Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে পুলিশে চাকরি চেয়েও পাননি ওমর মতিন

অপরাধ আইন ও বিচার বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী

প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে সমকামীদের একটি নাইটক্লাবে হত্যাকা- চালানো ওমর মতিন শুধু ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য পুলিশ কর্মকর্তা হতে পারেননি। পুলিশে চাকরি চেয়ে প্রত্যাখ্যাত হন গত বছর। মতিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হলেও তার পিতামাতা আফগানিস্তানের। তার জন্ম নিউইয়র্কে। ২০০৬ সালে মতিন ইন্ডিয়ান রিভার কমিউনিটি কলেজ থেকে অপরাধ আইন ও বিচার বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। তাকে ২০১৩ সাল থেকেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই চিনতো ও জানতো বলে জানা যায়। স্থানীয় সময় গত রোববার যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা রাজ্যের অরল্যান্ডোতে পালস নাইটক্লাবে সবাই উৎসবের আমেজে তখন। এমন সময় সেখানে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ওমর মতিন। এতে কমপক্ষে ৫০ জন নিহত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে এত ভয়াবহ হামলা হয়নি। এখন চারদিকে প্রশ্ন কে এই ওমর মতিন? তার বিষয়ে এফবিআই জানলেও কেন তারা আগেভাগে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। নাইটক্লাবে হামলার পর পুলিশ ওমরকে হত্যা করেছে। এফবিআই কর্মকর্তারা বলছেন, ওমরের বয়স ২৯ বছর। সে ধর্মীয় উগ্রপন্থার দিকে ঝুঁকে পড়েছিল। তবে এ হামলা আভ্যন্তরীণ না আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস তা তারা পরিষ্কার হতে পারেনি। ওদিকে সাইট ইন্টেলিজেন্স গ্রুপ বলেছে, হামলার দায় স্বীকার করেছে ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তারা আরও হামলা চালানোর হুমকি দিয়েছে। বিভিন্ন প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইসলামি স্টেটে যোগ দেয়ার আগে ওমর মতিন যুক্তরাষ্ট্রের জরুরি নম্বর ৯১১-এ কল করেছিল। ওদিকে এ হামলার নিন্দা জানিয়েছেন ওমর মতিনের পিতা সাদিক মতিন। তিনি এনবিসি নিউজকে বলেছেন, এ হামলার সঙ্গে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি বলেছেন, সম্প্রতি মতিন মিয়ামিতে দু’জন পুরুষকে চুম্বনরত অবস্থায় দেখতে পায়। তা নিয়ে সে খুব ক্ষুব্ধ ছিল। কিন্তু মতিন যে এমন হামলা চালাবে সে বিষয়ে তার পরিবার অবগত ছিল না।
তার ভাষায়, এ হামলায় সারা আমেরিকার মতো আমরাও শোকাহত। মতিনের সাবেক স্ত্রী সিতোরা ইউসুফি বলেছেন, মতিন ছিল মানসিক ভারসাম্যহীন। তার আচরণ ছিল হিংগ্র। সে তাকে বার বার প্রহার করেছে। অনলাইনে পরিচয় হওয়ার পর ২০০৯ সালে ফোর্ট পিয়ার্সে তাদের বিয়ে হয়। মতিনের নির্যাতনের কথা জানতে পেরে কয়েক মাসের মাথায় তাদের সম্পর্কে মাথা ঘামান সিতোরার পিতামাতা।
তারা তাদের মেয়েকে মতিনের কাছ থেকে আলাদা করেন তাদের বাড়িতে নিয়ে যান। সিতোরা ওয়াশিংটন পোস্টকে বলেছেন, সে ছিল ভারসাম্যহীন এক মানুষ। সে শুধু বাসায় এসে আমাকে প্রহার করতো। কারণ হিসেবে দেখাতো তার কাপড়চোপড় ইস্ত্রি করা হয় নি অথবা এরকম অন্য কিছু। তবে মতিন খুব ধর্মভীরু ছিল বলে জানিয়েছেন সিতোরা। নিয়মিত সে জিমে যেত।
