Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পানির অভাবে মরে যাচ্ছে মৃতসাগর

প্রকাশের সময় : ২০ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

অতিরিক্ত খনিজসম্পদ আহরণের কারণে প্রতি বছর পানির স্তর নেমে যাচ্ছে
এক মিটার করে, ঝুঁকির মুখে জীববৈচিত্র্য
ইনকিলাব ডেস্ক : মরে যাচ্ছে মৃতসাগর। আসল নাম তার ডেড সি। বাংলায় যার অর্থ মৃত সাগর। এর পশ্চিম তীরে রয়েছে ইসরাইলিদের বসতি, আর অন্য পারে ফিলিস্তিন। নীল এই সাগরের সৌন্দর্যের মোহিত হতে প্রতি বছর এখানে হাজির হন হাজারো পর্যটক। ডেড সি নিয়ে প্রচলিত আছে অনেক মজার তথ্য। পানির অতিরিক্ত ঘনত্বের কারণে এখানে কেউ ডুবে যান না। আবার লবণাক্ততার কারণে কোনো মাছ বাঁচে না এই পানিতে। তবে কিছু ছত্রাক ও অনুজীবের সন্ধান পাওয়া যায় ডেড সিতে। এসবের কারণে স্বনামে বিখ্যাত এই মৃত সাগর। ডেড সির পানির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এতে থাকা প্রচুর পরিমাণ খনিজসম্পদ। পৃথিবীর যেকোনো সমুদ্রের পানির চেয়ে এই পানির লবণাক্ততা ১০ গুণ বেশি।
নানা কারণে সত্যি সত্যি এবার মরতে শুরু করেছে সেই ডেড সি। দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে এর পানি। প্রতি বছর এই সমুদ্রের পানির স্তর কমে যাচ্ছে এক মিটার করে! ইসরাইল, জর্ডান ও ফিলিস্তিনের পরিবেশবিদদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ইকোপিস মিডল ইস্টের (ইপিএমই) পরিচালক গিডন ব্রুমবার্গ বলেন, ডেড সির বর্তমান অবস্থাকে পরিবেশগত বিপর্যয় বলা যায়। এটা গ্রহণযোগ্য নয়। এই সমুদ্রের অনন্য বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। নাটকীয়ভাবে সমুদ্রের তীরে সিঙ্কহোল তৈরি হয়েছে। সম্প্রতি সমুদ্রটিতে কিছু গহ্বর সৃষ্টি হয়েছে। এ সম্পর্কে আগে থেকে কিছুই বোঝা যায়নি। ব্রুমবার্গের মতে, এই পানির স্তর নেমে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হলো ইসরাইলি ও জর্ডানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডেড সি’র পানি থেকে খনিজসম্পদ আহরণ। ডেড সির ৯৫ শতাংশ পানি আসে জর্ডান নদী থেকে। সেই নদীর পানিই কৃত্রিমভাবে খাল কেটে সেচের কাজে ব্যবহার করতে দক্ষিণ দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে আগে যেখানে জর্ডান নদী ডেড সিকে প্রতিবছর এক হাজার ৩৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি সরবরাহ করত। এখন সেটা নেমে এসেছে মাত্র ২০ মিলিয়ন ঘনমিটার। ডেড সির পানি শুকিয়ে যাওয়া থেকে একে বাঁচাতে এবার একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরায়েল, জর্ডান ও অধিকৃত পশ্চিম তীর। ২০০৫ সালে এ বিষয়ে প্রথম সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়। তিনপক্ষ সম্মিলিতভাবে আর্থিক প্রণোদনার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে চিঠি লেখে। সেখানে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে একটি প্রকল্প হাতে নিতে বলা হয়- যার মাধ্যমে কোনো আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান তদন্ত করবে এবং জর্ডানের লোহিত সাগরের অংশ থেকে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি সেচে আনবে ডেড সির