বলকান উপদ্বীপের ছোট্ট এক স্বাধীন দেশ কসোভো। উচ্চারণ জটিলতায় অনেকেই কসোভা বলে থাকেন। কসোভো সর্বশেষ স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র। ইউরোপের বুকে ইসলামের স্মারক বুকে নিয়ে টিকে আছে। ইসলামের প্রথম শতাব্দীতেই কসোভোর মাটিতে ইসলাম আলো পৌঁছে যায়। আর ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ৭৯৭ হিজরিতে।
এরপরও বহু ত্যাগ ও সংগ্রামের বিনিময়ে কসোভোর মানুষ তাদের ঈমান ও ইসলাম টিকিয়ে রেখেছে। ইউরোপের ইসলাম বিদ্বেষী শক্তিগুলোর আক্রমণের শিকার হয়েছে অত্র অঞ্চলের মুসলিম জনগণ। সবশেষ নব্বইয়ের দশকে হানাদার সার্ব বাহিনীর হাতে লাখ লাখ মুসলিম প্রাণ হারায় এবং গৃহহারা হয় অসংখ্য মানুষ।
ইসলামের প্রথম শতাব্দীতেই এ অঞ্চলে ইসলামের স্নিগ্ধ হাওয়া পৌঁছে গিয়েছিল। তবে ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত হতে অনেক সময় লেগে গেছে। কসোভোয় ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় ৭৯৭ হিজরিতে। এরপর এখানে ইসলাম টিকিয়ে রাখতে বহু ত্যাগ ও সংগ্রাম করতে হয়েছে এখানকার মুসলমানদের। অবশেষে লাখ লাখ মুসলিমের রক্তের বিনিময়ে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে একটি স্বাধীন মুসলিম রাষ্ট্র।
কসোভোর আয়তন ১০ হাজার ৮৮৭ বর্গকিলোমিটার। রাজধানী প্রিস্টিনা। প্রধান ভাষা আলবেনীয় ও সার্বীয়। কসোভোর জনসংখ্যা ১৯ লাখ সাত হাজার ৫৯২ জন। যার মধ্যে মুসলমান রয়েছে ৯৫.৬ শতাংশ, রোমান ক্যাথলিক ২.২, অর্থডক্স ১.৫ ও অন্যান্য ধর্মের মানুষ রয়েছে ১ শতাংশেরও কম।
তাদের নান্দনিক পতাকাটিও বেশ অর্থবহ। নীল ভূমির ওপর একটি স্বর্ণালি মানচিত্রের খিলান, তার ওপর ছয়টি তারকা। যা সেখানকার প্রধান ছয়টি জাতি-গোষ্ঠীর ইঙ্গিত করে। আলবেনিয়ান, সার্বীয়, তুর্কি, গোরানি, রোমানি (প্রায়ই আশকালি এবং মিসরীয়দের সঙ্গে দলবদ্ধ) এবং বসনিয়ান।
যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশটি এখন নিজেদের নতুন করে গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সার্বদের হাতে ধ্বংস হওয়া ইসলামী সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনা এবং ধর্মীয় অবকাঠামোর পুনর্র্নিমাণের কাজ শুরু করেছে।
কসোভোর ধর্মবিদ্বেষী কমিউনিস্ট শাসকরা বিগত ৭০ বছর ধরে ইসলামী শিক্ষা, সংস্কৃতি ও সব ধরনের ধর্মীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে রেখেছিল। সার্ব বাহিনীর সৈন্যরা ধ্বংস করে দিয়েছিল প্রায় দুই শতাধিক মসজিদ।
এখন সেখানে গড়ে উঠছে নতুন নতুন মসজিদ-মাদরাসা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। আবার শিক্ষা কার্যক্রম চালু করে দেওয়া হয়েছে মাদরাসায়ে আলাউদ্দিন নামে একটি প্রাচীন ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। নতুন করে খোলা হয়েছে একটি বিশেষায়িত ইসলামিক কলেজ।
কসোভোর প্রতিটি জেলায় নির্মাণ করা হয়েছে একটি করে ইসলামিক সেন্টার ও পাঁচটি ধর্মীয় স্কুল। যেখানে শিক্ষার্থীদের ইসলাম ও আরবি ভাষা-সাহিত্য শেখানো হয়।
ওই দেশে ধর্মীয় শিক্ষার প্রসার ঘটাতে মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দানশীল মানুষের উদ্যোগে গঠিত ‘আলমাশিখাতুল ইসলামিয়া’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তারা সেখানে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও ইসলামী শিক্ষার বিস্তারে ব্যাপক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তাদের অধীনে ৫০০ আলেম ও মুবাল্লিগ কসোভোয় ইসলাম প্রচারের কাজ করছে। এরই মধ্যে তারা ২৪টি ইসলামী শিক্ষা ও প্রচারকেন্দ্র এবং ৫৫০টি মসজিদ নির্মাণ করেছে।
২০১৭ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি কসোভোকে স্বাধীন সার্বভৌম দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। কসোভোকে স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ছিল ১১৪তম। এবং ওআইসির ৫৭টি দেশের মধ্যে তাদের স্বীকৃতি প্রদানকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ছিল ৩৭তম।
গত বছর কসোভোর স্বাধীনতার ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সে দেশের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করে বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের ১৬ ফেব্রæয়ারি নিউ ইয়র্কে বাংলাদেশ মিশনে জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন ও কসোভোর কনসাল জেনারেল রাষ্ট্রদূত মিজ টেউটা সাহাতকাইজা নিজ নিজ দেশের পক্ষে যৌথ বিবৃতিতে সই করেন। স্বাধীনতা লাভের পর থেকে কসোভোর মানুষ আরো বেশি ইসলাম অনুরাগী হয়ে উঠছে।