বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে আমন, শীতকালীন সবজি ও মৎস্য ঘেরে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
রোববার ভোরে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে দমকা বাতাসে উপকূলীয় অঞ্চলের ফসল নুয়ে পড়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আগাম শীতকালীন সবজির ক্ষেতও। একই সঙ্গে অতিবৃষ্টিতে বেশ কিছু মৎস্য ঘের ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে খুলনাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় আমন ফসল নুয়ে পড়েছে, শীতকালীন শাক-সবজিসহ মৌসুমী ফসলরে ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের প্রভাবে বেড়িবাঁধে ভাঙন ও অতি বৃষ্টিপাতের কারণে বিপর্যস্ত হতে পারে এ অঞ্চলের মৎস্য ঘেরও। যে কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষক ও মৎস্য খামারিরা দুশ্চিন্তায় আছেন।
ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষক আজিজ শেখ জানান, গত শনিবার থেকে অঝোরে বৃষ্টি হওয়ায় তার আমন ধানের ক্ষেতে পানি জমেছে। ঝড়ের খবরে কিছু ফসল কাটলেও বেশিরভাগ ফসলই মাঠে রয়ে গেছে। অন্য উপজেলার কৃষকদেরও একই অবস্থা।
বটিয়াঘাটার শীতকালীন সবজি চাষি শাহজাহান মোল্লা বলেন, আগাম শীতকালীন সবজির চাষ করেছিলাম। ঝড়ের কারণে সবজি ক্ষেতে পানি জমেছে। এখন লাভের পরিবর্তে লোকসান গুণতে হয় কিনা সেই দুশ্চিন্তায় আছি।
উপকূলীয় কয়রার একটি মৎস্য ঘেরের কর্মচারী জামাল ভূঁইয়া বলেন, রাতের বৃষ্টিতে বেশ কিছু বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে শাকবাড়িয়া নদীতে ভাঙন দেখা দিতে পারে। বাঁধ ভাঙলে এ অঞ্চলের সব ঘের ভেসে যাবে। এমনিতেই ঘেরে পানি বাড়ায় কিছু মাছ ভেসে যাচ্ছে।
এ অবস্থায় মাঠ পর্যায়ের কৃষক ও খামারিদের সঙ্গে কৃষি ও মৎস্য বিভাগও আশঙ্কা করছে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক পঙ্কজ কান্তি মজুমদার জানান, খুলনায় ৯১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষাবাদ হয়েছে। ধানের ক্ষেতে বৃষ্টির পানি জমলে ক্ষতিগ্রস্ত হবার শঙ্কা রয়েছে।
তিনি আরো জানান, খুলনাঞ্চলে সর্বাধিক ঝুঁকিপূর্ণ কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা উপজেলার আমন ফসল। এসব এলাকায় তিন হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজি ও ৪৫৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ হচ্ছে। অতিবৃষ্টির কারণে এসব ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়া ৭৫০ হেক্টর জমিতে পানের বরজ রয়েছে, যা নষ্ট হতে পারে প্রবল ঝড়ের কারণে।
কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কৃষি বুলেটিন প্রচার করা হয়েছে। বিশেষ করে পানি জমতে দেওয়া যাবে না ফসলের ক্ষেতে। পড়ে যাওয়া ধান গাছ যত দ্রুত সম্ভব সোজা করে রাখার জন্য কাঠি বেঁধে দিতে হবে। এখনো যারা শীতকালীন শাক-সবজির চারা, সরিষা রোপণ করেননি, তাদের কিছুদিন অপেক্ষায় থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মৎস্য অধিদফতর খুলনার উপ-পরিচালক রণজিৎ কুমার পাল বলেন, খুলনার উপকূলীয় অঞ্চলে এ বছর এক লাখ ১৪ হাজার গলদা ও এক লাখ ৪৭ হাজার বাগদা চিংড়ির ঘের করা হয়েছে। মৎস্য ঘের এলাকা সর্বাধিক ঝূঁকিপূর্ণ হওয়ায় অতিবৃষ্টি ও ঘূর্ণিঝড়ে বেড়িবাঁধ ভেঙে বা উপচে পানি প্রবাহিত হলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
তবে, এখনই সম্ভাব্য পরিসংখ্যান বলা যাচ্ছে না। ঝড়ের প্রকোপ যত বেশি হবে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণও ততো বেশি হবার শঙ্কা রয়েছে। খুলনার কয়রা, দাকোপ ও পাইকগাছা এলাকার মৎস্য খামারিরা সর্বাধিক ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন।
উল্লেখ্য, ভাঙন কবলিত এলাকায় নদীর পানি বিপদসীমার কাছাকাছি দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাতের কারণে নদীতে দ্রুত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে উপকূল পাড়ের মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকার কয়েকটি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধে ফাটল দেখা দিলে স্থানীয়রা রাত জেগে পাহারা দিয়ে বস্তা ফেলে কোনো মতে ভাঙন ঠেকিয়েছে। তবে বাঁধ ভেঙে গেলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।