Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

একত্রে যুদ্ধবাজ নেতারা, বিবেককে নাড়িয়ে দেয়া এক ছবি

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ৬:০৬ পিএম

গত মঙ্গলবার রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অফিশিয়াল টুইটার হ্যান্ডল থেকে পোস্ট করা ছবিটা অনেককেই চমকে দিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের লনে পাশাপাশি বসে নরেন্দ্র মোদি ও হেনরি কিসিঞ্জার। ৯৬ বছরের বৃদ্ধ কিসিঞ্জার সজোরে চেপে ধরে আছেন মোদির হাত - একটু ঝুঁকে পড়ে দুজনে গভীর মনোযোগে কথাবার্তা বলছেন। নরেন্দ্র মোদির বাড়ির লনের পার্টিতে মহাতারকাদের ভিড়ে কিসিঞ্জার একাই নন, আরও ছিলেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টোনি ব্লেয়ার, সাবেক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা কন্ডোলিজা রাইস, সাবেক অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড এবং সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রবার্ট গেটস-ও। ব্রিটেনের ‘দ্য গার্ডিয়ান’ পত্রিকায় গত বুধবার প্রকাশিত এক নিবন্ধে এই সমাবেশকেই কটাক্ষ করে বলেছে ‘মাস্টারস অব ওয়ার : আর্কিটেক্টস অব মডার্ন কনফ্লিক্টস সে চিজ ফর ক্যামেরা!’ যার অর্থ, ‘যুদ্ধবাজ নেতারা : আধুনিক সব সংঘাতের স্থপতিরা ক্যামেরার সামনে হাসিমুখে!’

দিল্লিতে সাত নম্বর জনকল্যাণ মার্গের বাংলোতে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া পার্টিতেই সে রাতে অন্যতম অতিথি ছিলেন কিসিঞ্জার, যিনি এত বয়সেও ভারতে এসেছিলেন জেপি মর্গ্যান ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দিতে। সেই ছবি টুইট করে নরেন্দ্র মোদি লেখেন, ‘ডক্টর হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে দেখা করে আনন্দিত বোধ করছি। আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতিতে তার অবদান একজন পথিকৃতের!’

এই সেই হেনরি কিসিঞ্জার - মার্কিন কূটনীতিক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে যার প্রবল ভারতবিরোধী ভূমিকার কথা কারও অজানা নয়। কুখ্যাত ‘নিক্সন টেপে’ এই হেনরি কিসিঞ্জারকে বলতে শোনা গিয়েছিল ভারতীয়রা ‘সাচ বাস্টার্ডস’ (এত বড় বেজম্মা), আর ইন্দিরা গান্ধী একজন ‘বিচ’! একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের চালানো গণহত্যাকেও প্রচ্ছন্ন সমর্থন করে স্বাধীন বাংলাদেশেও তার পরিচয় এক নিন্দিত চরিত্রের। বাংলাদেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’ বা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে কিসিঞ্জারের বর্ণনা তো প্রায় লোকগাথায় পরিণত! কাম্বোডিয়ায় বেআইনিভাবে বোমা ফেলে গণহত্যা থেকে চিলিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে উৎখাত - এমন বহু ঘটনায় বারে বারে নাম জড়িয়েছে কিসিঞ্জারের। শীতল যুদ্ধের সময়কার ‘রিয়ালপলিটিকে’র মূর্ত প্রতীক বলেও তাকে মনে করেন অনেকেই। তাই হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অন্তরঙ্গতার ছবিতে তাই অনেকেই অবাক না হয়ে পারেননি।

