নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা’র সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো প্রায় ১২ ঘন্টার এক ঝটিকা সফরে ঢাকায় এসে সবাইকে মাতিয়ে গেলেন। বৃহস্পতিবার ভোর ৫টায় বাংলাদেশে আসেন তিনি। ঢাকায় পা রেখেই সকাল সাড়ে ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন ফিফা সভাপতি। সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শিমুল হলে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন ইনফান্তিনো। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের ফুটবলের উন্নতির জন্য বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয় তুলে ধরেন ফিফা সভাপতির সামনে। এসময় জিয়ান্নি ইনফান্তিনো বাংলাদেশের ফুটবলের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন । বৈঠক শেষে ফিফার পক্ষ থেকে শেখ হাসিনার নাম লেখা নীল রঙের একটি ১০ নাম্বার জার্সি প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন ইনফান্তিনো। প্রধানমন্ত্রীও ইনফান্তিনোর নাম লেখা বাংলাদেশ জাতীয় দলের লাল-সবুজ রঙের একটি ১০ নাম্বার জার্সি উপহার দেন ফিফা সভাপতিকে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশীদ, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, এমপি, সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ, এমপি এবং সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ সহ অন্যরা। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর দুপুরে ৫০ মিনিটের জন্য মতিঝিলস্থ বাফুফে ভবনে আসেন ফিফা সভাপতি। এখানে ইনফান্তিনোর জন্য প্রায় একঘন্টা ধরে অপেক্ষায় ছিলেন অর্ধশত মিডিয়া কর্মী। ১২টা ৫০ মিনিটে হঠাৎ করেই সাইরেনের শব্দে সবাই সজাগ হলেন। একে একে আটটি গাড়ির বহর নিয়ে সাই সাই করে (বাফুফে ভবনে প্রবেশ করলেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো। এসময় তার সঙ্গে ছিলেন ফিফার ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি মাথিয়াস গ্রাফস্ট্রোম, চিফ অব কমিউনিকেশন্স অনোফরে কস্তা, এশিয়া এবং ওশেনিয়া অঞ্চলের ডিরেক্টর অব মেম্বার অ্যাসোসিয়েশন সঞ্জীবন বালা সিংহাম ও ফিফা সভাপতির অফিস ম্যানেজার ফেড্রিকো রাভিগ্লিওন। গাড়ি থেকে নামতেই ইনফান্তিনোকে ফুলের শুভেচ্ছা জানান বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। এসময় বাফুফের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
‘গুড আফটার নুন (শুভ অপরাহ্ন)’ বলে বাফুফে ভবনের মূল প্রবেশ গেটের দু’পাশে দাড়িয়ে থাকা ক্ষুদে ভক্তরা ফুল ছিটিয়ে স্বাগত জানায় ফিফা বসকে। ভবনের দোতলায় ইনফান্তিনোসহ প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ৩৭ মিনিটের রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বাফুফে কর্মকর্তারা। দুপুর ১টা ২৭ মিনিটে বৈঠক শেষে নীচে নেমে বাফুফের কৃত্রিম টার্ফে প্রবেশ করেন ইনফান্তিনো। কৃত্রিম টার্ফের চারিদিকের দেয়ালে বাংলাদেশ ফুটবলের পুরুষ ও নারী দলের সাফল্যের বেশ কিছু চিত্র সাজানো ছিল। সেগুলো ঘুরে ঘুরে দেখেন তিনি। এরপর বল নিয়ে অপেক্ষমান ক্ষুদে ফুটবলারদের সঙ্গে ছবি তুলেন। একে একে সবার সঙ্গে হাইফাইভও