নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
প্রথম দিন বিকালেই দারুণ জায়গায় বল ফেলে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা নিয়েছিলেন আবু জায়েদ রাহী। ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই রোহিত শর্মাকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন মাত্র ৬ রানে। দিনের শেষাংশে তার বলে উঠেছিল মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ক্যাচও। ইমরুল কায়েস তা নিতে পারেননি। দ্বিতীয় দিনেও জায়গায় বল ফেলে স্যুইং আদায় করে গেলেন রাহী। শুরুতেই তার বলে ক্যাচ উঠল। এবার স্লিপে তা রাখতে পারলেন না মেহেদী হাসান মিরাজ। দমে না গিয়ে বল করে গেলেন একই তেজ নিয়ে। মিলল ফল। চেতেশ্বর পূজারা আর বিরাট কোহলিকে ফিরিয়ে বাড়ালেন একাদশে আরও এক পেসার না থাকার আফসোস। তবে সেই আফসোসে পোড়ার মতো মনের অবস্থাও যে নেই বাংলাদেশের!
প্রথম দিনে ভারতীয় বোলিং গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং। দ্বিতীয় দিনে ভারতের ব্যাটসম্যানরা একরকম উড়িয়ে দিল বাংলাদেশের বোলিং। দুই দিনেই তাই প্রায় নিশ্চিত হয়ে গেছে ম্যাচের ভাগ্য। ৬ উইকেটে ৪৯৩ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে ভারত। তাদের লিড হয়ে গেছে ৩৪৩। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করতে পেরেছিল মোটে ১৫০। ৯০ ওভার পুরো হয়নি দ্বিতীয় দিনে। কিন্তু দিনে ৮৮ ওভার খেলেই ভারত তুলেছে ৪০৭ রান!
আগের দিন ৩২ রানে সহজ ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়া মায়াঙ্ক আগারওয়াল করেছেন ক্যারিয়ার সেরা ২৪৩। ৮ ছক্কায় স্পর্শ করেছেন ভারতীয় রেকর্ড। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়ে আজিঙ্কা রাহানে ফিরেছেন ৮৬ রানে। ফিফটি করেছেন চেতেশ্বর পুজারা ও রবীন্দ্র জাদেজাও।
অথচ দিনের শুরুটায় ছিল লড়াইয়ের ইঙ্গিত। পুজারাকে ফিফটির পর ফিরিয়ে আবু জায়েদ শূন্য রানে ফেরান বিরাট কোহলিকে। কিন্তু সেই লড়াইয়ের ধারা পরে আর ধরে রাখতে পারেনি বাংলাদেশ। বরং ধারহীন বোলিংকে কাজে লাগিয়ে ভারতীয়রা মেতে উঠেছে রান উৎসবে। বাকিদের করুণ বোলিংয়ের দিনে বাংলাদেশের হয়ে আবু জায়েদ নিয়েছেন চারটি উইকেট। ইন্দোর টেস্টের আরেকটি হতাশার দিনে বাংলাদেশ দলের উজ্জ্বল মুখ এই ২৬ বছর বয়সী পেসার।
শুধুই ইন্দোর টেস্ট নয়, গত বছর জুনে টেস্ট অভিষেকের পর থেকে আবু জায়েদ দলের একমাত্র পেসার, উইকেটশিকারে যিনি কিছুটা সফল। গত দেড় বছরে ৬ টেস্টে উইকেট পেয়েছেন ১৫টি। এ সময়ে বাকি পেসারদের সম্মিলিত উইকেট ৭টি। রোহিতকে ফিরিয়েছেন ৬ রানে, কোহলিকে দেননি রানের খাতা খুলতেই। ৫৩ রান করা চেতেশ্বর পূজারাকেও আউট করেছেন। সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকা রাহানেও শিকার হয়েছেন আবু জায়েদের। ইমরুল কায়েস স্লিপে দাঁড়িয়ে ক্যাচটা না ছাড়লে ডাবল সেঞ্চুরির দিকে এগোতে থাকা আগারওয়ালকে ফেরাতে পারতেন ৩২ রানেই। টেস্টে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং পেলেও নামের পাশে প্রথমবারের মতো লেখাতে পারতেন ৫ উইকেট।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে কোহলি আভাস দিয়েছিলেন, তিন পেসার নিয়ে খেলবেন তারা। স্বাগতিকরা ঠিকই নেমেছে তিন পেসার নিয়ে। গুঁড়িয়েও দিয়েছে বাংলাদেশকে। ঘাসের ছোঁয়া থাকা উইকেটে পেসারদের জন্য যথেষ্ট সহায়তা আছে, তারপরও বাংলাদেশ খেলছে দুই পেসার নিয়ে। প্রথম দিনের খেলা শেষেও অধিনায়ক মুমিনুল হক জানিয়েছিলেন, যাদের ওপর আস্থা আছে তারা খেলছেন ইন্দোর টেস্টে। স্কোয়াডে থাকা বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান ও ডানহাতি পেসার আল আমিন হোসেনের জায়গা হয়নি একাদশে।
