Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্ধশত দোকান পুড়ে ছাই

রাজধানী সুপার মার্কেটে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৯, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:১৪ এএম, ২১ নভেম্বর, ২০১৯

ঢাকার টিকাটুলির রাজধানী সুপার মার্কেটের অর্ধশত দোকান ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে পুড়ে গেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা সোয়া ৫ টার দিকে মার্কেটের দোতালায় একটি তৈরি পোষাক বিক্রির দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। দোতালার সব দোকান তৈরি পোষাক বিক্রির দোকান বলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ওই সময় মার্কেট খোলা ছিল। আগুন দেখে আর্তরক্ষার্থে চিৎকার করে দোকানের ক্রেতা ও বিক্রেতারা হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে পড়েন। খবর পেয়ে প্রথম দফায় ফায়ার সার্ভিসের ৪ টি ইউনিট গিয়ে আগুন নেভানো শুরু করে। আগুনের লেলিহান শিখা বাড়তে থাকায় পর্যায়ক্রমে ২৫ টি ইউনিট দুই ঘন্টা চেস্টা করে সন্ধ্যা সোয়া ৭ টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। এ আগুনে অর্ধশত দোকানের সব মালামাল পুড়ে গেছে। মার্কেটের দোকান মালিকরা ধারণা করছেন, ক্ষয়ক্ষতি প্রায় অর্ধকোটি টাকা। রাজধানী সুপার মার্কেট সংলগ্ন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মুক্তিযোদ্ধা মুরাদ কমিউনিটি সেন্টারে র‌্যাব-৩ এর কার্যালয় অবস্থিত। 

ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, অগ্নিকা-ের পর পরই পুরো এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। টিকুটুলি ছাড়াও মতিঝিল, গুলিস্তানসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে শত শত যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকা পড়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারন মানুষ। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যস্ত থাকলে এসময় আশপাশের উৎসুক জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যরা। মার্কেটের দ্বিতীয় তলার দোকান থেকে অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয় বলে ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে।
এই মার্কেটের দোকান মালিক সমিতির স্বঘোষিত সভাপতি ৩৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ময়নুল হক মঞ্জু সম্প্রতি চাঁদাবাজি ও দোকান দখলের অভিযোগে র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হন। নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটের দোতালায় ৬৩ টি দোকান রয়েছে। এসব দোকানে বেশিরভাগই তৈরি পোষাক ও কসমেটিক্স বিক্রি হয়। মার্কেটের নিচতলায় বেশিরভাগ দোকানে জুয়েলারি সামগ্রী বিক্রি হয়।
ওয়ারী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, রাজধানী সুপার মার্কেট বন্ধ থাকে রোববার। আগুন যখন লাগে তখন সব দোকান খোলাই ছিল। বিকালে মার্কেটের পূর্ব দিক থেকে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। এরপর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লে ব্যবসায়ী ও অন্যরা বেরিয়ে যান। বহু দূর থেকেও আগুন ও ধোঁয়া দেখা যায়। ১৯৯৫ সালে চালু হওয়া দোতলা টিনশেড এই বিপণি বিতানে নিত্য প্রয়োজনীয় নানা পণ্যের ১ হাজার ৭৮৮টি দোকান রয়েছে। তবে আগুনে কী পরিমাণ দোকানের ক্ষতি হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য এখনও বলা সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আল মাহের জুয়েলার্সের মালিক আবু তাহের বলেন, নিচতলায় তার দোকানসহ ৪৩টি গয়নার দোকান ছিল। আগুন লাগার পর প্রাণ হাতে নিয়ে বেরিয়ে আসার সময় শাটার নামানো হলেও অনেকে তালা মারতে পারেননি। তাহেরের ধারণা মার্কেটের দোতলায় মাঝ বরাবর আগুনের সূত্রপাত হয়। সেখানে পোশাক, টেইলার্স, ফোম, কসমেটিকস, খেলনা ও খাবারের দোকান ছিল। তবে এসব দোকানের খাবার বাইরে থেকে রান্না করে আনা হয়।
তিনি বলেন, আগুন লাগার পর পাশের অভিসার সিনেমা হল সংলগ্ন রাস্তাসহ আশপাশের সব রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যরা রাস্তায় অবস্থান নিয়ে ভিড় সামলানোর চেষ্টা করেন।
ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাজ্জাদ হোসাইন সাংবাদিকদের বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ভেতরের কী অবস্থা আমরা দেখছি।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রাজধানী সুপার মার্কেটের নিচতলায় প্রায় দেড় হাজার ছোট বড় দোকান রয়েছে। দোতলায় রয়েছে এক থেকে দেড়শ’। মার্কেটের উত্তর দিকের নিউ রাজধানী সুপার মার্কেটটি কেবল দোতলা। মূলত এই দোতলাতেই আগুন লাগে।
তিনি আরো বলেন, একমাস দশদিন আগে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষে রাজধানী মার্কেটে মহড়ার কাজ হয়েছিল। সে সময় মার্কেটের বৈদ্যুতিক তারসসহ আরো কিছু দুর্বলতা পাওয়া যায়। এসব ত্রুটি সারাতে মার্কেট কর্তৃপক্ষকে একমাস সময় দেওয়া হয়। মার্কেট কর্তৃৃপক্ষ আমাদের কাছে দুই মাস সময় চেয়েছিল। তার আগেই অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটলো।
নিচতলার মা কালেকশনের স্বত্ত্বাধিকারী নারায়ণচন্দ্র জানান, বাথরুম থেকে তিনিই প্রথম আগুন দেখতে পান। এরপর সবাইকে জানান। তার ধারণা, দ্বিতীয় তলার ফোম বেডশিটের দোকান থেকেই আগুনের সূত্রপাত। রাব্বি ফ্যাশনের স্বত্ত্বাধিকারি আরিফুর রহমান জনান, দোতলার ৩০টির মতো দোকান পুড়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, মার্কেটটি টিনশেডের তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে তাদের বেগ পেতে হয়। এছাড়া মার্কেটের দুই পাশে দোকান, মাঝে সরু গলি রয়েছে।
রাত সাড়ে ৮টায় ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশনন্স অ্যান্ড মেনটেইনেন্স) কর্নেল জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা এখনও হতাহতের কোনও খবর পাইনি। আগুন ইতোমধ্যেই নিয়ন্ত্রণে এসেছে। নির্বাপণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কাজ চলবে। তিনি আরও বলেন, আগুন লাগার কারণ বের করার জন্য বৃহস্পতিবার একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। তারপর পুরো বিষয়টি তদন্ত করে জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি ২০/২২টি দোকান পুড়ে গেছে। আমরা সব ক্লিয়ার করে ভেতরে ঢুকবো, তারপর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানো যাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অগ্নিকান্ড


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