দক্ষিণ অংশের জন্য। তবে অন্য স্থান থেকে কম লবণাক্ত পানি ডেড সিতে নিয়ে এলে এর বাস্তুসংস্থান ও জীববৈচিত্র্যে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন ব্রুমবার্গ। ফলে এর বিরোধিতা করে ইপিএমই। এই রকম বেশকিছু বিরোধিতার কারণে প্রকল্পটি আপাতত স্থগিত অবস্থায় আছে। তবে প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এখনো আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। এরমধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে একটি পাইলট প্রোগ্রামের পানি বিনিময় চুক্তি সই হয়। এই চুক্তি অনুযায়ী জর্ডান লোহিত সাগরের তীরে আকাবার কাছে পানি থেকে লবণ পৃথকীকরণের একটি প্রকল্প তৈরি করবে। ইপিএমই ইসরাইল ও জর্ডানের মধ্যকার এই পানি বিনিময় চুক্তিকে সমর্থন দিয়েছে। এ বিষয়ে ব্রুমবার্গ ধারণা করছেন- এই সমুদ্র কখনোই পুরোপুরি শুকিয়ে যাবে না। তবে পানির স্তর এভাবে নিচে নামতে শুরু করলে সমুদ্রের বাস্তুসংস্থানের ব্যাপক পরিবর্তন হতে পারে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি। ডেড সিকে বাঁচাতে জর্ডান নদী থেকে এর পানির সরবরাহ অব্যাহত রাখা ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে পানি ব্যবহারের তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। অপর এক খবরে বলা হয়, নানা কাহিনীর আঁধার এ মৃত সাগর এবার সত্যি সত্যিই মরে যাচ্ছে। শুকিয়ে যাচ্ছে সূর্যের তাপদাহে ডেড সি’র পানি, তীব্র লবণাক্ততা ও ঘনত্ব আরও ঘন হয়ে যাচ্ছে। ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে সাগর। বেশ্বিক উষ্ণতাই এর জন্য দায়ী করছেন বিশ্বের খ্যাতিসম্পন্ন সব বিজ্ঞানীসহ ডেড-সি উপকূলীয় ফিলিস্তিনি-ইসরাইলিরা। উপকূলবাসীদের কথা, দুনিয়ায় গরম বাড়ছে, তাই সাগর শুকিয়ে যাচ্ছে!  পৃথিবীর যে কোনো সমুদ্রের পানির চেয়ে এ পানির লবণাক্ততা ৮ থেকে ৯ গুণ বেশি। শংকার বিষয় হলো, নানা কারণে সত্যি সত্যি মরতে শুরু করেছে ডেড সি। দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে এর পানি। প্রতি বছর এ সমুদ্রের পানির স্তর কমে যাচ্ছে ১ মিটারের (৩ ফুন) বেশি! ফলে এসাগরে অবশিষ্ট পানি খুব কম সময়ের ব্যবধানে শুকিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ডেড সি’র পানি বিশ্বের সমুদ্রসীমা থেকে সবচেয়ে নিচে অবস্থিত। বর্তমানে এটির পানি ৪২০ মিটার (১ হাজার ৩৮০ ফুট) নিচে। ডেড সি’র পানির অনন্য বৈশিষ্ট্য হলো এতে থাকা প্রচুর পরিমাণ খনিজসম্পদ। এ পানির স্তর নেমে যাওয়ার উল্লেখযোগ্য আরেকটি কারণ হলো, ইসরাইল ও জর্ডানের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ডেড সির পানি থেকে খনিজসম্পদ আহরণ। ডেড সির ৯৫ শতাংশ পানি আসে জর্ডান নদী থেকে। সেই নদীর পানিই কৃত্রিমভাবে খাল কেটে সেচের কাজে ব্যবহার করতে দক্ষিণ দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ফলে আগে যেখানে জর্ডান নদী ডেড সিকে প্রতিবছর ১ হাজার ৩৫০ মিলিয়ন ঘনমিটার পানি সরবরাহ করত এখন সেটা নেমে এসেছে মাত্র ২০ মিলিয়ন ঘনমিটারে। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানির অভাবে মরে যাচ্ছে মৃতসাগর
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