পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান, অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ মেয়র, সাবেক মন্ত্রী, রণাঙ্গণের গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা গত মঙ্গলবার দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটন স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ওইদিনই রাতেই যুক্তরাষ্ট্রে তার জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। জীবিত অবস্থায় দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার ইচ্ছা থাকলেও পাসপোর্ট সংক্রান্ত জটিলতার কারণে তার সেই ইচ্ছা পূরণ হয়নি। তবে জুরাইন কবরস্থানে বাবা-মায়ের পাশে দাফনের শেষ ইচ্ছা পূরণ হচ্ছে। ট্রাভেল পারমিটে খোকার লাশ নিয়ে মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন তার স্ত্রী-সন্তানেরা। বাংলাদেশ সময় আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে খোকার লাশ পৌঁছানোর কথা রয়েছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী জানান, বৃহস্পতিবার ৭ নভেম্বর সকাল ৮টা ১০ মিনিটে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরহুমের লাশ গ্রহণ করবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। এরপর সাদেক হোসেন খোকার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১১টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায়। দুপুর ১২টা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের জন সাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য রাখা হবে। বাদ জোহর নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দ্বিতীয় নামাজে জানাযা হবে। দুপুর ৩টায় তৃতীয় নামাজে জানাযা হবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ভবনে। এরপর বাদ আসর গোপীবাগ নিজ বাসা হয়ে ধুপ খোলা মাঠে জানাযা শেষে জুরাইন গোরস্তানে নেওয়া হবে দাফনের জন্য।
সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন জানান, সবকিছু ঠিক থাকলে মঙ্গলবার রাতেই এমিরেটস-এর একটি বিমানে বাবার লাশ বাংলাদেশে নিয়ে যাবো। আমার মা সঙ্গে যাবেন।
খোকার ভাই আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, মুক্তিযোদ্ধা খোকার শেষ ইচ্ছা দেশের মাটিতে যেন তার কবর হয়। যে দেশের মাটির জন্য যুদ্ধ করেছেন, সেখানে যেন কবর দেয়া হয়। খোকার লাশ এলে দাফনের ব্যবস্থা করা হবে জুরাইনে। তাদের মা-বাবার কবরের পাশে।
সাদেক হোসেন খোকার মৃত্যুর সংবাদে রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। সর্বত্রই সাদেক হোসেন খোকার কর্মময় জীবন নিয়ে আলোচনা চলছে। ব্যতিক্রম নয়, তার শৈশবের স্থান রাজধানীর গোপীবাগ। গোপীবাগের তিনতলা বিশিষ্ট ‘শেকড়েই’ সাদেক হোসেন খোকার শৈশব ও কৈশোর কেটেছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। সেবার বিএনপি সরকার ক্ষমতায় আসে। তিনি যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী হন। তখন এই বাড়ি ছেড়ে হেয়ার রোডের মন্ত্রীদের জন্য বরাদ্দ থাকা বাড়িতে ওঠেন। মন্ত্রিত্ব শেষে গুলশানের ফ্ল্যাটে বসবাস শুরু করেন। তখন থেকে গোপীবাগের বাড়িতে মাঝেমধ্যে আসতেন। তিনতলা এই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় রাজনৈতিক বৈঠকেখানা রয়েছে। গতকাল গিয়ে দেখা যায়, সেই বৈঠকখানায় নেতাকর্মীরা অপেক্ষায় করছেন নেতার লাশের অপেক্ষা। প্রিয় নেতার সঙ্গে ঘটে যাওয়ার মধুর স্মৃতিগুলো একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করছেন।দেখা গেছে, বাড়ির নিচতলায় সাদেক হোসেন খোকার জন্য শোকবই খোলা হয়েছে। গতকাল এই শোক বইয়ে স্বাক্ষর করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবীব উন নবী খান সোহেল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, দক্ষিণের নেতা নবী উল্লাহ নবী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি এড. সুব্রত চৌধুরী।
সাদেক হোসেন খোকা দীর্ঘদিন যাবত কিডনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন। ২০১৪ সালের ১৪ মে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত ১৮ অক্টোবর সকালে সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। আশির দশকে বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে আসেন বিএনপিতে। ওই সময় নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই অন্দোলনে ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন খোকা। ১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু স¤প্রদায়ের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে পুরান ঢাকার মানুষের মনে আস্থার জায়গা করে নেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন। এ সময় তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন। দিনে দিনে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ঢাকার রাজনীতিতে খোকা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় পাঁচ বছর একক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিএনপির গুরুত্বপ‚র্ণ নেতায় পরিণত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। ওই সময় পুরান ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে দলকে শক্তিশালী করার পেছনে তার গুরুত্বপ‚র্ণ ভূমিকা ছিল। এর আগে ১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের কাছে পরাজিত হন মির্জা আব্বাস। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধীদল কঠোর আন্দোলন শুরু করলে ঢাকায় বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খোকাকে ১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকার মেয়র ছিলেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।