পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করছি। বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো, কারও কাছে মাথা নিচু করে নয়। ভারত থেকে যদি ন্যায্য অধিকার আদায় করে থাকি, আমি শেখ হাসিনাই করেছি। লাভ-লোকসান হিসাব করলে বাংলাদেশেরই লাভ বেশি।
গতকাল শনিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মহিলা শ্রমিক লীগের সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। ত্রিপুরার সঙ্গে ফেনী নদীর পানি বণ্টন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙার ভগবানটিলায় ফেনী নদীর উৎপত্তি। সেটার বেশিরভাগই সীমান্তে। ভারতের ওই অংশের মানুষের পান করার পানির অভাব। এছাড়া বর্ডারের পানিতে দুই দেশেরই সমান অধিকার। আর এখানে তো পুরোটাই সীমান্তে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের সময় ত্রিপুরা আমাদের সাহায্য করেছিল। আশ্রয় দিয়েছিল। এটা তো ভুলে যেতে পারি না। প্রধানমন্ত্রী এ দিন প্রতিবেশি দেশ ভারতের একটি অঞ্চলের পানিয় জলের অভাব পূরণে সীমান্তবর্তী ফেনী নদী থেকে সামান্য পরিমাণ ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি ভারতকে প্রদানের এবং আমদানি করা এলপিজি থেকে বাল্ক এলপিজি ত্রিপুরায় রফতানি করে রফতানি পণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি সংক্রান্ত বাংলাদেশ-ভারত চুক্তির প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা তুলে ধরে এর অহেতুক সমালোচকদের কঠোর সমালোচনা করেন। ভারতে এলপিজি রফতানি বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা আমদানি করে আনা এবং দেশে উৎপাদিত কিছু এলপিজি বোতলজাত করে রফতানি করব। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রফতানির একটা পণ্য বাড়ছে। আর দেশের চাহিদা মেটানোর জন্য অনেক কোম্পানি কাজ করছে।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যার জেরে এখনো কেন আন্দোলন চলছে, এ প্রশ্ন তুলে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দাবি মানার পরেও আন্দোলন করার যৌক্তিকতা কী? প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণ ছাত্রদের যে ১০ দফা দাবি, সবগুলো মেনে নিয়েছেন ভিসি। তারপরেও তারা নাকি আন্দোলন করবে। কেন করবে জানি না, এরপরও আন্দোলন করার কী যৌক্তিকতা থাকতে পারে? তিনি বলেন, কোনো অন্যায়-অবিচার আমরা সহ্য করিনি, ভবিষ্যতেও করব না। যারাই করবে, যার বিরুদ্ধে করবে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবো।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। বুয়েটের ঘটনায় কাউকে ছাড় দেয়া হবে না জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কয়েকদিন আগে বুয়েটে যে ঘটনা ঘটেছে... কোন দল করে সেটা নয়, আমরা খুনিকে খুনি হিসেবে দেখি। অন্যায়কারীকে অন্যায়কারী, অত্যাচারীকে অত্যাচারী হিসেবেই দেখি। তিনি বলেন, খবরটা পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমি কারও আন্দোলনের অপেক্ষা করিনি, কারও বলার অপেক্ষা করিনি। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছি যে, এদের আটক ও ভিডিও ফুটেজ থেকে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করা হোক। সিসিটিভির ফুটেজ আনতে গেলে তার একটি কপি দিয়ে আসার দাবিতে পুলিশ সদস্যদের বুয়েট ক্যাম্পাসে অবরুদ্ধ করে রাখে আন্দোলনকারীরা। এটি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আবারও প্রশ্ন তোলেন, (পুলিশ) এই ভিডিও ফুটেজ যখন সংগ্রহ করছিল, তখন তারা (আন্দোলনকারী) বাধা দিয়েছিল। কেন বাধা দিয়েছিল জানি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আসামিদের চলে যাওয়ার একটা সুযোগই বোধ হয় করে দেয়া নাকি এটার জবাব- ওই আন্দোলন যারা করেছিল, তারা বলতে পারবে। আমি বলতে পারব না। আমার কাছে পুলিশের আইজিপি ছুটে আসল। বললো, তারা (আন্দোলনকারী) বাধা দিচ্ছে। আমি বললাম, তারা কী চায়? বললো, তারা কপি চায়। আমি বললাম, কপি দিয়ে দাও। তাড়াতাড়ি ফুটেজটা নাও। ফুটেজটা নিলেই তো আমরা তাড়াতাড়ি আসামি চিহ্নিত করতে পারব। দেখতে পারব, কে গেছে না গেছে। তাদের ধরতে পারব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিন-চার ঘণ্টা সময় যদি নষ্ট না করত, তাহলে আরও আগেই (দোষীদের) ধরতে পারত। অনেকে পালাতে পারতো না। সঙ্গে সঙ্গে ধরা পড়তে পারতো। এখানে সন্দিহান হওয়ার কিছু ছিল না। এখন বিষয়টি কী, না যারা জড়িত তারা করেছে, আমি জানি না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমানের আমল থেকে শুরু করে এরশাদ, খালেদা জিয়া- সব আমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি। মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়েছিল। ছাত্রদের এক হাতে অস্ত্র, আরেক হাতে অর্থ দেয়া হয়েছিল। অন্য সরকারের আমলে কয়টা খুনের বিচার হয়েছে সে প্রশ্নও করেন প্রধানমন্ত্রী। অতীতে বিভিন্ন কুনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন মানবাধিকারবোধ, ন্যায়-নীতিবোধ কোথায় ছিল? শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি আমলে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে বুয়েটছাত্রী সনি নিহত হয়েছিল। তখন কে প্রতিবাদ করেছে? তখন তো বুয়েটের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনকে নামতে দেখিনি। প্রতিবাদ করতে দেখিনি তাদের। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে কথা বলার অধিকার আছে সবার। বলতে পারে, অন্তত এই সুযোগটা আছে। শিক্ষাঙ্গনে পরিবেশ বজায় রাখার জন্য এ সময় সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেখানে লেখাপড়া শিক্ষা হবে, পৃথিবীর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার মত উপযুক্ত নাগরিক তৈরি হবে, দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর সমগ্র বিশ্বে বাংলাদেশ যে মর্যাদা পেয়েছিল এটুকু বলতে পারি গত ১০ বছরের শাসনে সে সম্মান আমরা ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। তার সরকারের সময়ে দেশে নারীর ক্ষমতায়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু চাকরির ক্ষেত্রেই নয়, আমরা চাই ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-কারখানা গড়ে তোলায় নারীরা চলমান বিশ্বের প্রতিযোগিতায় নিজেদেরকে যেন মেলে ধরতে পারে- বর্তমান সরকার তার সুযোগ করে দিচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন এবং বিকাশ আজ বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। খেলাধুলায় ও আমাদের মেয়েরা কম যাচ্ছে না। ১৫ বছর বয়েসিদের আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা, ক্রিকেটসহ বিভিন্ন খেলাধুলায় তারা ভাল করছে। ক্ষেত্র বিশেষে দেখা যাচ্ছে খেলাধুলা ও এবং লেখাপড়ায় আমাদের ছেলেদের থেকে মেয়েরাই এগিয়ে রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সমাজকে পাল্টে ফেলে নারী-পুরুষের সমান অধিকার আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আর সুযোগ পেলে আমাদের নারীরা যে তাদের দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারে সেটা আজকে প্রমাণিত সত্য। সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী, জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনসহ পেশাগত বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের সাফল্যের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, আমাদের অবস্থানটা আমরা করতে পেরেছি। প্রথম ইসলাম ধর্মগ্রহণকারী রাসূল মুহাম্মদ (সা:) স্ত্রী বিবি খাদিজার (রা:) প্রসঙ্গ টেনে সরকার প্রধান বলেন, বিবি খাদিজা ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন এবং এজন্য উঠের পিঠে চড়ে বিভিন্ন দেশে যেতেন। কাজেই নারীদের ধর্মের নামে ঘরে আটকে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
তিনি বলেন, অতীতের জিয়া, খালেদা এবং এরশাদ সরকার মুখে সমালোচনা আর তলে তলে অতি ভারত তোষণ নীতি চালিয়ে গেছে। ভারতের থেকে যদি কেউ ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারে তবে তা আওয়ামী লীগ সরকারই করেছে। এ বিষয়ে তিনি গঙ্গার পানি চুক্তি, স্থল সীমানা চুক্তি করে উৎসবমুখর পরিবেশে এবং শান্তিপূর্ণভাবে ছিটমহল বিনিময় এবং সমুদ্রসীমায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় তার সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন। শেখ হাসিনা তার সা¤প্রতিক ভারত সফরে দুই দেশের মধ্যকার চুক্তি সম্পর্কে বলেন, লাভ-ক্ষতির হিসাব করলে এখানে বাংলাদেশেরই লাভ বেশি। কাজেই মানুষের মাঝে একটা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য জেনে শুনেই জ্ঞানপাপীরা কথা বলে যাচ্ছেন।
যারা বিগত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ২০০৮ সালেও বিএনপি ৩২টি আসন পেয়েছিল। আর ’৯৬ সালের ১৫ ফেব্রæয়ারী ভোটারবিহীন নির্বাচন করেছিল বলে খালেদা জিয়া দেড় মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। কাজেই বিগত নির্বাচনে তারা যে ভোট কারচুপির অভিযোগ করেন সেটা সত্য হলে তারাও তো আন্দোলন করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হঠিয়ে দিত। যেটা তারা পারেননি। তিনি বলেন, ‘তারা পারবে কিভাবে, তারা তো নির্বাচনটাকে একটা বাণিজ্য হিসেবে নিয়ে প্রতিটি আসন তিনজনের কাছে বিক্রি করেছে। কেউ লন্ডন থেকে টাকা খেয়েছে, কেউ গুলশান অফিস, আবার কেউ পল্টন অফিস থেকে টাকা খেয়েছে।’ যারা অবৈধ সামরিক সরকারের মন্ত্রী ছিলেন এবং সকল সময় অনির্বাচিত সরকরের তাঁবেদার এবং তাদের দয়ায় সরকারে ছিলেন, দুর্নীতির দায়ে সাাজা ভোগ করেছেন, তারা আবার নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন কিভাবে’ প্রশ্ন তোলেন তিনি।
পরিশেষে- নারী অধিকার রক্ষা করা এবং সমাজে নারীদের আপনস্থান তৈরি করে নেয়া, সেটা নারীদেরই করতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, রবীন্দ্রনাথ যে বলে গিয়েছিলেন- নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দেবে অধিকার, হে বিধাতা। সে কথা আমরা আর বলতে চাই না।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, মহিলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুন্নাহার ভ‚ঁইয়া প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।