মতিনের ছিল একটি ছোট হ্যান্ডগান। ২০১১ সালে তাদের বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে। ওদিকে মতিনের ইতিহাস নিয়ে অসংখ্য প্রশ্ন জমা হচ্ছে। তার জবাবে এফবিআইয়ের স্পেশাল এজেন্ট রন হুপার সাংবাদিকদের বলেছেন, আইএসের  সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়ে সহকর্মীদের প্রতি জ্বালাময়ী মন্তব্য করে সে। তারপর সেই ২০১৩ সালে দুবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন এফবিআই কর্মকর্তারা। মনির মোহাম্মদ আবু সালহা নামে এক মার্কিন আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকার বিষয়ে ২০১৪ সালে একবার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। আল সালহা সিরিয়া যুদ্ধে আত্মঘাতী মার্কিন বোমা হামলাকারী। ওই জিজ্ঞাসাবাদে আবু সালহার সঙ্গে ওমর মতিনের সম্পর্ক থাকার কোন তথ্যপ্রমাণ পায়নি এফবিআই। ফলে ওই মামলাটি ক্লোজ করে দেয়া হয়। তবে এফবিআইয়ের রাডারে থাকলেও মতিন যুক্তরাষ্ট্রের টেররিজম ওয়াচ লিস্টে ছিল না। ফলে সে সহজেই আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে। এসব তথ্য রয়েছে ফ্লোরিডার রেকর্ডসে।
২০০৭ সাল থেকে জি ফোর এস নামের একটি নিরাপত্তা সংস্থার একজন সশস্ত্র কর্মকর্তা হিসেবে মতিন কাজ করেছে বলেও তথ্য বেরিয়ে এসেছে। পুলিশ বলছে, সে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল ও হ্যান্ডগান ব্যবহার করে অরল্যান্ডোতে পালস নাইটক্লাবে হামলা চালিয়েছে। এ সময়ে সে বিস্ফোরকও ব্যবহার করে থাকতে পারে। তার জন্ম নিউইয়র্কে হলেও সে চলে যায় ফোর্ট পিয়ার্সে। এ স্থানটি অরল্যান্ডো থেকে দু’ঘণ্টার পথ। পুলিশ মনে করছে অরল্যান্ডোর পালস নাইটক্লাবে হামলা চালাতে মতিন একটি গাড়ি ভাড়া করেছিল। অভিযোগ আছে সে এর আগে ৯১১ নম্বরে জরুরি কল করে। তাদেরকে ২০১৩ সালে বোস্টন ম্যারাথনে আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী তামারলান ও জোখার তারনায়েভের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। সামাজিক মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে এমন ছবিতে দেখা যায়, এ সময় তার পরণে ছিল একটি একটি টি-শার্ট। তাতে শোভা পাচ্ছে নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট লেখা। নিউইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্ট বলেছে, তাদের সঙ্গে মতিনের কোন সম্পর্ক নেই। সে যে টিÑশার্টটি পরেছে তা যেকোন দোকানেই কিনতে পাওয়া যায়।
ওমর মতিনের আসল নাম ওমর মির সিদ্দিকী। কিন্তু ২০০৬ সালে সে নাম পরিবর্তনের একটি আবেদন করে। তাতে নতুন নাম রাখে ওমর মির সিদ্দিসী মতিন। তার পিতা সিদ্দিকী মতিনের একটি শো হয় ক্যালিফোর্নিয়া ভিত্তিক একটি টেলিভিশন চ্যানেলে।  ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ডেইলি মেইল, এবিসি নিউজ ও বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ধর্মীয় পরিচয়ের কারণে পুলিশে চাকরি চেয়েও পাননি ওমর মতিন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