Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইঁদুর-বেড়ালের সমঝোতা দোকানদারের বারোটা

প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মুহাম্মদ বশির উল্লাহ : এক মুদি দোকানে বাসা বেঁধেছিলো দুষ্টু ইঁদুরের দল। রাতের বেলা দোকানদার বাসায় চলে গেলে ইঁদুরদের নাচানাচি লাফালাফির উৎসব শুরু হয়ে যেত। একটা যেত তেলের বোতলে হামলা চালাতে আরেকটা লাফাতো চালের বস্তার ওপর আর অন্যরা এভাবে চিনির বস্তা আটার বোস্তাসহ বিভিন্ন প্যাকেট আর বস্তা কাটার উৎসবে মেতে উঠতো। যা-ই সংগ্রহ করতো সেগুলো নিয়ে জমাতো গর্তের ভেতর তাদের থাকার ঘরে। অন্য ইঁদুররা বাদাম আখরোট ইত্যাদি যে যা পেত খেয়ে পেট ভর্তি করে নিতো। দোকানদার যতো ওষুধ আর বিষই সেখানে ছড়াতো কোনো কাজই হতো না। দুই একটা হয়তো মরতো কিন্তু চারটা নতুন জন্ম নিতো।
বন্ধুরা যারা এ ধরনের সমস্যায় পড়েছিলো তারা চমৎকার একটা বুদ্ধি দিলো। তারা বললো- ওষুধ পসুদে কোনো কাজ হবে না, এক কাজ কর। মোটা তাজা দেখে একটা বেড়াল এনে দোকানে রেখে দাও। দেখবে ইঁদুরের বংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। দোকানদার অনেক ঘুরে ফিরে শেষ পর্যন্ত মোটাতাজা একটা বেড়াল পেল। বেড়ালটা দিনভর এটা সেটা খেয়ে দোকানের সামনেই ঝিমাতো আর রাত হলেই দোকানের ভেতর তীক্ষè দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকাতো। অপেক্ষায় থাকে কখন ইঁদুর বেরিয়ে আসে। ইঁদুর বের হলেই বেড়ালের হামলা চালিয়ে কাজ সারা করে দিত। এভাবে বেড়ালের উপস্থিতিতে ইঁদুররা আর আগের মতো দোকানের বস্তা কাটার উৎসব পালন করতে পারতো না।
দোকানদার পরিস্থিতির উন্নতি দেখে খুব খুশি। এখন আর ইঁদুরের দল দোকানের কোন মাল নষ্ট করে না। বেড়ালও দোকানদারের ওপর খুশি কেননা সে তাকে ঠিকমত খাবার দেয়। বিশ্রামের সুযোগ দেয়। বেড়াল সর্তকতার সাথে পাহারা দিচ্ছে। কিন্তু কোনো কোনো ইঁদুর বেড়ালের তন্দ্রায় নিতে শুরু করলো। বস্তা কেটে নিজের জন্য এবং অন্যদের জন্যও খাবার নিয়ে যেতে লাগলো। দোকানদার এই দুই একটা চোর ইঁদুরকেও কীভাবে পাকড়াও করা যায় ভাবলো। ভেবেচিন্তে দিনের বেলা বেড়ালটাকে কম খেতে দিল। যাতে রাতে বিড়ালের ক্ষিদে লাগে। আর ক্ষিদের কারণে রাতে বেশি বেশি ইঁদুর শিকার করে। দুই এক সপ্তাহ এই বুদ্ধিতা বেশ কাজে দিল। মোটাতাজা বেড়ালটি পেট পুরে খাবার খেতে না পেরে ধীরে ধীরে শীর্ণ হয়ে গেল। সেজন্যে বিড়াল রাতে অনেক বেশি ইদুর শিকার করতে লাগলো। সে কারণে ইদুরগুলো আর দোকানের জিনিসপত্রের উপর হামলা করতে সাহস পেলো না। দোকানদারও বেশ খুশি। কিন্তু বেড়াল ঠিক মত খাবার না পাওয়ার কারণে আগের মতো সন্তুষ্ট থাকতে পারলো না। দোকানদার তার দিকে আর নজর দিচ্ছে না। বিড়াল এখন ভাবতে লাগলো দোকানের খাদ্য সামগ্রীর ওপর হামলা চালাবে। বেড়ালের মনোভাব আর দোকানদারের ব্যাপরটা ইঁদুরগুলো লক্ষ্য করেছিলো। তারা সবাই বৈঠকে বসলো। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ইঁদুরগুলো বস্তা, প্যাকেট, এটাসেটার ফাঁকফোকরে একসাথে লুকিয়ে সাহসের সাথে মাথাটা বের করলো। একটি সাহসি ইঁদুর বেড়ালের উদ্দেশ্যে বললো, শোনো! আমার উপর হামলা করার আগে এক মিনিটের জন্য আমার কথাটা শোনো। তুমি নিশ্চিত থাকো যে পালানোর পথ ঠিক করা আছে, তুমি আমার লাগাল পাবে না। তবে আমার কথাটা শুনলে তোমার উপকারও হতে পারে।
বেড়াল চিন্তাভাবনা করে বললো, ঠিক আছে বলো।
ইঁদুর : তুমি আসার পর থেকে আমাদের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে। না খেতে পেরে মরার মতো অবস্থা।
বেড়াল : তাই তো হবার কথা... তোমরা ভিন্ন কিছু আশা করছিলে...!
