মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ট্রাম্প ও এরদোগান দু’জনেই যোগাযোগের ‘ব্যাক চ্যানেল’ হিসাবে পরিবার বা ব্যবসায়িক সংযোগ ব্যবহারই নিরাপদ মনে করেন। এরদোগানের একাধিক উপদেষ্টা বলেছেন, তারা উভয়েই সন্দেহ করেন যে তাদের সরকারের নিজস্ব প্রতিষ্ঠানগুলোও তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারে। ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে প্রচলিত হওয়ার প্রায় এক দশক আগেই তুরস্ক প্রথম ‘গভীর রাষ্ট্র’ ধারণাটি প্রয়োগ করেছিল। গভীর রাষ্ট্র বলতে বোঝায় মূল মন্ত্রীসভার পাশাপাশি একটি ‘ছায়া মন্ত্রীসভা’ থাকা।
সম্প্রতি এরদোগান জামাতাদের মধ্যে ‘সেতু’ সম্পর্কে আশা প্রকাশ করে বলেছিলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একটি ধারা প্রতিষ্ঠিত করছে যাকে আমরা একটি গভীর রাষ্ট্র বলতে পারি। অবশ্যই তারা বাধা পাচ্ছে। এই বাধাগুলি আমাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা।’ তবে তুরস্কই একমাত্র দেশ নয় যেখানে ট্রাম্প পররাষ্ট্র নীতিতে অনানুষ্ঠানিক, পরিবারের সাথে পরিবারের অস্বাভাবিক তত্ত্ব প্রয়োগ করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, তার জামাতা কুশনার সউদী আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছেন। এ বিষয়ে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ প্রশাসনের প্রতিরক্ষা নীতি বিষয়ক সচিব এবং তুরস্কে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত এরিক এস এডেলম্যান বলেন, ‘ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের সাথে থাকা আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক বাদ দিয়ে, পারিবারিক ও ব্যাক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করছেন।’ তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এরদোগান এই ধরণের সম্পর্ক পছন্দ করবেন। কারণ তিনি নিজেই একটি পুঁজিবাদী শাসন পরিচালনা করছেন। তবে এটি সমস্ত আমেরিকানদের জন্য উদ্বেগের বিষয় হওয়া উচিত।’
এরদোগান ও ট্রাম্পের মধ্যে মিল খুব সামান্যই রয়েছে। এরদোগান মুসলিম বিশ্বের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা যিনি প্রায়শই যুক্তি দেখান যে পশ্চিমের পতন হচ্ছে। অপরদিকে ট্রাম্প উগ্র জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী, যিনি প্রায়শই মুসলিম এবং বিশেষত ইসলামপন্থী রাজনীতিকদের অবজ্ঞা করেন। ট্রাম্প সউদী আরব, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের শাসকদের পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে নিবিড় বন্ধুত্ব করেছেন, যারা এরদোগানের সবচেয়ে বড় শত্রু। যদিও, তুরস্কের সাথে ট্রাম্পের সম্পর্ক প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই। এক দশকেরও বেশি সময় আগে তুর্কী ব্যবসায়ী ইয়ালসিনডাগের আমন্ত্রণে ইস্তাম্বুলে যান ট্রাম্প। ইয়ালসিনডাগের শ্বশুর, বিজনেস টাইকুন আয়দিন ডোগানের সাথে আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে ট্রাম্প অর্গানাইজেশন ইস্তাম্বুলে তৈরী করে দুইটি বহুতল ভবন ও শপিংমল। যা ২০১২ সালে উদ্বোধন হয় ‘ট্রাম্প টাওয়ারস’ নামে। টাওয়ারটি ব্যবহারের জন্য ট্রাম্প অর্গানাইজেশন নাম মাত্র অর্থ দেয়া হয়। তবে এটি ট্রাম্পের নামে থাকা ইউরোপের প্রথম আবাসিক এবং বাণিজ্যিক টাওয়ার এবং উভয় পরিবার একে বড় সাফল্য হিসাবে বিবেচনা করে। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এরদোগান টাওয়ারটি উদ্বোধন করেন। সেখানে ট্রাম্প, তার বড় মেয়ে ইভানকা ও তার স্বামী কুশনার এবং ইয়ালসিনডাগ অংশ নিয়েছিলেন, যারা পরে তাদের পরিবারিক বন্ধু হয়ে যান। সেই অনুষ্ঠানে ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘আমার মেয়ে তুরস্ক এবং ইস্তাম্বুলকে ভালবাসে। সে এখানে আসার বিষয়টি সবসময়ই উপভোগ করে এবং বহুবার এখানে এসেছে। মেহমেত ইয়ালসিনডাগ তার খুব ভাল বন্ধু।’ ইয়ালসিনডাগ কিছু অবিশ্বাস্য কাজ করেছেন বলে উল্লেখ করেন ট্রাম্প। তিনি এরদোগানের প্রশংসা করে বলেছিলেন, ‘একজন ভাল মানুষ যিনি যুক্তরাষ্ট্র ও সারা বিশ্বে অত্যন্ত সম্মানিত।’
ট্রাম্প পরিবারের কাছের এক ব্যাক্তি জানান, গত এক দশকে ইয়ালসিনডাগ পারিবারিকভাবে ট্রাম্পের সাথে প্রতি বছর প্রায় তিন বা চারবার দেখা করেছেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় ট্রাম্প স্বীকার করেছেন যে, তার ব্যক্তিগত সম্পর্ক তুরস্কের প্রতি ধারণা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রভাবিত করেছে। তিনি ২০১৫ সালে এক রেডিও সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমার ব্যাক্তিগত কিছু আগ্রহ রয়েছে। কারণ ইস্তাম্বুলে আমার একটি বড় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে।’
ট্রাম্প যখন মুসলমানদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করার কথা বলেছিলেন, তখন এরদোগান ভবন দুইটি থেকে ট্রাম্পের নাম সরিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানান। তবে ওয়াশিংটনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ‘মূল্যবান’ পরামর্শ মেনে তিনি সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। এরদোগানের পরামর্শদাতারা ধারণা করেছিলেন যে ২০১৬ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে যাবেন। তবে ভোট গণনার সময় নিউ ইয়র্কের হিল্টন মিডটাউনে ট্রাম্প এবং তার পরিবারের পাশে থাকার জন্য ইয়ালসিনডাগ বিমানে ১০ ঘন্টার পথ পাড়ি দিয়েছিলেন। (আগামীকাল শেষ পর্ব)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।