই তো পানির সন্ধান পাওয়া গেছে! এই বুড়ির কাছে জিজ্ঞেস করলেই পাওয়া যাবে পানির সন্ধান। কিন্তু হতাশ হলেন, যখন বুড়ি বলল: ‘দিল্লি বহুত দূর হ্যায়’; এখান থেকে পানির দূরত্ব এক দিনের রাস্তা। গতকাল এ সময় আমি পানি নিয়ে রওয়ানা হয়েছি।
কী করা যায়! অগত্যা তারা বুড়িকে বললেন, বুড়ি মা! আপনি যদি একটু কষ্ট করে আমাদের সাথে আসতেন। তারা বুড়িকে নবীজীর কাছে নিয়ে এলেন। নবীজী বুড়ির মশকের মুখ খুললেন। সেখান থেকে একটি পাত্রে কিছু পানি ঢালা হল। (সেখান থেকে নবীজী মুখে একটু পানি নিলেন। সেই পানি আবার মশকের মধ্যে ঢেলে দেওয়া হল।) তারপর মশকের উপরের মুখ বেঁধে দেওয়া হল এবং নিচের মুখ খুলে দেওয়া হল। ট্যাপের মত সেখান থেকে পানি বের হতে লাগল।
তারপর সবাইকে বলা হল, এখান থেকে পানি নাও; নিজেরা পান কর, তোমাদের বাহনজন্তুকে খাওয়াও। সকলে পানি নিল। দুই মশকে কতটুকু আর পানি থাকে। কিন্তু ওই দুই মশক থেকে কাফেলার সকলে তাদের প্রয়োজন মত পানি নিল। যেভাবে আমরা কল থেকে পানি নিই। এমন কি সেই পানি থেকে কেউ কেউ গোসলের পানিও নিল!
বুড়ি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কা- দেখছিল আর অবাক হচ্ছিল। তার আর বিস্ময়ের সীমা রইল না। সামান্য দুইটা মশকে আর কতটুকু পানি থাকতে পারে! কিন্তু তার চোখের সামনে এ দুই মশক থেকে শত শত মশক পানি নেওয়া হল। এ দেখি আজব কা-!
সকলে যখন নিজ নিজ প্রয়োজন মত পানি সংগ্রহ করল, বুড়ির মশক বুড়িকে ফিরিয়ে দেওয়া হল। বুড়ি দেখল, আমার মশক থেকে এত পানি নেওয়ার পরও এর পানি এতটুকুও কমেনি; বরং আগের চেয়ে আরো পূর্ণ দেখা যাচ্ছে। নবীজী তার মশক ফিরিয়ে দিলেন এবং বললেন: আপনি তো দেখছেন, আপনার পানি একটুও কমেনি; আসলে (আপনার পানির মাধ্যমে) আল্লাহ আমাদের পানি পান করালেন।
এরপর নবীজী সাহাবীদের বললেন, একটি কাপড় বিছাও এবং তাঁর জন্য যে যা পার হাদিয়া দাও। কেউ দিল খেজুর, কেউ আটা, কেউ যব, অনেক খাবার জমা হল বুড়ির জন্য। এগুলো বুড়িকে হাদিয়া স্বরূপ দেওয়া হল। বুড়ি তো মহা খুশি। আমার পানিও একটু কমল না আবার পেলাম এতগুলো খাবার। মনের সুখে বুড়ি রওনা হল বাড়ির দিকে।
বুড়ি যখন বাড়িতে পৌঁছল ততক্ষণে বেলা পড়ে গেছে। সকলে তার দেরি হওয়ার কারণ জিজ্ঞেস করল। বুড়ি তখন খুলে বলল সব। মুহাম্মাদ নামের যে লোকটা নিজ বাপ-দাদার ধর্ম ত্যাগ করেছে দুইজন লোক আমাকে তার কাছে নিয়ে গেল। তারপর ঘটল আজব এ ঘটনা। সকলে তো শুনে তাজ্জব! বুড়ি বলল, আল্লাহর কসম! আমার সব দেখে মনে হয়েছে, সে হয়ত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় যাদুকর অথবা সত্যই সে আল্লাহর প্রেরিত রাসূল। এরপর থেকে মুসলিমরা ঐ বৃদ্ধার এলাকার আশপাশের এলাকায় অভিযান চালাতো কিন্তু বুড়ির এলাকায় আক্রমণ করত না। এ দেখে বুড়ি নিজ কওমকে বলল, আমার মনে হচ্ছে, তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই তোমাদের এড়িয়ে যাচ্ছে; তোমাদের উপর আক্রমণ করছে না। তোমরা ভেবে দেখ, ইসলাম গ্রহণ করবে কি না। তার কথায় সবাই রাজি হয়ে গেল এবং ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিল। (দ্র. সহীহ বুখারী, হাদীস ৩৪৪; সহীহ মুসলিম, হাদীস ৬৮২; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৯৮৯৮)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।