ইঁদুর : না, তা না... তবে একটু ভেবে দেখুন... দোকানদার হলো মানুষ আর আপনি এবং আমরা তো.....
বেড়াল ভেবেছিলো ইঁদুর তাকে ছোটো করার চেষ্টা করছে, তাই দ্রুত মাথা তুলতেই ইঁদুরটাও ঢুকে গেল বস্তার ফাঁকে। ঢুকেই বললো, তুমি আমার কথাটা শোনো... গত ২/৩ সপ্তাহ ধরে দোকানদার তোমাকে এত কম খেতে দিচ্ছে যে কয়দিন পর হয়তো তোমার আর শিকার করার মতো শক্তিও থাকবে না। বেড়াল ভাবল ইঁদুরতো ঠিকই বলেছে। সে একটু সংযত হলো। বললো, কী বলতে চাও তুমি...?
ইঁদুর এবার একটু সামনে এসে বললো, ক্ষুদায় তোমারও তো নিশ্চয়ই ইচ্ছে করে দোকানের মজার মজার খাবারগুলোর বস্তায় বা প্যাকেটে আঁচর বসাতে! নাইলে আমরা যদি কোনো গর্তে গিয়ে আশ্রয় নেই, তাহলে তুমি তো না খেয়ে মরে যাবে। তাই আমাদের প্রস্তাব হলো, তুমি রাতের বেলা ঘণ্টাখানেক একটু রেস্ট নাও। এই ফাঁকে আমরা আমাদের কাজটা সেরে নেব। বিনিময় তোমার জন্যও পর্যাপ্ত খাবার আমরা দোকানের এক কোণে জমিয়ে রাখবো। তুমি তো আর তোমার ঐ ভোঁতা নখ দিয়ে বস্তা কাটতে পারবে না।
বেড়াল মনে মনে সাতপাঁচ ভেবে ইঁদুরকে পরীক্ষা করার জন্যে বললো, আমি আজ ভীষণ টায়ার্ড ঘুমাবো। তোমাদের যা খুশি করো। ইঁদুরেরা বুঝতে পারলো তাদের প্রস্তাবে বেড়াল রাজি হয়েছে। গর্তে ফিরে গিয়ে সবাইকে নিয়ে রাতে হামলা চালালো যার যার পছন্দের খাবারের উপর। ইচ্ছেমতো খেলো এবং নিয়েও গেল। আর কিছু খাবার রেখে গেল বেড়ালের জন্য। ইঁদুর চলে যাবার পর বেড়াল খাবারগুলো পেট ভরে খেয়ে দু’হাতের ওপর মাথাটা এলিয়ে দিয়ে ঘুমালো। এভাবে চললো কয়েক রাত। এখন ইঁদুরেরাও খুশি বেড়ালও খুশি। কিন্তু বেচারা দোকানদার বুঝতেই পারেনি এভাবে বেড়াল ক্ষেত খেয়ে যাচ্ছে। একসময় এ ঘটনা জানাজানি হয়ে গেল। ইঁদুর বেড়ালের সমঝোতা, দোকানদারের বারোটা।
ইরানের রূপকথার গল্প থেকে সংকলিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইঁদুর-বেড়ালের সমঝোতা দোকানদারের বারোটা
আরও পড়ুন