পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আতঙ্কে আছেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের দুর্নীতিবাজ কাউন্সিলরেরা। চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে ঢাকায় এরই মধ্যে দুজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর গ্রেফতার হয়েছেন। গোয়েন্দা নজরদারিতে আছেন ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের আরও অর্ধশতাধিক কাউন্সিলর। তাদের বিরুদ্ধে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের গুরুতর অপরাধের অভিযোগ। যে কোন সময়ে গ্রেফতার হতে পারেন আরও কয়েকজন। গ্রেফতার আতঙ্কে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মধ্যে অনেকেই গা ঢাকা দিয়ে আছেন। হত্যাকান্ড, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মদ, জুয়া, নারী কেলেঙ্কারি, ভূমি দস্যুতা, জুলুম, অত্যাচারসহ নানা ধরনের গুরুতর অপরাধের অভিযোগ আছে তালিকাভুক্ত ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। সিঙ্গাপুরে পলাতক আছেন ক্যাসিনো কেলেঙ্কারির হোতা হিসেবে পরিচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ। গ্রেফতার হয়েছেন মোহাম্মদপুরের আলোচিত কাউন্সিলর মিজানুর রহমান ওরফে পাগলা মিজান এবং তারেকুজ্জামান রাজিব। রাজিবকে বলা হতো মোহাম্মদপুরের সুলতান। সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুর-৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজিবের বিষয়ে ব্যাপক অনুসন্ধান চালিয়ে তারপর তাকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। ওয়ার্ড কাউন্সিলর হওয়ার পর রাজিব রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন। ক্ষমতার আলাউদ্দিনের চেরাগ বাতির বদৌলতে তার এই ধনাঢ্য হওয়ার পেছনে রয়েছে নানা ধরনের অপরাধ কর্মকান্ড। এখন তদন্ত চলছে রাজিবের গডফাদারদের বিরুদ্ধে। এরা ছাড়াও অর্ধশতাধিক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে বলে সূত্র আভাস দিয়েছে।
সূত্র জানায়, চলমান দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরুর পর ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছেন। ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর পরই ক্যাসিনোর অন্যতম হোতা মতিঝিলের কাউন্সিলর মমিনুল হক সাঈদ সিঙ্গাপুর চলে গেছেন। সাঈদের পাশাপাশি দক্ষিণের আরও বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর গা ঢাকা দিয়ে আছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিরপুরের অন্তত অর্ধ ডজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বর্তমানে গোয়েন্দা নজরদারিতে রয়েছেন। এদের মধ্যে দুজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আলোচিত হত্যা মামলার আসামি। মিরপুর ১০ নং এলাকার আরেক কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে দখলবাজি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে। এদিকে, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় কাউন্সিলদের মধ্যে এক অস্থিরতা বিরাজ করছে।ওই এলাকার মোট ছয়জন কাউন্সিলরদের মধ্যে বর্তমানে দুই কাউন্সিলর এলাকায় থাকলেও তারাও কার্যালয়ে আগের মতো নিয়মিত নন।
বাকি চারজনের মধ্যে দুজন সা¤প্রতিক অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন। একজন অভিযান শুরুর আগেই দেশের বাইরে চলে গেছেন, আর ফেরেননি। একজন মারা গেছেন। মোহাম্মদপুর এলাকার এক আওয়ামী লীগ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মোহাম্মদপুরে কাউন্সিলরদের মধ্যে এখন পুরো অস্থির অবস্থা চলছে।
জানা গেছে, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুল ইসলাম রতন দেশে থাকলেও নিয়মিত অফিসে বসেন না। তার বিরুদ্ধেও জমি দখল, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, মোহাম্মদপুর এলাকার ছয় কাউন্সিলরের মধ্যে সেন্টু জাতীয় পার্টিতে যুক্ত; বাকি সবাই আওয়ামী লীগের। গ্রেফতারকৃত রাজিব ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক, মিজান মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। জাতীয় পার্টির ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সেন্টু অভিযান শুরুর তিন দিন আগে বিদেশে চিকিৎসার জন্য যান। অভিযানে কয়েকজন ধরা পড়ার পর তিনি এখন আর ফিরছেন না বলে তার ঘনিষ্ঠ একজন জানিয়েছেন। কলাবাগান ক্রীড়াচক্রে ক্যাসিনো পরিচালনায় সেন্টু জড়িত ছিলেন বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের দাবি।
অন্যদিকে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কয়েকজন আলোচিত ওয়ার্ড কাউন্সিলর রয়েছেন যারা শূন্য থেকে এখন হাজার কোটি টাকার মালিক। এমনকি স্থানীয় এমপির চেয়েও তাদের ক্ষমতার দাপট অনেক বেশি। বিভিন্ন দল থেকে এসব ভুঁইফোড় নেতারা ক্ষমতাসীন দলে যোগ দিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েই অঢেল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন।