করেন হাসিমুখে। তিনজন নারী রেফারির সঙ্গে ছবি তুলে ভবনের সামনে ছোট্ট মাঠে প্রবেশ করেন ফিফা সভাপতি। সেখানে আগে থেকেই মঞ্চে চেয়ার সাজানো ছিল। যেখানে বাফুফের কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে ছবি তুলেন তিনি। বাফুফের কর্মচারীদের বিমুখ করেননি ইনফান্তিনো। ‘কাম, কাম অল জার্নালিষ্ট’ বলে ছবি তোলার জন্য ডেকে নিলেন উপস্থিত মিডিয়া কর্মীদেরও। হুড়মুড় করে সবাই দাঁড়িয়ে ছবি তুললেন বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সভাপতির সঙ্গে। এরপর ১টা ৪০ মিনিটে সবাইকে বাই বাই বলে রওয়ানা হলেন গাড়ীর দিকে। পুলিশের নিরাপত্তা ইউনিটের গাড়ির পেছনে নিজের গাড়ি বহর নিয়ে ছুটলেন সংবাদ সম্মেলনের নির্ধারিত স্থান প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁয়ের দিকে। এখানে জনাকির্ণ সংবাদ সম্মেলনে জিয়ান্নি ইনফান্তিনো উপস্থিত সাংবাদিকদের বাছাইকৃত কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন। যার মধ্যে অন্যতম ছিল- এক সময় ফুটবল থাকলেও এখন ক্রিকেট বাংলাদেশের জনপ্রিয় খেলা। বাংলাদেশ ফুটবলের জনপ্রিয়তা ফেরাতে বাফুফের কী উদ্যোগ নেয়া উচিত বলে মনে করেন ফিফা সভাপতি? এ প্রশ্নের উত্তরে ইনফান্তিনো বলেন,‘আমি মানি না, ক্রিকেট বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। ক্রিকেট তো অনেক কঠিন খেলা। আপনি কীভাবে বলতে পারবেন যে ক্রিকেট সবাই বোঝে? ফুটবল খুবই সহজে বোঝা যায়, খেলা যায়। আপনার কাছে বল আছে, খেলছেন, গোল করছেন, উল্লাস করছেন। ফুটবল হৃদয় দিয়ে খেলা যায়।’ তিনি যোগ করেন,‘আমি বুঝতে পারছি যে ক্রিকেটে বাংলাদেশের অনেক সাফল্য রয়েছে। সারা বিশ্বে হাতেগোনা কিছু দেশ ক্রিকেট খেলে। সংখ্যাটা কত হবে? দশ বা এগার? অন্যদিকে ফুটবল খেলে ২১১টা দেশ। তো আপনি যখন অল্প কয়েকজনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করবেন তখন আপনার সাফল্যের সম্ভাবনা এমনিতেই বেড়ে যাবে, সহজেই শীর্ষে যেতে পারবেন।’
ফিফা সভাপতি আরো বলেন,‘ফুটবলের মূল চ্যালেঞ্জটা হচ্ছে আপনাকে কঠিন লড়াই করতে হবে এবং জিততে হবে। এখানে আমরা সবাই প্রতিযোগী। বাংলাদেশের মানুষ আগে থেকেই যোদ্ধা, ইতিবাচক অর্থে। এখানে অনেক কারণেই ফুটবল খেলা হয়, এমনকি স্বাধীনতার জন্যেও। বাংলাদেশে আমি যে ফুটবলের প্রতি প্যাশন দেখেছি, বিশেষ করে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচের পর সবার যে উন্মাদনা- এটা চলমান থাকলে বাংলাদেশের ফুটবলও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক উঁচুতে যাবে। তখন আর ক্রিকেটের কোনো সুযোগ থাকবে না।’
ফিফা সভাপতি মনে করছেন বাংলাদেশের ফুটবল বেশ এগিয়েছে। বিশেষ নারী ফুটবলে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য পাচ্ছে। তিনি বাংলাদেশের নারী ফুটবলে বিনিয়োগের আহবান জানিয়েছেন। ইনফান্তিনো বলেন, ‘বাংলাদেশের ফুটবল উন্নয়নে আমরা আমাদের সমর্থন এবং সহযোগিতা অব্যাহত রাখবো।’ ঢাকার আতিথেয়তা অনেকদিন মনে থাকবে বলে জানিয়ে এখানকার ট্রাফিক জ্যামের কথা উল্লেখ করেন ফিফা বস। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় লাওসের উদ্দেশে যাত্রা করেন ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।