পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করা সভা-সমাবেশর উপর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদী কনসার্ট করেছে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে ‘দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত না হলে অভিযোগকারীদের শাস্তি পেতে হবে’ প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ভিসিপন্থী এবং ভিসি বিরোধী উভয় গ্রুপের শিক্ষকরা। তবে কোন দুর্নীতি তদন্তের দায়-দায়িত্ব শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নয়; এটা রাষ্ট্রের কাজ এবং রাষ্ট্রকেই জাবির দুর্নীতির বিষয়টি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে বলে মনে করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এদিকে নিষেধাজ্ঞা ভেঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের নতুন ও পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে কিছু আন্দোলনকারীর অবস্থান নেয়ার মধ্য দিয়ে তাদের কর্মসূচী শুরু করে। এই সময় তারা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে প্রবেশে বাঁধা দেয়। এতে বরাবরের মত বন্ধ আছে সব প্রশাসনিক কার্যক্রম। পরে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিশ^বিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থিত ‘উপাচার্য অপসারণ মঞ্চ’ এর সামনে জড়ো হতে থাকে। সেখান থেকে দুপুর ১টার দিকে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে একটা বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি ভিসির বাসভবনের দিকে যায়। সেখানে পুলিশের শক্ত অবস্থান দেখে আন্দোলনকারীরা বাসভবনের পাশের সড়কে বসে অবস্থান গ্রহণ করে। তারপর তারা “এক দফা এক দাবি, ফারজানা তুই কবে যাবি”, “ফারজানার বিরুদ্ধে, গড়ে তুলি আন্দোলন”, “দুর্নীতিবাজের আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও গুঁড়িয়ে দাও”, “ভিসি তোমায় জানিয়ে দিলাম, ওয়ালাইকুম আসসালাম”, “স্বৈরাচারের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে”, “সন্ত্রাসীদের আস্তানা ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও”, “আওয়ার ক্যাম্পাস আওয়ার রাইট, সেভ দ্য ক্যাম্পাস জয়েন দ্য ফাইট” প্রভৃতি স্লোগান দেন। এই সময় যে কোন অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন ছিল। বাসভবনের সামনে কিছুক্ষণ অবস্থান গ্রহণের পর আন্দোলনকারীরা আবার বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুরাতন প্রশাসনিক ভবনে সামনে এসে সামবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তারা ভিসির অপসারণ, হল বন্ধের প্রতিবাদ, ছাত্রলীগের হামলার বিচারের দাবি জানান। এই সময় আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের দেওয়া বক্তব্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, “উপমন্ত্রীর কথার সঙ্গে আমরা দ্বিমত পোষণ করছি। উনি আমাদের অর্থাৎ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রমাণ সহকারে লিখিত অভিযোগ করতে বলেছেন। আমরা তো বিষয়টি প্রমাণ করতে আসেনি, আমরা অভিযোগ তুলেছি। এখন তদন্ত করে এই অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের।”
এছাড়া সন্ধ্যায় ভিসির বাস ভবনের সামনে প্রতিবাদী কনসার্টের আয়োজন করেন আন্দোলনকারীরা। কনসার্ট করতে তাদেরকে কেউ কোন ধরণের বাধা দেয়নি বলে জানিয়েছেন তারা। এর আগে বুধবার রাতে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে সব ধরণের সভা, সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞাকে অযৌক্তিক দাবি করে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে ‘ভিসির বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত না হলে অভিযোগকারীদের শাস্তি পেতে হবে’ প্রধামন্ত্রীর এমন বক্তব্যকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন ভিসিপন্থী এবং ভিসি বিরোধী শিক্ষকরা। জাহাঙ্গীরনগর নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যের পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপাচাযপন্থী সংগঠন ‘অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং উন্নয়নের পক্ষে জাহাঙ্গীরনগর’ এর আহ্বায়ক পদার্থবিজ্ঞানী অধ্যাপক এ এ মামুন বলেন, “যতোক্ষণ পর্যন্ত ভিসির দুর্নীতির বিষয়টি প্রমাণিত না হবে ততোক্ষণ পর্যন্ত আমরা তার সাথে আছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি তিনি দুর্নীতি করেননি। আমরা চাই আনীতি অভিযোগের তদন্ত হোক। ভিসিও চান তদন্ত হোক। মননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষা মন্ত্রীর প্রতি আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। তারা বিষয়টি দেখবেন। সরকার যেহেতু এই অভিযোগের বিষয়টি দেখছেন সেখানে এ নিয়ে মন্তব্য করবো না।”