সূত্র জানায়, ঢাকার দুই সিটিতে অন্তত অর্ধ শতাধিক এমন ওয়ার্ড কাউন্সিলর আছেন যাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ। জমি দখল, ফ্ল্যাট দখল, মার্কেট দখল এমনকি ফুটপাথ দখল করে বাণিজ্যের সরাসরি অভিযোগ তাদের বিরুদ্ধে। কোনো কোনো কাউন্সিলর মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কদমতলী এলাকার এক ওয়ার্ড কাউন্সিলরের ভাগ্নে সরাসরি মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। পুলিশের হাতে সেই ভাগ্নে বেশ কয়েকবার ধরাও পড়েছে। ভাগ্নেকে ছাড়াতে থানায় ছুটে যেতেন সেই কাউন্সিলর। এ নিয়ে থানা পুলিশের সাথে তার বিবাদও হয়েছে। কদমতলী থানা এলাকার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা থেকে চাঁদা তোলেন সেই কাউন্সিলরের লোকজন। জুরাইন এলাকার এক কাউন্সিলর এক সময় পুলিশের সোর্স ছিলেন। ছিনতাই করতে গিয়ে ধরা ও পড়েছিলেন তিনি। কাউন্সিলর হওয়ার পর রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, বিদেশে পলাতক তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী কচির সহযোগী হিসাবে চাঁদাবাজি আর দখলবাজি করে রাতারাতি ধনী হয়েছেন ওই কাউন্সিলর। প্রতি বছর ঈদুল আযহায় পোস্তগোলা শশ্মানঘাট এলাকায় ইজারা ছাড়াই কোরবানীর হাট বসিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এই কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে, যেসব ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অপরাধের অভিযোগ আছে তাদের অনেকেই সিটি কর্পোরেশনের সভায় উপস্থিত হচ্ছেন না। আইন অনুযায়ী যারা একাধারে তিনটি থেকে আটটি সভায় অনুপস্থিত থাকছেন তালিকা তৈরি করে তাদেরকে বিরুদ্ধে বরখাস্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। একাধারে তিন সভায় অনুপস্থিত থাকার কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর একেএম মমিনুল হক সাঈদকে ইতোমধ্যে বরখাস্ত করা হয়েছে।
চট্টগ্রামে দৌঁড়ের উপর দুর্নীতিবাজ কাউন্সিলররা
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চলমান শুদ্ধি অভিযানে চট্টগ্রামের দুর্নীতিবাজ ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা অন্ততঃ আটজন কাউন্সিলরকে কড়া নজরদারিতে রেখেছে। তারা ছাড়া আরও বেশ কয়েকজনের সম্পর্কে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক নানা তথ্য সংগ্রহ করছে। এ অবস্থায় দুর্নীতিবাজরা দৌঁড়ের উপর আছেন। অনেকে বাসা-বাড়ি থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বিশেষ করে যাদের বিরুদ্ধে এলাকায় দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি, জুয়ার আসর পরিচালনা, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণসহ নানা অভিযোগ রয়েছে তারা রীতিমত গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন।
প্রধানমন্ত্রীর কড়া নির্দেশনায় এক মাস আগে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর গ্রেফতার হলেও চট্টগ্রামে এখনও কাউকে পাকড়াও করা হয়নি। তবে এলিট বাহিনী র্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস, দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। সরকারি দলের নেতা হলেও তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। শুদ্ধি অভিযানকে সামনে রেখে র্যাব যে তালিকা করেছে তাতেও বেশ কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নাম রয়েছে।
আরও কয়েকজনের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে বলেও র্যাবের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে আগ্রাবাদ এলাকার দুই জন, চান্দগাঁও এলাকার একজন, পাহাড়তলী এলাকার দুই জন, কোতোয়ালী ও দক্ষিণ হালিশহর এলাকার দুইজন এবং পাঁচলাইশ এলাকার একজন কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। এদের করো বিরুদ্ধে এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, কারো বিরুদ্ধে টেন্ডারবাজি, রেলের জমি ও পাহাড় কেটে জমি দখলের অভিযোগ আছে।
এলাকায় লোকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, দুই জন কাউন্সিলর দেশের বাইরে চলে গেছেন। তবে তাদের স্বজনরা এবিষয়ে মুখ খুলছেন না। স্থানীয়রা জানায় পাঠানটুলি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের অভিযানের মুখে বিদেশে চলে গেছেন। এক সময় র্যাব-পুলিশের খাতায় সন্ত্রাসীর তালিকায় ছিলেন তিনি। চান্দগাঁও এলাকার একজন কাউন্সিলরও দেশ ছেড়েন বলে শোনা গেছে। পাহাড়তলী এলাকার কাউন্সিলর সাবের আহমদ ছাত্রলীগ নেতা মহিউদ্দিন হত্যা মামলায় কারাগারে আছেন। গেল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে বেশির ভাগ সরকারি দলের সমর্থকরা কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে।
উল্লেখ চলমান শুদ্ধি অভিযানে ইতোমধ্যে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে নির্বাচিত সরকার দলীয় হুইপ শামসুল হক চৌধুরীর দেশ ত্যাগের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। অভিযানের মুখে দেশ ছেড়ে পালিয়েন যুবলীগ নেতা হেলাল আকবর চৌধুরী বাবর, তার সহযোগি জাফরসহ বেশ কয়েকজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।