বোলিং আক্রমণে আবু জায়েদ-ইবাদতের সঙ্গে আছেন তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। ভারতের খুব বেশি বাঁহাতি ব্যাটসম্যান না থাকায় মিরাজের জায়গায় একজন পেসার খেলাতে পারতো বাংলাদেশ। বোলিংয়ের পাশাপাশি মিরাজের ব্যাটিংয়ের কথা চিন্তা করেই হয়তো এই অফ স্পিনারকেই খেলানো হয়েছে। অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান নিষিদ্ধ থাকায় বাংলাদেশ ভাবছে ‘একজন কম’ নিয়ে খেলছে তারা। তাই সফরকারীরা হয়ে গেছে আরও রক্ষণাত্মক। প্রথম দিনের খেলা শেষে মুমিনুল জানান, বাড়তি ব্যাটসম্যান নিতে গিয়েই তিন পেসার নিতে পারেননি তারা।
ভারত খেলছে ছয় ব্যাটসম্যান ও পাঁচ বোলার নিয়ে। বাংলাদেশ একাদশ সাজিয়েছে সাত ব্যাটসম্যান ও চার বোলার নিয়ে। বাড়তি ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলা বাংলাদেশের বরাবরের অভ্যাস। নতুন কোচ এলেও সেই ধারা ধরে রেখেছে তারা।
অনেক কাঠ খড় পেরিয়ে ভারত এখন আইসিসি টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে। এক দিনে চূড়ায় ওঠেনি দলটি। প্রক্রিয়া মেনে ধাপে ধাপে নিজেদের এগিয়ে নিয়েছে তারা। এর একটি ছিল, একটু ঝুঁকি নিয়ে হলেও কার্যকর কম্বিনেশন তৈরি করা। ৬ ব্যাটসম্যান ও ৫ বোলারের কম্বিনেশন দারুণভাবে কাজ করছে তাদের ক্ষেত্রে।
দ্বিতীয় দিন সকালে পিচ রিপোর্ট দেওয়ার সময় সুনীল গাভাস্কার বলেন, এদিন উইকেট হবে দারুণ ব্যাটিং সহায়ক। ঘাসের রং আর সবুজ নেই্। উইকেট অনেকটাই বাদামী রংয়ের হয়ে গেছে। এই উইকেটেও প্রাণ জাগালেন আবু জায়েদ, সুইংয়ের পসরা সাজিয়ে মেলে ধরলেন নিজেকে। আরেক প্রান্তে আঁটসাঁট বোলিংয়ে চাপটা ধরে রাখলেন ইবাদত। প্রথম ঘণ্টায় প্রায় পুরোটা সময় নিজেদের নিংড়ে দিলেন দুই পেসার। এই দুই গতি তারকার বদৌলতেই ম্যাচে মাঝে মাঝে আনন্দের উপলক্ষ্য পায় বাংলাদেশ। একই সঙ্গে তিন পেসার না খেলানোর আক্ষেপটাও হয়তো বাড়ে আরেকটু।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-ভারত, ১ম টেস্ট ২য় দিন
টস : বাংলাদেশ, ইন্দোর
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫৮.৩ ওভারে ১৫০ (মুমিনুল ৩৭, মুশফিক ৪৩, লিটন ২১; ইশান্ত ২/২০, যাদব ২/৪৭, শামি ৩/২৭, অশ্বিন ২/৪৩)।
ভারত ১ম ইনিংস (১ম দিন শেষে) ২৪ ওভারে ৮৩/১ (আগারওয়াল ৩৬*, রোহিত ৬, পুজারা ৪১*; রাহী ১/১৯)
রান বল ৪ ৬
আগারওয়াল ক রাহী ব মিরাজ ২৪৩ ৩৩০ ২৮ ৮
পুজারা ক সাইফ ব রাহী ৫৪ ৭২ ৯ ০
কোহলি এলবি ব রাহী ০ ২ ০ ০
রাহানে ক তাইজুল ব রাহী ৮৬ ১৭২ ৯ ০
জাদেজা ব্যাটিং ৬০ ৭৬ ৬ ২
ঋদ্ধিমান বোল্ড এবাদত ১২ ১১ ২ ০
যাদব ব্যাটিং ২৫ ১০ ১ ৩
অতিরিক্ত (লেবা ১, নো ৩, ও ৩) ৭
মোট (৬ উইকেট, ১১৪ ওভারে) ৪৯৩
উইকেট পতন : ১-১৪ (রোহিত), ২-১০৫ (পুজারা), ৩-১১৯ (কোহলি), ৪-৩০৯ (রাহানে), ৫-৪৩২ (আগারওয়াল), ৬-৪৫৪ (ঋদ্ধিমান)।
বোলিং : এবাদত ৩১-৫-১১৫-১, রাহী ২৫-৩-১০৮-৪, তাইজুল ২৮-৪-১২০-০, মিরাজ ২৭-০-১২৫-১, মাহমুদউল্লাহ ৩-০-২৪-০।
*দ্বিতীয় দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।