ভিসি বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক দর্শন বিভাগের অধ্যাপক কামরুল আহসান বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তাকে আমরা ইতিবাচক বলেই মনে করি। তিনি সারাদেশে ঘটে যাওয়া দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়ে যাচ্ছেন। আমাদের আন্দোলনও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের আন্দোলনের দিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতির দিকে নজর দিয়েছেন এজন্য আমরা তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমরা আশা করছি তিনি শীঘ্রই একটি কমিটি করে বিষয়টার একটা সুরহা করুক।”
তবে কোন দুর্নীতি তদন্তের দায়-দায়িত্ব শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নয়; এটা রাষ্ট্রের কাজ এবং রাষ্ট্রকেই জাবির দুর্নীতির বিষয়টি স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করতে হবে বলে দাবি করেছেন আন্দোলনের আরেক সংগঠক সুস্মিতা মরিয়ম। শাখা ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মরিয়ম আরো বলেন, “ছাত্রলীগের যে নেতারা টাকা পেয়েছেন তারাই মিডিয়ার সামনে স্বতঃফূর্তভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। তারাই স্বীকার করেছে কিভাবে টাকা ছড়ানো হয়েছে। দুর্নীতির প্রমাণ করা আন্দোলনকারীদের কাজ নয়। প্রধানমন্ত্রী এসবই বুঝেন। তিনি যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের এই জাগরণের মর্মার্থ বুঝতে পারেন আমরা তাকে সাধুবাদ জানিয়ে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবো।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলমান থাকবে বলে মন্তব্য করেছন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধ জাহাঙ্গীরনগর’ এর মুখপাত্র অধ্যাপক রায়হান রাইন। তিনি বলেন, ‘আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। সংস্কৃতিক কর্মকা-, চিত্রাঙ্কন, গান-নাটকের মাধ্যমেও আমরা প্রতিবাদ জানিয়ে যাবো।’
এদিকে জাবির মেগা প্রকল্পের অর্থ ভাগবাটোয়ারা বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেয়া শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের নামে একটি ভূয়া ফেসবুক আইডি খুলে বিভ্রান্তি ছাড়ানো হচ্ছে। সাদ্দাম দাবি করা ওই আইডি থেকে বলা হচ্ছে ‘আমি যে কথা মিডিয়াতে বলেছিলাম সেটি নিছক রাজনৈতিক স্বার্থে। সেই কথাকে প্রমাণ হিসেবে দাখিল করার চেষ্টা করবেন না।’ কিন্তু স্বীকারোক্তি দেয়া আরেক নেতা হামজা রহমান অন্তরের ফেসবুক একাউন্ট থেকে লাইভে এসে এ বিষয়ে কথা বলেন সাদ্দাম। বৃহস্পতিবার বিকালে লাইভে তিনি বলেন, “গত সেপ্টেম্বরের ১১তারিখে আমার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়। এখনো সেটি ফিরে পাইনি। একটি দুষ্কৃতিকারী মহল আমার নামে একাউন্ট খুলে বিভ্রান্তি এবং গুজব ছাড়াচ্ছে। তাই এসব নোংরা গুজবে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য তিনি সকলকে অনুরোধ করছি।”
এই সাদ্দাম ও হামজা রহমান অন্তর তৎকালীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারী ছিলেন। জাবির মেগা প্রকল্পকে ঘিরে সাদ্দামে সাথে গোলাম রাব্বানীর একটি ফোনালাপ ফাঁস হয়। পরে ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে তিনি এই প্রকল্প থেকে টাকা পাওয়ার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন। পরে শাখা ছাত্রলীগের আরেক সহ-সভাপতি নিয়ামুল হাসান তাজও মিডিয়াতে টাকা পাওয়ার বিষয়ে স্বীকারোক্তি দেন। এরপর ভিসির বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলন আরো বেগবান হয়।
ভিসির অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা
দুর্নীতির অভিযোগে জাবি ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের অপসারণের দাবিতে অনড় রয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ভিসির অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক রাকিবুল রনি। গতকালের কর্মসূচি পালন শেষে আন্দোলনের সর্বশেষ অবস্থা জানাতে সংবাদ সম্মেলন করে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, আগামীকাল প্রধানমন্ত্রীর কাছে তথ্য প্রমাণ জমা দেয়া হবে। আমাদের কাছে যে তথ্য প্রমাণ আছে তাতে করে অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম আর কোনোভাবেই তার পদে থাকতে পারেন না।
আজ শুক্রবারও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন অধ্যাপক রায়হান রাইন। এই সময় তিনি বলেন, শুক্রবার সকাল ১১টায় পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে। পরে প্রতিবাদ পটচিত্র অঙ্কন ও মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।