পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ সাবেক মেয়র, ঢাকার জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ, সাবেক মন্ত্রী, মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গণের গেরিলা, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহির রাজিউন। তিনি গতকাল সোমবার বাংলাদেশ সময় দুপুর দেড়টায় যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটন স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।
খোকার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে রাজনৈতি অঙ্গনে। তার মৃত্যুর সংবাদ ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শোক জানাতে থাকেন তার নিজ দল বিএনপি, আওয়ামীলীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। রাজধানীর বিভিন্ন পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, চায়ের দোকান, আড্ডার স্থলেই আলোচনার কেন্দ্রে ছিলেন বর্ষিয়ান এই রাজনীতিবিদ। সকলেই তার বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের নানা দিক তুলে ধরে আলোচনা করেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও ছেয়ে যায় এই রাজনীতিবিদের মৃত্যু সংবাদের শোকে। সকল স্তরের মানুষ তার মৃত্যুতে গভীর শোক জানান। এসব শোক বার্তায় মরহুম সাদেক হোসেন খোকার রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়।
দীর্ঘদিন যাবত কিডনি ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। ২০১৪ সালের ১৪ মে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানেই তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। গত ১৮ অক্টোবর সকালে সাদেক হোসেন খোকার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিতাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদিকে মরহুম সাদে হোসেন খোকা ও তার স্ত্রীর পাসপোর্ট আটকে থাকায় কবে নাগাদ তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে এবং কোথায় দাফন করা হবে সে বিষয়ে এখনো কিছুই জানাতে পারেনি বিএনপি এবং তার পরিবারের সদস্যরা। সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন জানান, আমার বাবা, অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা ৪ নভেম্বর নিউইয়র্ক সময় রাত ২টা ৫০মিনিটে ও বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে ইন্তেকাল করেছেন। পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে পরবর্তী তথ্য জানানো হবে। সাদেক হোসেন খোকার লাশ কবে দেশে আনা হবে জানতে চাইলে বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, এ ব্যাপারে দলীয় নেতৃবৃন্দ আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
যদিও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সাদেক হোসেন খোকার লাশ দেশে আনতে সরকারের তরফে কোন ধরণের অসহযোগিতা থাকবে না।
সাদেক হোসেন খোকা ১৯৫২ সালের ১২ মে ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে তার খ্যাতি রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মনোবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। আশির দশকে বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে আসেন বিএনপিতে। ওই সময় নয়াবাজার নবাব ইউসুফ মার্কেটে বিএনপির কার্যালয় থেকে এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা করে সাতদলীয় জোটের নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। ওই অন্দোলনে ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়কের দায়িত্ব পেয়েছিলেন খোকা। ১৯৯০ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙাকে কেন্দ্র করে পুরান ঢাকায় হিন্দু স¤প্রদায়ের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে পুরান ঢাকার মানুষের মনে আস্থার জায়গা করে নেন। ১৯৯১ সালের জাতীয় নির্বাচনে ঢাকা-৭ আসনে (সূত্রাপুর-কোতোয়ালি) শেখ হাসিনাকে পরাজিত করে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হয়ে আলোচনায় আসেন। এ সময় তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে ঢাকার আটটি আসনের মধ্যে সাতটিতে বিএনপি প্রার্থী পরাজিত হলেও একমাত্র খোকা নির্বাচিত হন। দিনে দিনে তার জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। ঢাকার রাজনীতিতে খোকা ফ্যাক্টর হয়ে ওঠেন। পরে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী আন্দোলনে প্রায় পাঁচ বছর একক নেতৃত্ব দিয়ে তিনি বিএনপির গুরুত্বপ‚র্ণ নেতায় পরিণত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী হন। ওই সময় পুরান ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে নিজস্ব বলয় তৈরির পাশাপাশি প্রতিটি থানা ও ওয়ার্ডে দলকে শক্তিশালী করার পেছনে তার গুরুত্বপ‚র্ণ ভূমিকা ছিল। এর আগে ১৯৯৪ সালে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হানিফের কাছে পরাজিত হন মির্জা আব্বাস। বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য বিরোধীদল কঠোর আন্দোলন শুরু করলে ঢাকায় বিএনপি কোণঠাসা হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় খোকাকে ১৯৯৬ সালে মহানগর বিএনপির আহ্বায়কের দায়িত্ব দেয়া হয়। ২০০২ সালের ২৫ এপ্রিল অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিনি ঢাকার মেয়র ছিলেন।
শেষ ইচ্ছা পূরণ হলো না: ২০১৭ সালে নবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা। এখনও পর্যন্ত খোকা ও তার স্ত্রীর পাসপোর্ট দেয়নি দূতাবাস কর্তৃপক্ষ। দেশের জন্য যুদ্ধ করা এই বীর মুক্তিযোদ্ধার শেষ ইচ্ছে ছিল দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস নেয়া। কিন্তু পাসপোর্ট আটকে থাকায় সেই ইচ্ছে আর পূরণ হলো না রাজধানীর প্রভাবশালী এই রাজনীতিবিদের! কয়েকদিন আগে শারীরিক অবস্থা বুঝে আফসোস করে তিনি পরিচিত ও পরিবারকে বলেছেন যে, ‘আমার দুর্ভাগ্য দেশে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে পারবো না।’ ঢাকার সফল এই মেয়রের পাশে ছিলেন তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আহমেদ হাসান মিন্টু। তিনি গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘খোকা ও তার স্ত্রী ইসমত হোসেন নতুন পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পর, নবায়নের জন্যে নিয়ম মেনে ফি দিয়ে দুই বছর আগে নিউইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে জমা দেয়া হয়। কিন্তু, আজ পর্যন্ত পাসপোর্ট পাননি। কনস্যুলেট থেকে কোনও কিছু জানানোও হয়নি। তারা সর্বশেষ ৬ মাস আগে কনস্যুলেটে যোগাযোগ করে জানতে পারেন যে সরকারের উচ্চমহলের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পাসপোর্টের বিষয়টি জানতে হবে। সেদিন মিন্টু আক্ষেপ করে বলেন, এখন খোকার যা অবস্থা এমন পরিস্থিতিতে যদি দুঃসংবাদও আসে তাহলে খোকাকে কীভাবে দেশে নেয়া হবে? তার স্ত্রীই বা কীভাবে ফিরবেন? অনিশ্চিত-অস্থির সময় পার করছেন পরিবারের সদস্যরা। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে মানবিক দিক বিবেচনায় খোকার শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারকে অনুরোধ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও খোকার পরিবার। তবে খোকার পরিবার ‘ট্রাভেল পারমিট’ এর জন্য আবেদন করলে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানান পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহরিয়ার আলম। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর শেষ মুহূর্তের এমন বক্তব্যের একদিন পরেই শেষ আক্ষেপ নিয়ে চলে গেলেন সাদেক হোসেন খোকা।###
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।