হেনরি কিসিঞ্জার তো আছেনই - নরেন্দ্র মোদির টুইট করা আর একটি ছবিতে হাসিমুখে তাদের সাথে দেখা যাচ্ছে ব্লেয়ার-রাইস-হাওয়ার্ড-গেটসকেও, যাদের সবাই কুখ্যাত ইরাক যুদ্ধের সঙ্গে কোনও না কোনওভাবে জড়িত ছিলেন। গার্ডিয়ানে ওই নিবন্ধটির লেখক জুলিয়ান বোর্গার লিখছেন, ‘এই ব্লেয়ার বা কন্ডোলিজা রাইসরাই যখন ক্ষমতায় ছিলেন, তখন গুজরাটে মুসলিম-বিরোধী দাঙ্গায় হাজার মানুষ নিহত হওয়ার পর তাদের দেশের সরকারগুলো মোদিকে বিলেত-আমেরিকায় ভিসা দিতে অস্বীকার করেছিল।’ অথচ এই হেনরি কিসিঞ্জারই পাকিস্তানের সেই স্বৈর-শাসকদের নিরন্তর সমর্থন করে গেছেন, যারা সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে অন্তত তিরিশ লাখ মানুষের নির্মম গণহত্যার জন্য দায়ী - মনে করিয়ে দিয়েছেন জুলিয়ান বোর্গার।

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সেই গণহত্যা নিয়ে লেখা ‘ব্লাড টেলিগ্রাম’ বইয়ের লেখক গ্যারি বাস-ও তাই কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘মোদি যদি (কিসিঞ্জিারের ওপর) রুষ্ট হতে চাইতেন, তার কাছে কিন্তু কারণের অভাব ছিল না!’ ভারতের ‘স্ক্রোল’ পোর্টালও নরেন্দ্র মোদি-হেনরি কিসিঞ্জারের হৃদ্যতার এই ছবিটি সামনে আসার পর মনে করিয়ে দিয়েছে, ১৯৭১-র জুলাইতে এই কিসিঞ্জারই যখন ভারত সফরে আসেন, সে সময়কার ভারতীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম তাকে মুখের ওপর স্পষ্ট বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান এতটা বাড়াবাড়ি করার সাহস পাচ্ছে স্রেফ আপনাদের জন্য।’ কিসিঞ্জার কলকাঠি নাড়াতেই আমেরিকার সে সময়কার বৃহত্তম এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ার নিয়ে একটি মার্কিন নৌবহর যে বঙ্গোপসাগরে ঢুকে পড়েছিল, নিবন্ধে উল্লেথ করা হয়েছে সে কথাও।

যে পাকিস্তান-বিরোধিতা নরেন্দ্র মোদির পররাষ্ট্র নীতির অন্যতম প্রধান স্তম্ভ, সেই তিনিই কীভাবে হেনরি কিসিঞ্জারের সঙ্গে এভাবে ছবি তুলে টুইট করতে পারেন - সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্ন তাই অনেককে ধন্দে ফেলেছে। স্ক্রোলের মতে এর উত্তরটা হল- অসঙ্গতি নয়, বরং এই ‘পলিটিক্স অ্যাজ স্পেকট্যাকল’ কিংবা ‘ফোটো-অপরচুনিটি’টাই নরেন্দ্র মোদির ‘ডিফল্ট মোড’। সোজা কথায়, দৃশ্যটার অভিঘাতই এখানে মূল রাজনীতি, ভেতরে তার যে বৈপরীত্যই লুকিয়ে থাকুক না কেন! সূত্র: বিবিসি।



 

Show all comments
  • Gayal Chandra Roy ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:২০ পিএম says : 1
    ইনকিলাব এর রাজনীতিতে সবসময় পাকিস্তানী ছায়া। হেনরি কিসিঞ্জার বসে আছেন আর মোদির হাত ধরে আছেন আর একজন - রবার্ট গেটস। ইনকিলাব ও বুজে রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই. গতকাল এরা পাকি প্রেমিক ছিল আজ ও আছে কিন্তু দেখায় না।
    Total Reply(0) Reply
  • মোঃ আককাছ আলি মোল্লা ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১০:২২ পিএম says : 1
    ছয় শয়তানের ছবি দেখে গা জোলে যাচ্ছে।...গুলো আবার একসাথে হইছে এ লক্ষন মোটেও ভালো না!
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammed Kowaj Ali khan ২৫ অক্টোবর, ২০১৯, ১১:৩০ পিএম says : 0
    আজকাল তো বাংলাদেশের বড় মূর্খকে নিয়ে ও অনেকে অনেক কথা বলেন। এক বড় মূর্খ আছে লন্ডনে তার নাম আব্দুল .... চৌধুরী মন চায় তাকে ...। ইনশাআল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুদ্ধবাজ
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